অপরাধপ্রতারণা

জুয়াড়ি বাবা একদিনের সন্তান ‘বিক্রি’ করলেন

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে একদিনের ছেলে সন্তানকে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে জুয়ায় ঋণগ্রস্ত বাবা হিরেণ চন্দ্রের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি প্রকাশ পেলে এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

এর আগে, বুধবার বিকেলে পলাশবাড়ী উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত হিরেণ ওই গ্রামের মৃত নয়ন চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। তিনি পেশায় কর্মকার।
এ ঘটনায় জড়িত অপর দুজন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রান্ত ও পান্থপাড়া এলাকার গোবিন্দের স্ত্রী ভক্তি রানী। তাদের দাবি, সন্তানকে বিক্রি করেননি, দত্তক দিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, হিরেণ দীর্ঘদিন ধরে জুয়া খেলায় আসক্ত। ফলে সংসারের সবকিছু বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। একদিকে জুয়া খেলার নেশা অপরদিকে সংসারের অভাবে সদ্য ভূমিষ্ঠ একদিনের ছেলে সন্তানকে বিক্রি করেন হিরেণ। এতে সহযোগিতা করেন গোবিন্দগঞ্জের প্রান্ত ও ভক্তি রানী।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই যুগ আগে বিয়ে হয় হিরেণ-ঝুম্পা দম্পতির। রনি, নিরঞ্জন, রাবিন্দ্র ও জয়দেব নামে চারটি পুত্র সন্তানও আছে এই দম্পতির। গত মঙ্গলবার রাতে আরও এক পুত্র (পঞ্চম) সন্তানের জন্ম হয় তাদের। ওই সন্তানকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন হিরেণ।

অভিযুক্ত বাবা হিরেণ চন্দ্র বলেন, সন্তান বিক্রির অভিযোগ মিথ্যা। তবে দত্তক দিয়েছি। গোবিন্দগঞ্জের প্রান্ত আর ভক্তি রানীর সাথে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ লোক মাইক্রোবাসযোগে সন্তানকে নিয়ে গেছে। তাদের চেনেন না হিরেণ। হিরেণ বলেন শুনেছি তাদের বাড়ি রাজশাহীতে।

হিরেণের স্ত্রী ঝুম্পা রানী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, হিরেণ জুয়ায় হেরে সংসারের সবকিছু শেষ করে ফেলেছে। এবার আমার কোলের সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে। সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা আমাদের কাছ থেকে একটা কাগজে সই নিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গোবিন্দগঞ্জের প্রান্তের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ওই দম্পতি নিজের ইচ্ছায় তাদের সন্তান দিয়েছে। আমাদের কাছে পেপারস আছে। কার কাছে শিশুটিকে দেওয়া হয়েছে, তাদের নাম-পরিচয় দিতে রাজি হননি প্রান্ত।

এদিকে, ভক্তি রানী বলেন, শিশুটিকে যাদের কাছে দেওয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিচয় হয়, সেখানেই জেনেছি তারা নিঃসন্তান। পরে ফোনে যোগাযোগের একপর্যায়ে তাদের শিশুটিকে দত্তক দেওয়া হয়েছে। তাদের বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে তিনি পরিচয় দিতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে বরিশাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, সন্তান বিক্রি কিংবা দত্তক রাখার বিষয়টি আমি অবগত নই।

এ বিষয়ে পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সন্তান বিক্রি করেছে এমন কোনো তথ্য বা অভিযোগ আমাদের কাছে নাই। যদি কেউ সন্তান বিক্রি করে থাকে তাহলে সেটি অপরাধ। ঘটনার সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button