বিএনপিরাজনীতি

বিএনপির সাবেক চার নেতা দুই কূলই হারালেন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া বগুড়া বিএনপির সাবেক চার নেতা দুই কূলই হারালেন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে শুধু দলীয় নেতাকর্মীর সমালোচনার মুখেই পড়েননি, বরং তাদের বিএনপিতে ফেরার পথ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

পরাজয় ও দলে ফেরার প্রসঙ্গে এসব নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হয়েছে, তা দেশের জনগণ জানেন। তাই এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য নেই তাদের। দলে ফেরার বিষয়টি ভবিষ্যত বলবে।

তবে বগুড়া জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন বলেছেন, দেশের এই অবস্থায় যারা দেশ ও দলের বিপক্ষে গিয়ে সরকারের পক্ষে কাজ কাজ করেছেন, তারা জাতীয় বেইমান। বিএনপিতে তাদের কোনও স্থান নেই।’

দুই কূল হারানো বিএনপির চার নেতা হলেন—বগুড়া-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সদস্য ও জেলা শাখার সাবেক উপদেষ্টা মো. শোকরানা, বগুড়া-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বিউটি বেগম, বগুড়া-৪ আসনের প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সদস্য চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা এবং বগুড়া-৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরকার বাদল। চার জনের মধ্যে দুই জন জামানত হারালেও দুই জন লড়াই করে হেরেছেন।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, বগুড়া-১ আসনে ১০ জন প্রার্থী ছিলেন। আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী সাহাদারা মান্নান ৫১ হাজার ৪৯৪ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী শোকরানা দুই হাজার ৯৮২ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

বগুড়া-২ আসনে সাত প্রার্থীর মধ্যে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ৩৬ হাজার ৯৫২ ভোট পেয়ে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। সাবেক বিএনপি নেত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিউটি বেগম ৩৪ হাজার ২০৩ ভোট পেয়ে জিন্নাহর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

বগুড়া-৪ আসনে ছয় প্রার্থীর মধ্যে ১৪ দলের প্রার্থী জেলা জাসদের সভাপতি একেএম রেজাউল করিম তানসেন ৪২ হাজার ৭৫৭ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন। এখানে সাবেক বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ৪০ হাজার ৬১৮ ভোট পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ডা. মোল্লা বিএনপি নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়েন। কাহালুর তিনদিঘী বাজারে হামলার শিকার হয়ে দুই কর্মীসহ রক্তাক্ত হন। গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। শাজাহানপুরে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়। এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এই প্রার্থীর।

বগুড়া-৭ আসনে ১৩ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের ডা. মোস্তফা আলম নান্নু ৯১ হাজার ২৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার বাদল দুই হাজার ৫৯৩ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এই চার নেতাকে নিয়ে সমালোচনা করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এই চার নেতাকে আওয়ামী লীগ শুধু প্রলোভনই দেখাননি বরং চাপ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করেছে। আওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দিয়ে ‘আম-ছালা’ দুটোই হারিয়েছেন তারা। এখন দলের নেতাকর্মীদের কাছে, জাতীয় বেইমান হিসেবে চিহ্নিত। ভবিষ্যতে তারেক রহমান তাদের বিএনপিতে ফিরতে দেবেন না।

পরাজয় ও দলে ফেরার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. শোকরানা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাকে কোনও ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে নির্বাচনে নেয়নি। স্বেচ্ছায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। কেন পরাজিত হয়েছি, সারা দেশের মানুষ জানে। সারা দেশে যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হয়েছে, এখানেও তাই হয়েছে। নির্বাচনের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করার ইচ্ছে নেই।’ ভবিষ্যতে বিএনপিতে ফেরার ইচ্ছে আছে কিনা জানতে চাইলে শোকরানা বলেন, ‘আগামীতে পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেবো।’

পরাজয়ের বিষয়ে সরকার বাদল বলেন, ‘এবার কীভাবে নির্বাচন ও ফল ঘোষণা করা হয়েছে, তা দেশবাসী জানে। এ ব্যাপারে কিছু বলতে আগ্রহী নই। তবে দলে ফিরবো কিনা, তা ভবিষ্যত বলবে।’

পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করছি, এখন এই ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না উল্লেখ করে ডা. জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, ‘কোনও প্রলোভনে পড়ে নির্বাচনে অংশ নিইনি। তিন জন শক্তিশালী প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছি। আমাকে ২০০১ সালের পর বিএনপির কোনও পদে রাখা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে দলে ফেরার চেষ্টা করবো।’

পরাজয়ের কারণ হিসেবে বিউটি বেগম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেষ মুহূর্তে আমার সঙ্গে বেইমানি করেছেন। আবার বিএনপির একটা অংশ ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দিয়েছে। বিপুল ভোট পেয়েছি। কিন্তু কারচুপি করে আমাকে পরাজিত করা হয়েছে।’

যেসব নেতা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের দলে ফেরানো হবে কিনা জানতে চাইলে বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সরকারের পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের ভবিষ্যতে দলে ফিরিয়ে নেওয়া, না নেওয়া হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত। যেহেতু জনগণ তাদের চায়নি, তাই আমার মনে হয় ভবিষ্যতে তাদের বিএনপিতে ফেরার সুযোগ নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
অভিনেতা জয় ও মিষ্টি জান্নাতের চুমুর দৃশ্য কোথায়? বামন চিনি পৈতে প্রমাণ/ বামনী চিনি কি করে বাইডেন ও তার স্ত্রী সম্পদের পরিমাণ কত বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনকুবের, দুবাইয়ে তাদের সম্পদ অভিনেত্রী কঙ্গনার যে বিপুল সম্পদ ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে শুভেচ্ছা জানালো আইপিএল নিলাম তালিকায় মাহমুদউল্লাহ, নেই সাকিব