ইতিহাস-ঐতিহ্য

টাঙ্গাইলের শাড়ি নিজেদের পণ্য হিসেবে দাবী করলো ভারত

দেশ-বিদেশের বাংলাদেশি বাঙালিদের টাঙ্গাইলের শাড়ি এবং সুন্দরবনের মধুকে নিজেদের অনন্য সম্পদ হিসেবে দাবি করতে না পারার বিষয়টি প্রকাশ পায় এ বছর জানুয়ারী মাসে । এই দুটি হেরিটেজ আইটেম, অন্যান্য তিনটি পণ্যের সাথে, ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় এও পোর্টালের অধীনে ভৌগলিক নিদের্শক (জিআই) হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে টাঙ্গাইলের শাড়ির প্রচারণা করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই স্বত্ব হারানোর বিষয়টি আবারো বিভিন্ন সোসাল মিডিয়ার আলোচনায় উঠে আসে।

জিআই হচ্ছে কোনো সামগ্রী ব্যবহার করার বিশেষ নাম বা চিহ্ন। এই নাম বা চিহ্ন নির্দিষ্ট সামগ্রিক ভৌ গোলিক অবস্থিতি বা উৎস (যেমন একটি দেশ, অঞ্চল বা শহর) অনুসারে নির্ধারণ করা হয়। ভৌগোলিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সামগ্রিক নিদিষ্ট গুণগত মানদন্ড বা নির্দিষ্ট বিশেষত্ব নিশ্চিত করে।আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে।

চলতি বছর জানুয়ারী মাসের ৪ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক্স অ্যাকাউন্টে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই মর্যাদার বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সম্পদ হিসাবে দাবি করা হয়। এছাড়াও গরদ এবং কডিয়াল শাড়ি, সুন্দরবনের মধু এবং জলপাইগুড়ির কালোনুনিয়া চাল ভারতের জিআই মর্যাদা পাওয়ার বিষয়টি ওই সময় জানানো হয়েছিল। এখন কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

ওই এক্সে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই কৃতিত্বের জন্য বাংলার শাড়ি তাঁতিদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন টাঙ্গাইল ও গরদের শাড়িও বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। আথচ টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি বাংলাদেশ থেকে। টাঙ্গাইল বাংলাদেশের মধ্য উত্তর জেলা এবং এটি টাঙ্গাইল নামের শাড়ির জন্য বিখ্যাত।

ইতিহাস বলছে, ১৮ শতকের শেষের দিকে, টাঙ্গাইলের জমিদার বা জমিদাররা ঢাকা থেকে কিছু মসলিন তাঁতিকে টাঙ্গাইলে বসতি স্থাপন করতে এবং কাপড়ের নতুন বিকাশের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। অনেক তাঁতি টাঙ্গাইলে চলে আসেন এবং শাড়ি উৎপাদন করেন। টাঙ্গাইল শাড়ির একটি সূক্ষ্ম এবং মসৃণ টেক্সচার রয়েছে।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর টাঙ্গাইল এবং বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেক তাঁতী ভারতে চলে আসে। তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছিল মূলত পশ্চিমবঙ্গে। শাস্তিপুরের কাছের ফুলিয়া টাঙ্গাইলের এই তাঁতিদের নতুন আবাসে পরিণত হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ কর্তৃপক্ষ আশা করে যে জিআই স্ট্যাটাস ব্র্যান্ডিং উন্নত করে এবং আরও ভাল দাম এনে এই শাড়িগুলো সঙ্গে যুক্ত তাঁতীদের এবং অন্যদের উপকার করবে।

বুধবার ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে লেখা হয়েছিল টাঙ্গাইল শাড়ি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত, একটি ঐতিহ্যগত হাতে বোনা মাস্টারপিস। এই শাড়ি সূক্ষ্ম টেক্সচার, স্পন্দনশীল রং এবং জটিল জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত। যা এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। প্রতিটি টাঙ্গাইল শাড়িই দক্ষ কারুকার্যের প্রমাণ, নির্বিঘনে ঐতিহ্য এবং কমনীয়তাকে একত্রিত করে।

টাঙ্গাইল জেলার নামে পরিচিত হলেও শাড়িটি পূর্বে বেগম বাহার নামে পরিচিত ছিল।

২০২১ সালে বাংলাদেশে পাঁচটি পণ্য জি-আই বা ভৌগলিক নির্দেশক হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। এ নিয়মে বাংলাদেশে মোট জিআই পণ্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়লো ৯টিতে। নিবন্ধিত জি-আই পণ্যগুলো হল, রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, কালিজিরা চাল, দিনাজপুরের কাটারীভোগ চাল এবং নেত্রকোনার সাদামাটি। এর আগে, বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো জি-আই পণ্য হিসাবে ২০১৬ সালে স্বীকৃতি পেয়েছিল জামদানি। এরপর ২০১৭ সালে ইলিশ, ২০১৯ সালে খিরসাপাতি আম, ২০২০ সালে ঢাকাই মসলিন এবং চলতি বছর ওই ৫টি পণ্যকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
অভিনেতা জয় ও মিষ্টি জান্নাতের চুমুর দৃশ্য কোথায়? বামন চিনি পৈতে প্রমাণ/ বামনী চিনি কি করে বাইডেন ও তার স্ত্রী সম্পদের পরিমাণ কত বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনকুবের, দুবাইয়ে তাদের সম্পদ অভিনেত্রী কঙ্গনার যে বিপুল সম্পদ ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে শুভেচ্ছা জানালো আইপিএল নিলাম তালিকায় মাহমুদউল্লাহ, নেই সাকিব