বিএনপিরাজনীতি

বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের ছররা গুলিতে চোখ হারাচ্ছেন

২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষে পুলিশের ছররা গুলিতে আহত নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলের কর্মী রফিকুল ইসলাম (ডাক নাম আকিব) এখন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। আকিবের চোখ কারণে-অকারণে ব্যাথা করে। চিকিৎসা না পেলে চোখের অবস্থাটা কী হতে পারে স্বাভাবিকভাবেই অনুমেয়। চোখ নিয়ে খুব ঝুঁকিতে আছেন আকিব।

২৮ অক্টোবর, বিএনপির সমাবেশের দিনটি আকিবের জীবনে ডান চোখ হারানো দিন হিসেবে থেকে যাবে। চিকিৎসকরা বলেছেন, সময়মতো চোখের চিকিৎসা নিতে না পারলে ইনফেকশন হয়ে চোখ নষ্ট হয়ে যাবে তার। এখনই আকিবের ডান চোখ থেকে ছররা গুলি সরানো দরকার।

একই কথা বলছেন প্রায় কয়েকশ’ চোখের অপারেশন করা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দলের(বিএনপি) একজন ডাক্তার। তিনি ঢাকার বাইরে থাকলেও রাতে ঢাকায় আসেন। অপারেশনের পরদিনই ঢাকা ছাড়েন।

আপনি ঢাকায় থাকেন না কেন?

তিনি উত্তরে বলেন, দেশের ডিক্টেটর শেখ হাসিনা কত মানুষকে কতভাবে আঘাত করে যাচ্ছে। বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের কারো হাতে গুলি লেগেছে, কারো পায়ে, কারো চোখে ছররা গুলি লেগেছে। এই অবস্থায় আমরা যদি ডিবি পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যাই তাহলে আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সেই ডাক্তারদের নাম বলা যাচ্ছে না। শুধু ডিবি পুলিশ নয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকই তাদের খুঁজছে ।
২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে ক্র্যাক ডাউনে মোট ৬৫ বিএনপি কর্মীর গায়ে ছররা গুলি লেগেছে। শান্তি নগরের বড় দুটি বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে রায়ট পুলিশ গুলি করলে সমাবেশে আসা নিরীহ মানুষ মাথা ও চোখে-মুখে গুলি লাগে।

এর আগে ২১ জুলাই সাউন্ড গ্রেনেডে যুবদলের নেতা মাসুমের (ডাক নাম) ডান চোখে আঘাত লাগে। তিনি বলেন, নয়াপল্টনের পার্টি অফিসের উল্টা দিকের সড়কে আমরা মিছিল করছিলাম। প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি কী হচ্ছে। পরে দেখলাম চোখ দিয়ে ভাতের মাড়ের মতো কিছু বের হচ্ছে। দলের ডাক্তারদের দেখানো হয়েছিল। পরে বাংলাদেশের প্রাইভেট হাসপাতালের ডাক্তার বলেন, সাউন্ড গ্রেনেডের স্প্লিন্টার অক্ষিগোলকে ঢুকে গেছে। এখন কিছু করার নাই, পরে দেখা যাবে। চোখে ভয়াবহ ব্যথা হচ্ছে। ডান চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পারি না। ভারতের চেন্নাই চলে গেলাম। ওরা বললো, চোখে ইনফেশন হয়েছে, ইমিডিয়েট অপারেশন করতে হবে। অপারেশন করে স্প্লিন্টার বের করা হলো। এখনও দেখতে পাই না। চশমা পরলে সামনের কিছু দেখতে পাই। চোখের সামনে আলো থাকলে দেখতে পারি। দূরের কোনো কিছু দেখতে পাই না। পাবলিকের টাকায় কেনা সাউন্ড গ্রেনেডের জন্য আমার এ পর্যন্ত ১৮ লাখ টাকা খরচ করতে হলো। এই ঘটনার পর আমার সংসার চালানোর জন্য আয় কমে গেছে। যে ব্যবসা করতাম সেই দোকান বন্ধ করে দিয়েছি। সামনে আবারো চেন্নাই যেতে হবে। কত টাকা খরচ হবে- তা এখনও আমি জানি না। আমার সাথে হবিগঞ্জের এক ছাত্র নেতা সাইফুল চেন্নাই গিয়েছিল। সেখানকার ডাক্তাররা বলেছেন, তার ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সে বিষয়টি তার মাকে ও গার্লফ্রেন্ডকে জানায়নি। জানালে কী হবে, সে তা বলতে পারে না। সেই ছাত্র নেতা কষ্টে পড়ে আমাকে বলেছে, দেখেন, চোখ নষ্ট হয়েছে শুনলে আমার ভালোবাসার মেয়েটা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।

বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিক বাংলা আউটলুককে বলেন, ২০১২ সালে পুলিশের ছররা গুলিতে সিরাজগঞ্জের বিএনপি নেত্রী মেরির দুই চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর দেশে-বিদেশে এ বিষয়ে আলোচনা হতে থাকে। এ পর্যন্ত বিএনপির প্রায় ৫০ থেকে ৬৫ জন নেতা কর্মীদের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ১,০০০ জনের বেশি নেতা-কমী পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছে। তবে কষ্টের ব্যাপার হলো, যারা চোখে গুলি খেয়েছে সেই সব নেতা-কর্মীর মধ্য থেকে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে হবিগঞ্জে সাংবাদিকসহ চার জন নেতা-কর্মীর চোখে গুলি পুলিশ গুলি মেরেছিল। দেশে সংখ্যক ভাল রেটিনা সার্জন নাই। ফলে চোখে গুলি খাওয়া মানুষরা প্রোপার চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
তিনি আরো বলেন, আমরা বিরোধী দল, দেশের পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কেস দিতে পারি না। কারণ তারা এসব কেস নেয় না। পুলিশকে মানবিক হতে হবে। আগে পায়ে গুলি চালাতো কিন্তু কয়েক বছর ধরে মুখে গুলি চালাচ্ছে পুলিশ।
এদিকে মেট্রোপলিটন পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে।

ছাত্রদল নেতার জবানবন্দি
ঢাকা দক্ষিণের ছাত্রদল নেতা আহমেদ সূরুজ (ছদ্ম নাম) ২৮ অক্টোবর কাকরাইল মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন। পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের ঐতিহ্যবাহী সরকারী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ইসলামী ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্সের এই ছাত্র বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এসেছিলাম। আমাদের মিছিলের পাশে তিন চার গাড়ি পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। আমাদের সমাবেশের মধ্যে আরেকটা সমাবেশের সমর্থক-কর্মীরা ঢুকলে স্বাভাবিকভাবে একটু উত্তেজনা ও চাপ দেখা দেয়। উত্তেজনা প্রশমিত করতে পুলিশ ব্যারিকেড দিতে পারতো। বিএনপির মিছিলে আওয়ামী লীগের লোকজনও থাকতেও পারে। বিএনপির মিছিলের মধ্যে হঠাৎ করেই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে যায়। এর মধ্যে হঠাৎ করেই পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেডসহ টিয়ার শেল আর রাবার বুলেট মারা শুরু করলো। ছররা গুলির মধ্যেই নাকে ছররা গুলি ঢুকে গেল। ছররা গুলি লাগার সাথে সাথে টপ টপ করে রক্ত পড়া শুরু করলো। পরে এক্সরে থেকে জানা গেল, একশ গুলি ঢুকেছে। ডাক্তাররা তাৎক্ষণিকভাবে ছররা গুলি বের করেছেন। অনেক সিসার গুলি রয়ে গেছে। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলাম। লোকজন ছোটাছুটি করছে। এমন কি বিল্ডিংয়ের ওপর থেকেও রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড মেরেছে। আমাকে মুন্সিগঞ্জ মহিলা দলের এক নেত্রী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। আমি অজ্ঞান হওয়ার আগেই দেখেছি অনেকেই পুলিশের রাবার বুলেটে আহত হয়ে রাস্তার পড়ে আছে। অনেককে ধরে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চতুর্দিক থেকে টিয়ার গ্যাস মরার পর তো থাকা যায় না।

যখন আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ঢুকি তখন দেখি আওয়ামী লীগ আর ছাত্রলীগের হাতে রামদা-লাঠি। কিন্তু আমাদের হাতে একটা লাঠিও ছিল না। ২৮ অক্টোবর বিএনপির দশ বারো লাখ নেতাকর্মী এসেছিল। তারা যদি পুলিশ আর আওয়ামী লীগের দিকে দৌড় দিতো তারা কি থাকতে পারতো? আমরা তো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছিলাম।

আমার বাবা গ্রাম থেকে ফোন দিয়েছিল। বাবা বলেছিল, ওটা তো সরকার নিয়ন্ত্রিত হাসপাতাল। আমি এ কথা শোনার পর দেখেছি, পুলিশ প্রেসক্রিপশন নিচ্ছে, দেখছে। কোথায় বাড়ি, ফোন নাম্বার, সম্পূর্ণ ঠিকানা নিচ্ছে। তখন আমার ভাই আসলো। আমি ঢাকা মেডিকেল থেকে ট্রিটমেন্ট পুরাটা নেইনি। আমি ডিউটি ডাক্তারদের বললাম, আমি অসুস্থ বোধ করছি, ওয়াশরুমে যাবো। ভাই আমাকে বাথরুমে যাওয়ার নাম করে মেডিকেল থেকে বের করে আনে। সেখান থেকে রিক্সা করে গণস্বাস্থ্যে চলে আসি। পরে শুনেছি পুলিশ ঢাকা মেডিকেল থেকে অনেক নেতা-কর্মীকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেছে।

একটি মন্তব্য

  1. অবৈধ ভোট চোর হাসিনা মাফিয়া সরকারের পদত্যাগ চাই নতুন নির্বাচন দিতে হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
অভিনেতা জয় ও মিষ্টি জান্নাতের চুমুর দৃশ্য কোথায়? বামন চিনি পৈতে প্রমাণ/ বামনী চিনি কি করে বাইডেন ও তার স্ত্রী সম্পদের পরিমাণ কত বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনকুবের, দুবাইয়ে তাদের সম্পদ অভিনেত্রী কঙ্গনার যে বিপুল সম্পদ ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে শুভেচ্ছা জানালো আইপিএল নিলাম তালিকায় মাহমুদউল্লাহ, নেই সাকিব