বাড়ি ইতিহাস-ঐতিহ্য আজ বাংলাদেশ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পূর্ণ হলো

আজ বাংলাদেশ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পূর্ণ হলো

0
আজ বাংলাদেশ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পূর্ণ হলো

আজ বাঙালির চিরদিনের গৌরব, অসমসাহস, বীরত্ব ও আত্মদানে মহিমান্বিত অর্জন মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের অর্ধশতবর্ষ পূর্ণ হলো। আজ বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন, ১৬ ডিসেম্বরে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মরণপণ যুদ্ধের শেষে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল বীর বাঙালি। পাকিস্তানি হানাদার বর্বর ঘাতক সেনাবাহিনী অবনত মস্তকে পায়ের কাছে অস্ত্র নামিয়ে রেখে গ্লানিময় আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)।

যেখান থেকে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চে তাঁর কালজয়ী ভাষণে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যার যা আছে তা–ই নিয়ে বাঙালিদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ছিল এবার। ফলে বছরটি ছিল জাতির জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যময়। এই দুই বিশেষ উপলক্ষ উদ্‌যাপনের জন্য সারা বছরই সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে বৈচিত্র্যময় কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। করোনা মহামারির কারণে উৎসব উদ্‌যাপনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। ফলে বড় আকারে জনসমাগম এড়িয়ে এসব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।

এখন করোনা সংক্রমণের তীব্রতা অনেকটাই কমেছে। তাই সকাল থেকেই আজ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন সর্বস্তরের মানুষ। পরাধীনতা ঘোচাতে জাতির যে বীর সন্তানেরা তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, কৃতজ্ঞ জাতি আজ তাঁদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করার পরও ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। এরই একপর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার সেনারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঘুমন্ত নিরীহ নিরস্ত্র সাধারণ বাঙালিদের ওপর চালায় মানব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম গণহত্যা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে। এর আগেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে হানাদারদের প্রতিরোধের সংগ্রামের আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের শেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে অর্জিত হয় চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর পরাক্রমের কাছে মাথানত করে পাকিস্তানি ঘাতকের সেনার দল। পৃথিবীর বুকে অর্ধশত বছর আগের এই দিনে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। বাঙালি ঊর্ধ্বলোকে তুলে ধরে প্রাণপ্রিয় লাল-সবুজ পতাকা। গেয়ে উঠেছিল ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…’। আজ সেই পতাকার, সেই গানের সুবর্ণজয়ন্তীর দিন।

আজ সরকারি ছুটি। রাজধানীর পাড়া–মহল্লা, সড়কের মোড়ে মোড়ে বাজবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আর মুক্তির অবিস্মরণীয় গান। বাড়ির ছাদের কার্নিশে, অফিস–আদালত, দোকানপাটে, অনেক যানবাহনে উড়বে লাল–সবুজ পতাকা। রাতে আলোকসজ্জা করা হবে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও সড়কদ্বীপগুলোতে।মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে।

আজ জাতীয় পর্যায়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মিত্রবাহিনীর সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্যে আজ বিকেল সাড়ে চারটা থেকে দুই দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠান শুরু হবে। মুজিব বর্ষ উদ্‌যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এ আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচালনায় থাকবে সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষের শপথ। পরে আলোচনা পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানীয় অতিথির বক্তব্য দেবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রেখে দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বাণীতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং দেশবাসীকে আন্তরিক ও উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা হলো বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এই অর্জনকে অর্থবহ করতে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সবাইকে জানতে ও জানাতে হবে। তিনি বলেন, ‘প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা পৌঁছে দেব—বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’