জীবন-যাপনবাংলাদেশ

গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দিকে এগোচ্ছেন বিইআরসি

গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়াতে গণশুনানি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। দুই ক্ষেত্রেই বিইআরসি’র কারিগরি কমিটি দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী শুনানির পরবর্তী তিন মাসের মধ্যেই দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর শুনানির প্রায় দুই মাস হতে যাচ্ছে। গতকাল বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর বিষয়ে শুনানি হয়েছে। আপাতদৃশ্যে মনে হচ্ছে গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দিকেই এগোচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ভোক্তা সংগঠনগুলো বলছে, এই মুহূর্তে দাম বাড়ানো হলে জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

শুনানিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রমাণের দায়িত্ব বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ ও ন্যায়সঙ্গতভাবে আদেশ দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা জানেন সারা পৃথিবীব্যাপী একটি অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। একটা পেন্ডামিক শেষ না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশ সর্বত্র প্রভাব পড়েছে। আমরাও তার বাইরে না।

চেয়ারম্যান বলেন, প্রশ্ন উঠতে পারে গ্যাসের দামের গণশুনানির ঘোষণা না দিয়ে কেন আমরা বিদ্যুতের দামের শুনানি নিচ্ছি। আপনারা জানেন দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সরকারের পলিসি সিদ্ধান্তের বিষয় থাকে, সেটি দালিলিকভাবে প্রমাণের বিষয় থাকে। সেটার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। শেষ হলে গ্যাসের দামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।

কমিশন তার আইনি প্রক্রিয়াগত কারণে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় প্রস্তাবের উপর গণশুনানি নেয়া হচ্ছে। পাইকারি দাম ঘোষণা হলে খুচরার ওপর প্রভাব পড়বে। তাদের কোনো প্রস্তাব আমরা পাইনি। ধরেন আমি বাড়িয়ে দিলাম তখন বিতরণ কোম্পানির সমস্যা হতে পারে এমন প্রশ্ন রাখেন বিপিডিবি’র প্রতি।

গতকাল রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর শুনানিতে অংশ নিয়ে গ্রাহকরা বিরোধিতা করেন। এই শুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।

শুনানিতে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে সরকার ভর্তুকি দিতে চায় কিনা। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের বিদ্যমান ভর্তুকি রয়েছে, সরকার তা অব্যাহত রাখতে চায় কিনা, তা জানা দরকার। তবে এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

এক প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অর্থ পরিদপ্তরের উপ-পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, আমাদের যা খরচ, তাই ব্যয় ধরেছি। সরকার চাইলে এতে ভর্তুকি দিতেও পারে, নাও দিতে পারে। এরপর ক্যাব উপদেষ্টা জানতে চান, প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে পাইকারি বিদ্যুৎ সরবরাহের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যয় সংকোচন করে ঘাটতি কমানোর কোনো কৌশল প্রস্তাব করা হয়নি।

কেবলমাত্র মূল্য হার বাড়ানোর মাধ্যমে ঘাটতি সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যয় কমিয়ে ঘাটতি কমানোর কী কোনো সুযোগ নেই?নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মুহিউদ্দিন আহমেদ শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে এক পয়সা দাম বাড়ালেও আমরা মানবো না। 

পাইকারিভাবে বিদ্যুতের দাম ৩ টাকা ৩৯ পয়সা বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৬ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এতদিন সরকার ৩ টাকা ৩৯ পয়সা ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তাব গ্রহণ করলে সরকারের আর ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন পড়ছে না।

ক্যাব এর জ্বালানি উপদেষ্টা জানতে চান, ২০২১-২২ অর্থবছরে পাইকারি বিদ্যুতে আর্থিক ঘাটতি প্রায় ৩০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। বিদ্যমান পাইকারি মূল্য হার ৫ টাকা ১৭ পয়সা। মূল্য হার ঘাটতি বিবেচনায় নিয়ে পাইকারি বিদ্যুতের রাজস্ব চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে এবং মূল্য হার ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ঘাটতি সমন্বয়ে সরকারি ভর্তুকি বিবেচনা করা হয়নি। তার মানে যখন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করে, তখন সরকার ভর্তুকি দিতে রাজি হয়নি? সরকার কি ভর্তুকি দিতে সম্মত না?

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বর্তমান দর ইউনিট প্রতি ৫.১৭ টাকা থেকে ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৫৮ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। বিপিডিবি’র এই প্রস্তাব গ্যাসের বর্তমান দর বিবেচনায়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি হলে ৯.১৪ টাকা এবং ১২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেলে ৯.২৭ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে বিইআর টেকনিক্যাল কমিটি ২ দশমিক ৯৯ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

 গ্যাস প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রত্যেকটিই মুনাফায় রয়েছে। বর্তমান অবস্থায় জনগণের বাড়তি দাম দেয়ার সামর্থ্য নেই। আর কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখিয়ে দিয়েছি গ্যাসের দাম ১৬ পয়সা কমানো যায়। 

২১শে মার্চ থেকে টানা ৪ দিনব্যাপী গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানিতে অংশ নিয়ে চরম তোপের মুখে স্বীকার করেন দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব তাদের আগ্রহে হয়নি। পেট্রোবাংলার নির্দেশে ১১৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে পেট্রোবাংলা বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে গেছে স্পর্ট মার্কেট থেকে চড়া দরে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। তাই দাম বাড়াতে হচ্ছে। পেট্রোবাংলার হিসাব মতে সেই স্পর্ট মার্কেটের গ্যাসের পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ। সামান্য পরিমাণ গ্যাসের দাম বেড়েছে বলে ১১৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছে ভোক্তারা।

Back to top button