জাতীয় পার্টিরাজনীতি

নির্বাচনে যাওয়ার জন্য কারা বাধ্য করেছিলো জিএম কাদেরকে?

ভোটে ভরাডুবি নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা-কর্মীদের একটা অংশের নানা অভিযোগের ব্যাপারে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘যারা বলছে, আমরা টাকা পাইছি, টাকা যে পাইছি, এর সাক্ষী-প্রমাণ কী। বললেই হলো টাকা পাইছি।’

জি এম কাদের আরও বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এর বাইরে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আরও কী কী হয়েছিল, সেটা তিনি বলতে চান না।

জাপার একটা অংশের ক্ষোভ প্রকাশের ঘটনার প্রেক্ষাপটে গতকাল রোববার এসব কথা বলেন জি এম কাদের। গতকাল জাপার পরাজিত কয়েকজন প্রার্থীর নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের একটা অংশের বৈঠক থেকে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

নির্বাচনে জাপার ভরাডুবির পর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘অসহযোগিতার’ অভিযোগে পরাজিত প্রার্থীদের কয়েকজন এই সভার আয়োজন করেন। সভায় অন্তত ১০ প্রার্থী বক্তব্য দেন।

সেই সভা থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বিক্ষুব্ধ নেতারা তৃণমূলের অমত সত্ত্বেও নির্বাচনে যাওয়ায় জাতীয় পার্টির (জাপা) শীর্ষ নেতৃত্বের ‘নৈতিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ ছাড়া সভায় জাপার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অর্থের লেনদেনসহ নানা আভিযোগ আনা হয়।

বিক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীদের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের গতকাল বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য কাউকে তো ডেকে আনা হয়নি। তখনই বলা হয়েছিল, পার্টি কোনো আর্থিক সহযোগিতা করতে পারবে না। যাঁদের আগ্রহ ছিল, তাঁরা নির্বাচন করেছেন। এখন এসব করা হচ্ছে ষড়যন্ত্র থেকে।’

তৃণমূলের অমত সত্ত্বেও নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘তৃণমূল আমাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিল। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমি সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এর বাইরে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আরও কী কী হয়েছিল, সেটা আর বলতে চাই না।’

জাপার নেতাদের একটা অংশ গতকাল ঢাকায় যে সভা করেছে, সেই সভায় অংশ নেওয়া নেতারা তৃণমূলের অমত সত্ত্বেও নির্বাচনে যাওয়ায় জাতীয় পার্টির (জাপা) শীর্ষ নেতৃত্বের ‘নৈতিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এর জবাবেই জি এম কাদের দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মতামত নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান।

গতকাল রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাপার পরাজিত কয়েকজন প্রার্থীর নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের ওই সভা আয়োজন করেছিলেন। তাঁরা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘অসহযোগিতার’ অভিযোগে নির্বাচনের পরে ১১ জানুয়ারি ঢাকার বনানীতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভও করেছেন।

গতকালের সভায় অন্তত ১০ জন পরাজিত প্রার্থী বক্তব্য দেন। তাঁরা জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে অসহযোগিতাসহ নির্বাচনে জাপার অংশগ্রহণ কতটা নৈতিক ছিল, সে প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা মন্তব্য করেন, নির্বাচনে গিয়ে জাপা জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে। নির্বাচনে অংশ না নিলে জিএম কাদের জাতির কাছে নায়ক হতেন।

প্রসঙ্গত, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার প্রশ্নে তৃণমূলের মতামত জানতে গত ১৪ নভেম্বর রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাপার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির জরুরি সভা হয়। ওই সভায় ৬২ জেলার ৫৯ নেতা বক্তব্য দেন। এর মধ্যে ৫৭ নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার নির্বাচনে আর না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।

সভায় জিএম কাদের বলেছিলেন, ‘আমি নেতাদের আবেগ বুঝলাম, তাঁদের মতামত জানলাম। দেশ ও জনগণের চাহিদা মোতাবেক আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

সে দিনের তৃণমূলের মতামতের উল্লেখ করে গতকাল নোয়াখালী-৩ আসনের জাপার পরাজিত প্রার্থী ফজলে এলাহী বলেন, ‘আপনি (জি এম কাদের) তৃণমূলের সভায় আল্লাহর ভয় দেখিয়ে বললেন, বেইমান হব না। তৃণমূল যা চায়, সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেব। আপনি কথা রাখেননি। আমরা জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছি।’

গতকালের সভায় জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেনের (ঢাকা-৪ আসনের প্রার্থী) সভাপতিত্বে ১০ জন পরাজিত প্রার্থী বক্তব্য দেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের লিয়াকত হোসেন, সিলেট-২ আসনের ইয়াহ ইয়া চৌধুরী, ঢাকা-১৩ ও ঢাকা-১৪ আসনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম ও কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের প্রার্থী নুরুল কাদের উল্লেখযোগ্য। প্রার্থীর বাইরে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও সভায় বক্তব্য দেন।

বক্তব্যে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম দলের চেয়ারম্যানের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা ২৬ জন সমঝোতা করেছেন। সিটও পেয়েছেন, অর্থও পেয়েছেন। ১৭ তারিখের আগে যখন দেখলেন নিজের বউয়ের (শেরীফা কাদের) আসন কনফার্ম (নিশ্চিত) নয়, তখন বললেন নির্বাচনে যাব কি না, ঠিক নেই। যেই নিজ স্ত্রীর আসন কনফার্ম, তখন বললেন নির্বাচনে যাব।’
স্ত্রীর জন্য দলের প্রভাবশালী নেতাদের জবাই করার অভিযোগও করেন শফিকুল ইসলাম। তিনি জাপার চেয়ারম্যানকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, ‘আজকে যদি আঘাতপ্রাপ্ত ও বহিষ্কৃত সবাই এক হয়ে যায়, তাহলে আপনার (জি এম কাদের) টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।’

সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহ ইয়া চৌধুরী বলেন, ‘আপনি গণতন্ত্র শিখিয়েছেন, আপনার মধ্যেই গণতন্ত্র নেই। আপনি স্ত্রীর জন্য ফিরোজ রশীদ, বাবলা (আবু হোসেন), খোকা (লিয়াকত হোসেন), পীর ফজলুর রহমান, আতিকুর রহমানসহ ৯-১০টি সিট কোরবানি দিয়েছেন। সমঝোতার আসনের জন্য চেয়ারম্যান নিজের স্ত্রী, নাতি আর মেয়ের ভাশুরের জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছেন।’

আরেক প্রার্থী নুরুল কাদের বলেন, ‘আমরা সবকিছু দিয়ে নির্বাচন করেছি। একটু খবর নেয়নি, ১০টা টাকা দেয়নি। আর কত মাথা বিক্রি করবেন। নির্বাচন এলে আর মাথা বিক্রি করবেন না।’

এ ছাড়া সভায় অন্য বক্তারা দলের দুই প্রধান নেতার বিরুদ্ধে নির্বাচনে আর্থিকভাবে সহযোগিতা না করা, ফোন না ধরাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন।

এই সভার পর জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহ ইয়া চৌধুরীকে দলীয় সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল দলের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাপার মহাসচিবের সুপারিশক্রমে জাপার ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটি বিলুপ্ত করেন চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার প্রার্থী ছিলেন ২৬৫ জন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬টি আসনে সমঝোতা করে মাত্র ১১টিতে জয় পায় জাপা। নির্বাচনে দলটির প্রার্থীদের ৯০ শতাংশই জামানত হারান। এই ভরাডুবির পর দলে বিশৃঙ্খলা দেখা হয়। এরই মধ্যে গতকাল দুজন নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। গত শুক্রবার দলের প্রভাবশালী নেতা কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

একটি মন্তব্য

  1. এরা নিবাচনে হেরে আবল তাবল বলতেছে,,এদের কে পাগলা গারদে নেওয়া দরকার,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button