বাড়ি রাজনীতি বিএনপি বিএনপির ‘ইন্ডিয়া আউট’ কর্মসূচির নেপথ্য কারণ

বিএনপির ‘ইন্ডিয়া আউট’ কর্মসূচির নেপথ্য কারণ

50
বিএনপির ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচির নেপথ্য কারণ

বিএনপির ‘ইন্ডিয়া আউট’ কর্মসূচির নেপথ্য কারণবিএনপি ভারত বিরোধী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে ডাক দেওয়া হয়েছে, সেই ডাকের নেপথ্যে বিএনপি। মালদ্বীপের কায়দায় ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, ভারতকে চাপে ফেলা। ভারতের নির্বাচনের আগে ভারতীয় পণ্য বর্জন এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত বিরোধীদেরকে উস্কে দিয়ে বিএনপি রাজনীতির মাঠে নতুন করে আবির্ভূত হতে চায়।

বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা মনে করেন যে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে ভারতের জন্যই। বিএনপির নেতারা এটাও মনে করেন যে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন কোনভাবেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্য এবং স্বীকৃত হত না- যদি ভারত এরকম ভূমিকা না নিত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেছেন যে, ভারত নির্লজ্জভাবেই আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আর একারণেই ভারতের বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থান। বিএনপি ভারতকে একটি বার্তা দিতে চাইছে বলে বিএনপির নেতারা মনে করছেন। সেটি হলো, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক রাখা উচিত, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নয়। ভারত যদি শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক রাখে, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থাও মালদ্বীপের মতো হতে পারে বলেই বিএনপির নেতারা একটি বার্তা দিতে চাইছেন।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপির অন্তত দু’টি সভায় ভারত বিরোধী কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তারা মনে করে যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধীতা উস্কে দিতে হবে। যেটি ৭৫ পরবর্তী রাজনীতিতে বিএনপি করেছিল। বিএনপি মনে করে যে, বাংলাদেশে একটি বড় নাগরিক গোষ্ঠী রয়েছে যারা মনে-প্রাণে ভারত বিরোধী। এই ভারতবিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো বিএনপির উদ্দেশ্য বলে কোন কোন নেতা মনে করছেন।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন ভিন্ন কথা। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির ভারত বিরোধীতা কর্মসূচি একটি রাজনৈতিক স্ট্যান্ড মাত্র। ভারত বিএনপিকে উপেক্ষা করছে, ভারত বিএনপিকে এখন রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি দিতেই রাজি নয়।এরকম একটি বাস্তবতায় বিএনপি মনে করছে, যদি তারা বাংলাদেশে একটি ভারতবিরোধী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়, তাহলে ভারত আবার বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করবে, এবং ভারতের সঙ্গে বিএনপির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী হবে। যেটি নব্বই এর দশকে হয়েছিল।

৭৫-এর পরবর্তী পর্যায় থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত ব্যাপকভাবে ভারত বিরোধী বিষ-বাষ্প ছড়ানো হয়েছিলো বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে। আর সে কারণেই সে সময়ে ভারত কূটনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করেছিলো, এবং বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। আর সেই কারণে বিএনপি এমনকি জামায়াতের সঙ্গেও ভারত যোগাযোগ স্থাপন করেছিলো। তবে পরবর্তীতে ভারত সে অবস্থান থেকে সরে আসে। কারণ এ রাজনৈতিক দলগুলো ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের যে ঐতিহাসিক তাৎপর্য সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে তারা নিজের স্বার্থ সম্পর্ককে ব্যবহার করতে চায়।

গত দুই দশক ধরে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। ভারত মনে করে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারা যাদের আছে- তাদের সঙ্গেই ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকতে পারে। অন্যদিকে বিএনপি মনে করছে যে, ভারত আওয়ামী লীগকে যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, তাতেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারছে। আর এ কারণেই তারা মালদ্বীপের আদলে ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যদিও এই কর্মসূচিটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির নয়। তবে অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বিএনপির থিঙ্ক ট্যাঙ্কদের মস্তিষ্ক থেকেই মালদ্বীপের আদলে ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

‘ইন্ডিয়া আউট’ কর্মসূচিটি মূলত মালদ্বীপের একটি কর্মসূচি। যেখানে মালদ্বীপের চীনপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো ‘ইন্ডিয়া আউট’ কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জন শুরু করে। বাংলাদেশেও এরকম একটি কর্মসূচির আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ কর্মসূচির কোন প্রভাব বাজারে পড়েছে বলে মনে হয় না। তবে ‘ইন্ডিয়া আউট’ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন করে ভারত বিরোধীতা উস্কে দেওয়ার ফলে রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণের শঙ্কা রয়েছে। এখন দেখার বিষয় যে, বিএনপি ভারত বিরোধীতা করে রাজনীতিতে কত দিন টিকে থাকতে পারে।