বাড়ি রাজনীতি বিএনপি চট্টগ্রামের জনসভায় হুঙ্কার দিয়ে যা বলেছিলেন সালাউদ্দিন পুত্র

চট্টগ্রামের জনসভায় হুঙ্কার দিয়ে যা বলেছিলেন সালাউদ্দিন পুত্র

0
সেই দিন জনসভায় হুঙ্কার দিয়ে যা বলেছিলেন সালাউদ্দিন পুত্র

গত বুধবার চট্টগ্রামের জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীর পুত্র নারায়ে তাকবীর স্লোগান দিয়েছেন।যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পুত্র হুম্মামের কাদের চৌধুরী চট্টগ্রামের জনসভায় হুঙ্কার দিয়েছেন। ঐ ভাষণে তিনি একাত্তরের ঘাতক-নর ঘাতক এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দন্ডিতদের শহীদ হিসেবে সম্বোধন করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বলেছেন, এই শহীদদের বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হবে।

গত কিছুদিন ধরেই বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের টানাপোড়ন চলছে এবং বিএনপি জামায়াতকে এড়িয়ে তাদেরর নিজস্ব উদ্যোগে কর্মসূচি পালন করছে। এদিকে জামায়াতও বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম বক্তব দিচ্ছে। এমন একটি পরিস্থিতি যখন চলছে তখন বিএনপির অবস্থান যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কি না তা জানতে চেয়েছেন একাধিক কূটনীতিকরা। বিএনপির মধ্যে অন্তত একাধিক নেতা বলছেন যে, এই হুম্মাম কাদের চৌধুরীরা দলকে ডোবাবে। তারা যখন যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সমর্থন নিবে তখন এটি জনগণকে ভুল বার্তা দিবে। উল্লেখ্য যে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করে তার নির্বাচিনের ইশতেহারে। এই ব্যাপারে সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে সারা দেয়।

বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুটি তরুণদের মাঝে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি করে। এবং তারুণ্যের ভোটেই আওয়ামী লীগ তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়েছিলো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা তরুণ প্রজন্মের একটা গণদাবি এবং তারা যুদ্ধাপরাধীদের ঘৃণা করে। নুতন যারা ভোটার হয়েছে, বিশেষ করে ৩০ বছর পর্যন্ত যাদের বয়স, তারা সবাই মোটামুটি ঐক্যমতে এসেছে। একই অবস্থাটি বিএনপি উপলব্ধি করে এবং এই উপলব্ধি থেকেই বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের ইস্যু থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছে এবং এই ব্যাপারে নীরবতা পালন করার নীতি গ্রহণ করেছে।

কিন্তু তাদের এই নীরবতাই তাদের জন্য উল্টো ফল দেয়। সাধারণ তরুণ যারা আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কিছুই করে না তাদের মধ্যে ধারণা হয় যে বিএনপি বোধ হয় যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করে। কূটনৈতিক মহলের মধ্যেও একটা গুঞ্জন ছিলো যে বিএনপি যদি আবার ক্ষমতায় আসে তবে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীদেরকে আবার পুনর্বাসন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে কি না?সাকাপুত্র এটিও বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এই শহীদদের উপযুক্ত সম্মান দেয়া হবে।

তার এই বক্তব্যের অডিও ক্লীপ এখন কূটনৈতিক পাড়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এই নিয়ে বিএনপি চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।শুধু কূটনৈতিক পাড়ায় নয়, এই নিয়ে বিএনপির মধ্যেও তোলপাড় চলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সসদ্য আমির খসরু মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, এটি হুম্মম চৌধুরীর ব্যক্তিগত মতামত, দলের অবস্থান নয়। তিনি ঐ জনসভায় একজন বক্তা ছিলেন।

কাজেই বক্তা হিসেবে তিনি যেই বক্তব্য দিয়েছেন তা একান্তই তার নিজস্ব। কিন্তু আমির খসরু মাহমুদ যাই বলুক না কেন, এই বক্তব্যের পতর বিএনপির মধ্যে নানা মুখী আলোচনা চলছে।কূটনৈতিকদের সাথে একাধিক বৈঠকে বিএনপির নেতারা বলেছেন যে তারা যুদ্ধাপরাধীদের ইস্যুতে কোনো কিছু করবেন না এবং যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। এবং বিএনপি এটিও বলেছে যে তারা কখনোই যুদ্ধাপরাধী এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিবেনা। কিন্তু এখন হুম্মাম কাদের চৌধুরী যখন দলের মহাসচিব এবং অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের সামনে এ ধরণের বিক্তব্য দেয় তখন এই বক্তব্য নিয়ে কূটনৈতিকদের মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

তাহলে কি যুদ্ধাপরাধীরা বিএনপিতে এখনো ক্ষমতাবান? সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিগোষ্ঠী কি তাহলে বিএনপিকে পেছন থেকে মদদ দিচ্ছে? বিএনপির মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে যে এর ফলে আবারও তরুণরা বিএনপি বিমুখ হয়ে পড়বে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যুদ্ধাপরাধী সাকাপুত্রের এই বক্তব্যের পর বিএনপি আসলে কি ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে যে এখন পর্যন্ত বিএনপি তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে না।