খেলাফুটবল

সাফজয়ী ফুটবলার রাজিয়ার সন্তান জন্ম দিয়ে রক্তক্ষরণে মৃত্যু

২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফজয়ী দলের সদস্য ছিলেন সাতক্ষীরার এই মেয়ে।

সন্তান প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেলেন সাফজয়ী নারী ফুটবলার রাজিয়া খাতুন। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফজয়ী দলের সদস্য ছিলেন সাতক্ষীরার এই মেয়ে।

বুধবার রাতে ছেলে সন্তান প্রসবের প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ২৫ বছর বয়সী রাজিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তার স্বামী ইয়াম রহমান।

রাত ৩টার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের লক্ষ্মীনাথপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে তিনি মারা যান।

রাজিয়া খাতুন ওই গ্রামের প্রয়াত নুর আলী সরদারের মেয়ে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে রাজিয়া সবার ছোট।

পরিবারের বরাতে কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদ মেহেদী জানান, “ফুটবলার রাজিয়া সুলতানা দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। বুধবার রাত ১০টার দিকে তিনি একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। রাত ৩টার দিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে থাকে।”

পরে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে ভোর ৪টা দিকে তার মৃত্যু হয় বলে জানান তিনি।

রাজিয়ার মৃত্যুর জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অবহেলাকে দায়ী করে ইয়াম রহমান বলেন, “আমি গাজীপুরে চাকরি করি। ইফতারির সময় বাসায় গিয়ে ফোন দিয়েছিলাম। ফোনটা ওর (রাজিয়া) ভাই ধরে বলেন, ব্যস্ত আছি। কিন্তু কেউ আমাকে জানায়নি যে ওর পেইন (প্রসব ব্যথা) উঠেছে। আসলে ওর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। কিন্তু কেউ বিষয়টা গুরুত্ব দেয়নি।”

স্বামী ইয়াম বলেন, “ওরা (রাজিয়ার পরিবার) আমাকে গত রাত ১১টার সময় জানায় ছেলে ও মা সুস্থ আছে। কিন্তু পরে ওর প্রচুর রক্ত ঝরেছে। দীর্ঘ সময় অচেতন হয়েছিল। ভোরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছে।”

রাজিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার গাড়ি আছে, টাকা আছে। ওখানে বাচ্চা নরমাল ডেলিভারি করে না। সিজার করতে বলেছিলাম। কিন্তু ওরা শোনেনি।”

ইয়াম নিজেও ফুটবলার ছিলেন। বসুন্ধরা কিংস অনূর্ধ্ব-১৮, সাইফ স্পোর্টিং যুব দলে খেলেছেন তিনি। তৃতীয় বিভাগেও খেলেছেন। তিন বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন রাজিয়াকে।

রাজিয়াকে হারিয়ে দিশেহারা ইয়াম বলেন, “কীভাবে কি হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। আমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল।”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হাসান জাফরী বলেন, “আমি ভালভাবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, রাজিয়াকে চিকিৎসার জন্য রাতে আমাদের এখানে আনা হয়নি। তবে, ধারণা করছি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তিনি মারা যেতে পারেন।”

রাজিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ সাতক্ষীরার ক্রীড়াঙ্গন। শোক জানিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, নাসরিন স্পোর্টিংয়ের কোচ গোলাম রায়হান, জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও সানজিদা আক্তার।

রাজিয়া ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলেছেন। ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে খেলেছেন তিনি। ২০১৮ সালে ভুটানে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন রাজিয়া।

এ ছাড়া ২০১৯ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফে জাতীয় দলে সাবিনা খাতুনদের সঙ্গে খেলেছেন রাজিয়া। নারী ফুটবল লিগে নাসরিন স্পোর্টিং ও এএফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জার্সিতে খেলেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button