বাড়ি এক্সক্লুসিভ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি’র বিক্ষোভ সমাবেশ

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি’র বিক্ষোভ সমাবেশ

2
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি র বিক্ষোভ সমাবেশ

আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে রাজনৈতিক দলগুলোকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি। পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলনের জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ আহবান জানায় বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে এদিন সকাল থেকে মৎস ভবন মোড়, সেগুনবাগিচা, সচিবালয় এলাকা, জিরো পয়েন্ট ও প্রেস ক্লাব এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ সময় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পথচারীদের তল্লাশি করতে দেখা গেছে। সমাবেশের জন্য প্রেস ক্লাবের সামনে মিনি ট্রাকের ওপর তৈরী করা অস্থায়ী মঞ্চ। আর রাস্তায় কর্মীদের বসার জন্য বিছিয়ে দেয়া হয় মাদুর।

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নামে এই সমাবেশ করার কথা ছিল। তবে শেষ মুহুর্তে পুলিশের অনুরোধে স্থান পরিবর্তন করে বিএনপি। বেলা দুইটায় সমাবেশ শুরু হলেও এর কয়েক ঘন্টা আগে থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে দলটির নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেস ক্লাব এলাকায় জন সমুদ্রে পরিণত হয়।

সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবাইকে গণপেনশন দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এটার মাধ্যমে আরেকটি লুটপাটের ব্যবস্থা করছে সরকার। মানুষ আওয়ামী লীগকে তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করছে। সরকার নিজে এবং সব প্রশাসনযন্ত্রকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে ফেলেছে।

ওয়াসার এমডিকে তিনবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। ব্যক্তি বিশেষকেও দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। এ দুর্নীতির কারণে পানির দাম বাড়ছে। কুইক রেন্টাল প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এদের জন্য আবার সংসদে দায়মুক্তি আইন করা হয়েছে।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার প্রথম থেকেই টিকা নিয়ে দুর্নীতি করছে। এমন কোন জায়গা নেই যে এ সরকার লুটপাট করছে না। আওয়ামী লীগ লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় তারা।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখনো সময় আছে খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করুন। তাহলেই কেবলমাত্র এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।সরকারের পতনের জন্য সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার হটাতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ২০০৮ সালে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে এই সরকার ক্ষমতায় আসে। পরে তারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য ভোট ছাড়া ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে জনগণের ট্যাক্সের চাপ বাড়াচ্ছে। আজকে সময় এসেছে, আমাদের টাকা দিয়ে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে দেবো না। রাজপথে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশকে রক্ষা করবো। আর এতে বিএনপি নেতৃত্ব দেবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির সঙ্গে ভোট চুরির সম্পর্ক আছে। দুর্নীতির সঙ্গে ভোট চুরির সম্পর্ক আছে। মেগা প্রকল্পের সঙ্গেও ভোট চুরির সম্পর্ক আছে। কারণ সবখান থেকেই টাকা পাচার করা হচ্ছে। এখন ভোট চোরদের ধরতে হবে। তাদের সহযোগীদের ধরতে হবে। যারা আজকে ভোট চুরি করছে তাদের ধরতে হবে। ভোট চোরদের ধরে চুরির মেশিন বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সব কিছুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কিন্তু মানুষের জীবনের মূল্য নেই। দুর্নীতির টাকা দিয়ে কানাডার বেগম পাড়ায় বাড়ি বানাচ্ছে সরকারের লোকেরা। যারা পকেট কেটে টাকা পাচার করছেন এর বিচার হবে একদিন।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে। গরীব আরো গরীব হচ্ছে। সরকারের সিন্ডিকেটের জন্য সব কিছুর দাম বাড়ছে। এরা দশ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলেছিলো। ২০০৬ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ে তখন মোটা চাল ১৬ টাকা ছিলো আর এখন ৫০টাকা। কোথায় ১০টাকা চাল?

জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে সরকার। সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে কুইক রেন্টালে নিজেদের লোককে লুটপাট করতে দেয়ার জন্য। ব্যাংকগুলোর নাজুক অবস্থা। সরকারের সিন্ডিকেট ব্যাংক লুট করে বিদেশে পাচার করছে। কিন্তু সরকারের এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন, ২০১৮ সালে রাতে ভোট চুরি করে সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। দেশকে রক্ষা করতে হলে গায়ের জোরে বসে থাকা সরকারকে বিদায় করতে হবে। এদের বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন আন্দোলন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সবাইকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন প্রমুখ।