বাড়ি অপরাধ ১৪০০ টাকা লুট করতে তিনজনকে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করেন সবুজ

১৪০০ টাকা লুট করতে তিনজনকে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করেন সবুজ

0
১৪০০ টাকা লুট করতে তিনজনকে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করেন সবুজ

২০০৭ সালের ৬ জানুয়ারি রাতে বাড়ি ফিরছিলেন কুমিল্লার তিন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। পথে জেলার লাকসামে ডাকাতদলের কবলে পড়েন তারা। পরে ডাকাতরা তিনজনের কাছে এক হাজার ৪০০ টাকা পেয়ে লুটে নেয়। ওই তিন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর একজন চিনতে পারেন ডাকাতদলের এক সদস্যকে।এ ঘটনার এক পর্যায়ে ডাকাত সদস্যরা নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করেন ওই তিন ব্যবসায়ীকে।

সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত ওই তিন খুনের বিস্তারিত জানিয়েছেন র‍্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লার কম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন। এর আগে রবিবার দিবাগত গভীর রাতে জেলার সদর উপজেলার আলেখারচর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

লাকসামের চাঞ্চল্যকর ওই তিন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা ডাকাত সদস্য নেওয়াজ শরীফ রাসেল ওরফে সবুজকে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। র‍্যাবের ভাষ্য, এই দীর্ঘ সময় ছদ্মনাম ও পরিচয়ে ঢাকার সাভার, কমলাপুর ও সর্বশেষ কুমিল্লার বরুড়ায় আত্মগোপনে ছিলেন রাসেল। এরই মধ্যে আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়েছেন রাসেল। তিনি লাকসাম উপজেলার মুদাফ্ফরগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের শ্রীয়াং গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে।

তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে মামলার চার্জশিট দেওয়ার পর শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর কুমিল্লার তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক নুর নাহার বেগম শিউলী ওই মামলার রায় প্রদান করেন। এতে অভিযুক্ত পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন তিনি।

মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাসেল একজন পেশাদার ডাকাত সদস্য ছিলেন। এর আড়ালে বাসের হেলপারিও করেছিলেন। ২০০৭ সালের ৬ জানুয়ারি রাতে রাসেলসহ তার কয়েকজন সহযোগী ডাকাতি উদ্দেশ্যে জেলার লাকসাম উপজেলার শ্রীয়াং এলাকার বদির পুকুরপাড় সংলগ্ন একটি জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলেন।

ওই দিন রাতে স্থানীয় শ্রীয়াং বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী পাশের মনোহরগঞ্জ উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামের মনিন্দ দেবনাথের ছেলে উত্তম দেবনাথ ও পরীক্ষিত দেবনাথ এবং পান ব্যবসায়ী লাকসাম উপজেলার জগৎপুর গ্রামের সামছুল হকের ছেলে বাচ্চু মিয়া রাতে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে তাদের পেয়ে রাসেল ও তার সহযোগীরা ঘিরে ফেলে মারধর করে এক হাজার ৪০০ টাকা লুটে নেন।

হামলার এক পর্যায়ে হঠাৎ ব্যবসায়ী উত্তম দেবনাথ আসামি রাসেল ও তার সহযোগীদের চিনতে পেরেছেন এবং পরের দিন বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানের নিকট নালিশ করবেন মর্মে হুমকি দেন। এতে রাসেল ও তার সহযোগীরা তিন ব্যবসায়ীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। পরে তাদের পার্শ্ববর্তী একটি মাঠে নিয়ে চাপাতি ও ছোরা দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত বাচ্চু মিয়ার ভাই কবির হোসেন পরদিন বাদী হয়ে লাকসাম থানায় ডাকাতিসহ হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ওই তিন খুনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর চারজন হলেন লাকসাম শ্রীয়াং এলাকার  আব্দুল কাদেরের ছেলে আব্দুর রহমান, ইয়াকুব আলীর ছেলে শহীদুল্লাহ, আব্দুল মান্নানের ছেলে ফারুক হোসেন ও মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে স্বপন। দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজন আসামির মধ্যে এরই মধ্যে আব্দুর রহমান, শহীদুল্লাহ ও ফারুক হোসেন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। অপর আসামি স্বপন পলাতক রয়েছেন বলে জানান মেজর সাকিব।

মেজর সাকিব আরো বলেন, ‘গ্রেপ্তাকৃত আসামি রাসেল জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছে, ঘটনার পরের দিন সকালে সে ও তার পরিবার কুমিল্লা জেলা ত্যাগ করে ঢাকার সাভার উপজেলার ডগরমুড়া এলাকায় তার বাবার এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে সপরিবারে সেখানে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে তারা।

এরপর সে একেক সময় একেক নাম ও স্থান পরিবর্তন করে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ ২০২০ সাল থেকে জেলার বরুড়ায় তার মায়ের সাথে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে এবং আশপাশে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে। এক বছর ধরে সে পুনরায় বাসের হেলপারের পেশায় জড়িয়ে পড়ে। ’লাকসাম থানায় হস্তান্তরের পর সোমবার বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে