বাড়ি রাজনীতি বিএনপি বিএনপি নেতারা কারাগারে কেমন আছেন?

বিএনপি নেতারা কারাগারে কেমন আছেন?

0
বিএনপি নেতারা কারাগারে কেমন আছেন

কারাগারে ভালো নেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কারাবন্দি নেতারা। বেশিরভাগ কারাবন্দি নেতা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। প্রচণ্ড শীতে অসহনীয় জীবন-যাপন করছেন তারা।

কারাবন্দি জ্যেষ্ঠ নেতাদের স্বজনরা বলছেন, বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারা মুক্ত অবস্থায় নিয়মিত রুটিন চেকআপে থাকতেন। কিন্তু কারাগারে নিয়মিত চেকআপ হচ্ছে না। নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ওজন প্রায় ৫ কেজি কমে গেছে। কারাবন্দি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কারাগারে তার চিকিৎসা হচ্ছে না। কারা কর্তৃপক্ষ নেতাদের চিকিৎসায় গাফিলতি করছে।
বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কারাগারে ভালো নেই জ্যেষ্ঠ নেতারা। প্রচণ্ড শীতে কারাগারে কষ্টে আছেন তারা। বিশেষ করে দলের মহাসচিব ও মির্জা আব্বাসের ওজন কমেছে। মির্জা ফখরুলের আইবিএসের সমস্যা রয়েছে। সেটি আরও বেড়েছে। মির্জা আব্বাস অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস নিয়ে ভুগছেন। ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতারা কারাগারে নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে কষ্টে রয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আলাল গুরুতর অসুস্থ। তার চেকআপ দরকার। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু সাড়া মিলছে না। এভাবে অন্যান্য কারাবন্দি নেতারাও কারাগারে যথাযথ চিকিৎসা না পওয়ায় কষ্টকর জীবন যাপন করছেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে কারাগারে রয়েছেন। প্রচণ্ড শীতের কারণে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারা নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার ভাই বলেন, ভাইয়ের পায়ে ও হাঁটুতে ব্যথা রয়েছে। এছাড়া তার ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করতে গেলে হাসিমুখে কথা বললেও শারীরিক সমস্যার কথা বলেন না। কারণ এতে স্বজনরা চিন্তিত হবেন। ভাইয়ের লিভারের সমস্যা রয়েছে। তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। কারাগারের বাইরে থাকাবস্থায় নিয়মিত চেকআপের মধ্যে থাকলেও এখন কারাগারে তা সম্ভব হচ্ছে না।
আলালের ব্যক্তিগত সহকারি জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, ‘আলাল ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। তার নিয়মিত চেকআপ দরকার। চেকআপের জন্য কারা কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘আলাল ভাইয়ের কিডনিতে টিউমার ধরা পড়েছিল। সেটি অপারেশন করা হয়েছিল ভারতে। এরপর থেকে তাকে নিয়মিত চেকআপে থাকতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ। তার কিডনিতে টিউমার ধরা পড়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি ভারতে গিয়েছিলেন।’
বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল আলম কারাগারে ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত গাড়ি চালক মো. রতন মিয়া। তিনি বলেন, স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে। কারাগারে ঠান্ডা জনিত সমস্যায় পড়েছিলেন স্যার। এখন মোটামুটি ভালো আছেন।’

গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, ‘দখলদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেতনার স্তরে সুবিচার বলে কিছুই নেই। তিনি দ্রুত হিংসার প্রয়োগে পারঙ্গম। কোনো কালেই নিপীড়ক আওয়ামী সরকার সদিচ্ছাপ্রসূত রাজনৈতিক আচরণ করেনি। ওদের হাতের মুঠোয় ধ্বংসের শক্তি আর ভাষায় বিদ্বেষের শক্তি।’

তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারির ধোঁকাবাজির নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গত তিন/চার মাস ধরে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশবিক নিপীড়ন নির্যাতন চালানো হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনে অনেকেই কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। কারা হেফাজতে রিমান্ড-নির্যাতন পৃথিবীর সকল জালিমশাহীর রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে। কারও হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, কারও হাত ও পায়ের নখ তুলে ফেলা হয়েছে, কারও চোখের আলো নিভে গেছে পুলিশের ছোঁড়া শট-গানের গুলিতে।’
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘এখন অনেকে আদালত থেকে জামিন পেলেও কারামুক্তি হচ্ছে না। জামিনের কাগজ নিয়ে কারাফটক থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আবারও নতুন মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। আওয়ামী পুলিশ প্রশাসন বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী দলগুলোর নেতাকর্মীদের জীবন নিয়ে খেলছে। অবৈধ সরকার যেন নিজেদের টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর। জামিনে মুক্তি পেলেও জেলগেটে অপেক্ষমান গোয়েন্দা সংস্থার লোকদেরকে টাকা না দিলে মুক্তি মিলছে না। অসংখ্য গরীব নেতাকর্মী জেলগেটে টাকা না দেওয়ার কারণে কারাগারেই ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটাচ্ছে। শেখ হাসিনা বিএনপি’র বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলেছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এখন আওয়ামী সুরক্ষাবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আমি জেলগেটে অনাচার এবং টাকার বিনিময়ে মুক্তির নিশ্চয়তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আজ দেড় দশক ধরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা চুষে নেয়ার জন্য।’