বাড়ি বাংলাদেশ নির্বাচন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বির কঠিন চ্যালেঞ্জে ডজনের বেশি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী

শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বির কঠিন চ্যালেঞ্জে ডজনের বেশি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী

1
শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বির কঠিন চ্যালেঞ্জে ডজনের বেশি মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো অংশ না নিলেও নিজের দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ডজনেরও বেশি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। আগের দুই নির্বাচনে দলের ভেতর থেকে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাধা দেয়া হবে না- দলীয় এমন সিদ্ধান্তে নৌকার বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্ররা। আর এতেই দলীয় মনোনয়ন পেয়েও বেশ অস্বস্তিতে হেভিওয়েটরা। স্থানীয়দের ভাষ্য, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকলে এসব আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বড় চ্যালেঞ্জে পড়বেন।

চাঁদপুর-৩ (সদর) আসনে আবারো আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি। এই আসন থেকেই নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শামসুল হক ভূঁইয়া। দলীয় মনোনয়ন পেতে চাঁদপুর-৪ আসনেরও মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেন এই সাবেক এমপি। একটিতেও নৌকার টিকিট না জুটলেও দুটি আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন তিনি। স্থানীয়রা বলছেন, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এ আসনে। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে শামসুল হক ভূঁইয়ার প্রতি।

নিজের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে শামসুল হক ভূঁইয়া বলেছেন, নির্বাচনে শেষপর্যন্ত লড়ে যাবেন তিনি। দীপু মনিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী হওয়ায় সকলেই তাকে হেভিওয়েট প্রার্থী বলতে পারে। কিন্তু আমি তাকে হেভিওয়েট মনে করি না। শামসুল হক বলেন, অনেকে ক্ষমতা হাতে পেয়ে অনেক কিছু করেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে বলতে পারবে না আমি কারোর দুই টাকার চা-পান খাইছি?
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে আবারো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আসনটির গত ১৫ বছরের সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। এ আসনে তৃণমূল বিএনপি’র মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকারসহ ৯ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আলোচনা আছে আসন্ন নির্বাচনে তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে গোলাম দস্তগীর গাজীর। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক বলেছেন, এই আসন থেকে তৃণমূল বিএনপি’র মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচন করছেন যার কোনো নিজস্বকর্মী, সমর্থক ও ভোট নেই। বিএনপি তাকে শত্রু মনে করে আর আওয়ামী লীগ তো ভুল করেও তাকে ভোট দিবে না। ব্যাপক উন্নয়নের কারণে সাধারণ মানুষও নৌকায় ভোট দেবে। তবে তৈমূর আলম বলেছেন, আমি বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় রূপগঞ্জের মানুষকে চাকরি দিয়ে জেল খেটেছি। রূপগঞ্জ আমার জন্মভূমি। এই জায়গার মানুষের সঙ্গে আমার রক্তের বন্ধন। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে বিপুল ভোটে আমি বিজয়ী হবো। স্থানীয় ভোটারদের দাবি, এই আসন নিয়ে নানা হিসাব রয়েছে। এ কারণে জনপ্রিয়তা থাকলেও গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থকরা নির্বাচনকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।

পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-ইন্দুরকানী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন এডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম। তিনি বর্তমান সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। এ আসনে তার শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএমএ আউয়াল। একেএমএ আউয়াল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দুই বারের সাবেক এমপি। ৩ উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ আউয়ালের পক্ষে মাঠে নামায় আগামী নির্বাচনে এ দু’জনের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রীর মাঝে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। দু’জনের কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এই আসনে আবারো নৌকা পেয়েছেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু। তার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী ও সাবেক ফুটবলার আরিফ খান জয়। অনেকের ধারণা, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দু’জনের যে কেউ বিজয়ী হতে পারেন।

ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের টানা দুই বারের এমপি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান আবারো পেয়েছেন নৌকার টিকিট। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ এবং আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন থেকে সদ্য পদত্যাগকৃত ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বর্তমান এমপি এনামুর রহমান। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত এই দুই প্রার্থী নৌকার বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা লড়াইয়ে রয়েছেন।

মেহেরপুর-১ আসনের বর্তমান এমপি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রফেসর আব্দুল মান্নানের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। দলীয় কমিটি গঠন ও স্বজনপ্রীতি এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নসহ নানা অভিযোগে দলের একাংশের মনোনয়নপ্রত্যাশী ডজনখানেক নেতা জোটবদ্ধ হয়েছেন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন- ফরহাদ হোসেন বাদে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষেই ভোট করবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরহাদ হোসেন তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান। তখন ওই অংশের নেতারা তাদের মধ্য থেকে একজন প্রার্থীকে ঢাকঢোল পিটিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী করে নৌকার বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধের ঘোষণা দেন।

লালমনিরহাট-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল হক। আপন ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামানকে সরিয়ে নিজের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বসিয়েছেন। এ কারণে ক্ষুব্ধ ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান। তাই সিরাজুল হককে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ। আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েসেরও সমর্থন রয়েছে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি।

নওগাঁ-১ আসনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও চন্দননগর ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান তোতা। ধারণা করা হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে খাদ্যমন্ত্রী বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে পারেন।

নরসিংদী-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মনোহরদীর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। জানা গেছে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) নূর উদ্দিন খানের ভাতিজা হওয়ায় সাইফুলকে সমর্থন দিয়েছেন অনেকে।

গাজীপুর-১ আসনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে লড়ছেন দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম।

গাজীপুর-২ আসনে রয়েছেন শক্তিশালী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলিম উদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম। এ আসনে (গাজীপুর-২) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে গাজীপুরের এই দুই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী চ্যালেঞ্জে পড়বেন।

রাজশাহী-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন শক্তিশালী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাহেনুল হক রায়হান। তিনি সাবেক দলীয় সংসদ সদস্য।
নাটোর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছেন। তার আসনে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন শফিকুল ইসলাম শফিক। তিনি দু’বারের উপজেলা চেয়ারম্যান।

জামালপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল। এখানে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন সাজাহান আলী মণ্ডল। তিনি ঢাকার বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগ নেতা। এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাবও রয়েছে।

হবিগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ব্যারিস্টার সুমন এলাকায় নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এলাকার মানুষের দাবি সুষ্ঠু ভোট হলে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।