বাড়ি রাজনীতি বিএনপি দুই কারণে আটকে আছে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা

দুই কারণে আটকে আছে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা

1
দুই কারণে আটকে আছে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির ৮ মাস পূর্ণ হলেও অনিশ্চিত রয়ে গেছে নানা বিষয়। উন্নত চিকিৎসা জন্য পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মুক্তি পাওয়া বিএনপি প্রধানের প্রত্যাশিত চিকিৎসা কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। কবে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে তাও অনিশ্চিত। একদিকে করোনা মহামারির কারণে দেশের কোনো হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে মুক্তির শর্তের কারণে বিদেশেও চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না।

দুর্নীতির দায়ে ২৫ মাস সাজা ভোগের পর ‘মানবিক বিবেচনায়’ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য গত ২৫ মার্চ মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পরিবারের পক্ষে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত আগস্টে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। আগে যেসব শর্ত ছিল সেগুলো অপরিবর্তিত রেখেই এ মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। কারামুক্তির পেছনে পর্দার আড়ালে আত্মীয়-স্বজনের ভূমিকাই ছিল মুখ্য।

সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে সমঝোতার পর ভাই শামীম এস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। পরিবারের করা আবেদনে মুক্তির জন্য খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রধান্য পেয়েছিল। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা হয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শ তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু করোনাভারাইস মহামারির কারণে কবে নাগাদ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর উন্নত চিকিৎসা \হশুরু হবে তা তারা জানাতে পারছেন না।

খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে তার চিকিৎসক ডা. এ জেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপাসনের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। অবনতি হয়েছে তাও বলা যাবে না। কার্যকর চিকিৎসার জন্য তাকে একটা হাসপাতালে নেওয়া উচিত। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে হাসপাতালেও নেওয়া যাচ্ছে না। বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিএনপি প্রধানের পরিবার আবেদনও করেছে। অগ্রগতি হলেও তো সবাই জানতে পারবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে খালেদা জিয়ার হাত এবং পায়ের ব্যথা একটু কম।

তবে শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। তিনি উঠে দাঁড়াতে পারছেন। হাঁটা-চলা করতে পারেছেন না। গৃহকর্মী ফাতেমাসহ পারিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়ার দেখভাল করেন। এছাড়া দুইজন নার্স রয়েছেন তারাও সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

কিন্তু এখন এর কোনো অগ্রগতি পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার চিকিৎসার জন্য লন্ডনে কয়েকটি হাসপাতালের সঙ্গে দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে কারামুক্ত হয়ে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় আছেন খালেদা জিয়া। ওইদিন থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শে প্রথমে দুই সপ্তাই কোয়ারেন্টিনে এবং এরপর থেকে জনসমাগম এড়াতে এক ধরনের আইসোলেশনে আছেন তিনি। দিনের খাওয়া-দাওয়া, গোসল এবং নামাজের মতো রুটিন কাজ বাদ দিলে তার সবচেয়ে ভালো সময় কাটে প্রতিদিন বিকেল বা সন্ধ্যায়।

কারণ ওই সময় তার সঙ্গে সময় কাটাতে ফিরোজায় যান বোন সেলিমা ইসলাম, ভাই শামীম এস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা। মাঝেমধ্যে যান ভাতিজা শাফিন এস্কান্দার ও তার স্ত্রী অরনী এস্কান্দার, ভাতিজা অভিক এস্কান্দার ও ভাগ্নে শাহরিয়া হক। বলতে গেলে স্বজনরা প্রায় প্রতিদিনই গিয়ে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটান খালেদা জিয়ার সঙ্গে। ফিরোজা সূত্রে জানা যায়, ঢাকার এক আত্মীয়দের সঙ্গ ছাড়াও খালেদা জিয়ার নিয়মিত আরেক রুটিন হচ্ছে রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর পরিবারের সঙ্গে কথা বলা। তারেক ও পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা ছাড়াও তিনি কথা বলেন নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের সঙ্গে।

পাশাপাশি কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথি ও তার দুই কন্যা জাফিয়া রহমান ও জায়মা রহমানের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন খালেদা জিয়া। এছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি অন্যান্য ইবাদত বন্দেগি ও পত্রপত্রিকা পড়ে এবং টিভি দেখেও সময় কাটান বিএনপি প্রধান। সূত্রমতে, কৌশলগত কারণে রাজনৈতিক তৎপরতা থেকে সরে এসেছেন খালেদা জিয়া। মুক্তিকালীন শেষ আট মাসে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নিজেকে জড়াননি তিনি। তবে দলের শীর্ষ নেতা, জোট নেতা, আইনজীবীদের সাক্ষাৎ দিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের অনেকে এই সব ঘটনাকে রাজনৈতিক তৎপরতার অংশ বলে মত দিয়েছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে কিছুটা প্রতিক্রিয়াও তৈরি হয়েছিল।

আর এ কারণেই বিএনপির অনেক নেতা আগ্রহী হলেও এখন খালেদা জিয়া আর কাউকে সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না বললেই চলে। তবে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদলের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এবং ডা. মামুন দু’এক দিন পর পর ফিরোজায় গিয়ে তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। কারামুক্তির শর্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। পাশাপাশি ‘তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না’ এমন আভাসও সরকারের মন্ত্রীরা দিয়েছেন। তাই প্রকাশ্যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতায় ছিলেন না বিএনপি প্রধান। তবে বিএনপির রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ওয়াকিবাহল ছিলেন তিনি।