বাড়ি বাংলাদেশ মাঠের রাজনীতিতে ফিরছে বিএনপি: বুধ-বৃহস্পতিবার অবরোধ

মাঠের রাজনীতিতে ফিরছে বিএনপি: বুধ-বৃহস্পতিবার অবরোধ

1
মাঠের রাজনীতিতে ফিরছে বিএনপি বুধ বৃহস্পতিবার অবরো

সরকার পতনের একদফা দাবিতে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ডেকেছে বিএনপি। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে সর্বাত্মক এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। এছাড়া ১০ই ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে গুম, খুন, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার বিএনপির দলীয় নেতাকর্মী ও নাগরিকদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে বিএনপি।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বিকালে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

এর মধ্য দিয়ে ২৮ অক্টোবরের পর ফের মাঠের রাজনীতিতে ফেরার ইঙ্গিত দিলো দলটি। নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে রিজভী জানান, আগামী ১০ ডিসেম্বর রবিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ঢাকা সারা দেশে জেলা পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। এতে বিএনপির গুম, খুন, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার বিএনপির দলীয় নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা এ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দেয় বিএনপি। এরপর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন এবং দলের গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও হয়রানি বন্ধের দাবিতে দশ দফায় ২১দিন অবরোধ ও দুইদিন হরতালের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে।

এদিকে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও বিক্ষিপ্ত মিছিল পিকেটিংয়ের মাধ্যমে বিএনপির ডাকা নবম দফায় দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ শেষ হয়েছে। অবরোধের শেষদিনে গতকাল সোমবার রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। এ সময় রাজধানীতে দুইটিসহ দেশের বিভিন্নস্থানে একাধিক যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

অবরোধ চলাকালে গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে ৩৫৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি জানান, এই সময়ে ১৪ মামলায় এক হাজার ২৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

অবরোধের শেষ দিনে গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে তানজিল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভায়। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক জানান, আজ দুপুর ২টা ৩২ মিনিটে গুলিস্তানে তানজিল পরিবহনের একটি বাসে আগুনের খবর আসে। পরে সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশনের দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভায়। এছাড়াও রাজধানীর রামপুরায় একটি পিক-আপে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

আওয়ামী লীগের প্রেসক্রিপশনে প্রার্থী বাছাইয়ের অভিযোগ ইসির বিরুদ্ধে:

এদিকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের শেষদিনে গতকাল রাজধানীর উত্তরায় মিছিল সমাবেশে করেছে রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকাল সাতটায় রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর পার্কের উত্তর দিক থেকে ঢাকা গাজীপুর প্রধান সড়ক পর্যন্ত এ মিছিল হয়। এছাড়াও অবরোধের সর্মথনে গতকাল সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড় থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব।

তারা অভিযোগ করেন, দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ তাদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াছিন আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসানের নেতৃতে রাজধানীর আসাদগেট এলাকায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল হয়।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘কোন আসনে কে নির্বাচন করবেন, সেটাও ঠিক করে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। যেখানে যাকে রাখার দরকার তাকে রেখে বাকিদের মনোনয়ন বাতিল করা হচ্ছে।’ তিনি এ ধরনের প্রহসন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

রিজভী বলেন, ‘একতরফা নির্বাচনের নামে দেশে চরম তামাশা চলছে। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী প্রার্থী বাছাই করে দিচ্ছে। লুটপাটের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ এখন দিশাহারা।’

সাঁড়াশি অভিযানে সারাদেশে দু’কোটি মানুষ উদ্বাস্তু:

সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান ও আওয়ামী লীগের হামলায় প্রায় দুই কোটি মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ওইসব মানুষ ফেরারি জীবনযাপন করছে। শুধু বনে-জঙ্গলে নয়, বিভিন্ন এলাকায় নীরবে উদ্বাস্তু ক্যাম্প গড়ে উঠেছে। প্রায় ২০ হাজার মুক্তিকামী জনতাকে কারাগারে বন্দি করা হয়েছে। তাদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে। যথাযথ চিকিৎসা না দেয়া, অসুস্থ বন্দির হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে কারা হাসপাতালে ফেলে রাখা, ছোট্ট সেলে ধারণ ক্ষমতার তিন গুণ বন্দি রাখা হচ্ছে। নির্যাতনে বিএনপির তিন নেতার মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল সোমবার বিকেলে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চেয়েও এই ‘আওয়ামী বাহিনী’ ভীষণ রকম হিংসাশ্রয়ী। তাদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর। তাদের কাছে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যরা মানুষ নয়। আওয়ামী লীগ এখন নতুন করে রাজাকার, আল-বদর, আল শামস, শান্তিবাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মী ও তাদের পরিবার, এমনকি তাদের আত্মীয়-স্বজনও হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। আর বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পদ যেন গণিমতের মাল।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে এখন। মনোনয়ন নিয়ে তাদের মধ্যে কামড়া-কামড়ি শুরু হয়েছে। যারা এসব দোকান থেকে মনোনয়ন কিনেছিল তাদের অধিকাংশই জমা দেননি। আর যাদের এমপি বানানোর মুলো দেখানো হয়েছিল তারাও ঘুরছে নিরাশায়। আসলে তাদের আশায় গুড়েবালি। আওয়ামী লীগ যে প্রতারক তা বুঝতে পারছে হাড়ে হাড়ে।’

রিজভী জানান, গত রবিবার দুপুর থেকে গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত সারাদেশে ৩৫৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছেন। এ সময়ে ১৪ মামলায় এক হাজার ২৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।