বাড়ি রাজনীতি বিএনপি যেভাবে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে সচেষ্ট বিএনপি

যেভাবে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে সচেষ্ট বিএনপি

5

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিগত দিনের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে দল গোছানোর কাজে হাত দিয়েছে বিএনপি। এই প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই এ নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে দলে ও দলের বাইরে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাউর হয়েছে দলের মহাসচিবের রদবদলের গুঞ্জন। দলের স্থায়ী কমিটিতে সংযোজন-বিয়োজন নিয়েও আছে নানা গুঞ্জন। যদিও এসব গুঞ্জনের সবটাই সত্যি নয় বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা।

দল গোছানোর কাজ চলছে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘দলের পুনর্গঠন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা সারা বছরই চলে। দল পুনর্গঠনের কাজে আমরা অনেক আগেই হাত দিয়েছি। এরই মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে। আরও কিছু পরিবর্তন আসবে, প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখেছিল বিএনপি। কিন্তু মাঠের আন্দোলন ও কূটনৈতিক তৎপরতাসহ সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে তাদের। নিজেদের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে না পেরে শেষমেশ ভোটে যায়নি বিএনপি। সরকারের শক্ত অবস্থানের কাছে পর্যুদস্ত হয়ে মাঠ দাপানোর বদলে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে কারাবরণ করতে হয়েছে। নির্বাচনের পর দল গোছানোর কাজে হাত দিয়েছে বিএনপি।

সূত্র বলছে, আগামী দিনের জন্য নতুনভাবে শুরু করতে চাচ্ছে হাইকমান্ড। এই চাওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। শূন্য পদগুলো পূরণের পাশাপাশি অসুস্থতা, বার্ধক্যজনিত কারণসহ অন্য কারণে নিষ্ক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে সেখানে নতুন নেতাদের সংযুক্ত করা হবে।

দলীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন সম্ভাব্য এমন নেতারা হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, বরকত উল্লা বুলু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখেন এমন নেতারা বলছেন, স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরীক্ষিত নেতারাই কমিটিতে জায়গা পাচ্ছেন। কিন্তু কখন করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা মুশকিল।

লক্ষ্য পূরণে অতীতের ব্যর্থতা পর্যালোচনা করে সংগঠনগুলোর দিকেও মনোযোগ দিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে ছাত্রদলের কমিটিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম সামনে রেখে কেন্দ্রের পরামর্শক্রমে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে অনেক জায়গায় কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে, ছাত্রদলের পথ ধরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলও গোছানো হবে খুব শিগগিরই। এ কাজের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপি নিয়েও কাজ করছে হাইকমান্ড। ঈদুল ফিতরের পরেই এই প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হবে। ঢাকার দুই কমিটির শীর্ষ পর্যায়ে পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এ প্রসঙ্গে বলেন, দলের জন্য যাঁরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি, স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা দায়িত্বে থাকবেন না। যাঁরা কষ্ট করছেন, জেল খাটছেন, জুলুম-নির্যাতনের মাঝেও যাঁরা রাজপথে থাকার চেষ্টা করেছেন, স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের যোগ্যতা অনুযায়ী পদায়ন হবে।

এদিকে দল গোছানোর প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই বিএনপির মহাসচিবের পদটি নিয়ে তুমুল গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ২৯ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কারামুক্ত হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারামুক্ত হওয়ার পরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এর পর থেকেই তাঁকে নিয়ে গুঞ্জন। ৪ মার্চ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেলে সেই গুঞ্জনের ডালপালা আরও বিস্তৃত হয়। মির্জা ফখরুল পদত্যাগপত্র দিয়ে সিঙ্গাপুরে গেছেন বলে কানাঘুষা শুরু হয়। একই সঙ্গে এটাও বলা হয় যে মির্জা ফখরুলকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে অস্থায়ী মহাসচিব নিযুক্ত করতে যাচ্ছে দল। কোনো কোনো গণমাধ্যম এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, মির্জা আব্বাসসহ কয়েকজনের মধ্য থেকে একজনকে অস্থায়ী মহাসচিবের পদে বসানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

যদিও এসব খবরের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছেন বিএনপির নেতারা। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, প্রতিকূল পরিবেশে মির্জা ফখরুল যেভাবে কাজ করেছেন, সেই কাজের বিচারে তাঁকে সরানোর গুজব অবান্তর। তবে এমনটা হতে পারে যে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করার পর তিনি নিজেই হয়তো আর ওই পদে থাকতে চাইছেন না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, মহাসচিবকে সরানো এবং অস্থায়ী মহাসচিব নিয়োগ নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা নাই। এ নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলছে।