বাড়ি ঢাকা নারায়ণগঞ্জ সন্তান হারানোর শোকে পাগলপ্রায় শাওন প্রধানের মা ফরিদা বেগম

সন্তান হারানোর শোকে পাগলপ্রায় শাওন প্রধানের মা ফরিদা বেগম

0
সন্তান হারানোর শোকে পাগলপ্রায় শাওন প্রধানের মা ফরিদা বেগম

আজ বৃহস্পতিবার বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন শাওন। তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের পূর্ব গোপালনগর গ্রামে। মৃত সাহেব আলীর চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে শাওন সবার ছোট।

ছয় বছর আগে স্বামী সাহেব আলীকে হারিয়েছেন ফরিদা বেগম (৫৬)। সেই শোক না ভুলতেই দুই বছর আগে মারা যান ক্যানসারে আক্রান্ত মেয়ে হেনা আক্তার। এর এক মাসের মাথায় ‘আত্মহত্যা’ করেন ফরিদার বড় ছেলে মো. লিটন। স্বামী, মেয়ে আর এক ছেলে হারানো ফরিদার সবচেয়ে আদরের ছিল সংসারের সবার ছোট শাওন প্রধান (২০)। সেই শাওনকে হারিয়ে ফরিদার আহাজারি থামছে না।

শাওনের মামার সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘শাওন কোনো রাজনীতি করত না। অস্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর বাড়ির পাশের একটি ইজিবাইক কারখানায় কাজ করত। সকালে শহরে কাজ করতে গেছিল। পুলিশ–বিএনপির সংঘর্ষে ওর বুকে গুলি লাগছে বলে শুনছি।’

শাওনের সহকর্মী  হাবিবুল্লাহর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল নয়টায় তাঁরা কাজে যোগ দেন। বৃহস্পতিবার শাওনের কারখানায় যাওয়ার কথা থাকলেও শাওন যাননি।

শাওনের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাওনদের সীমানাপ্রাচীর ঘেরা বাড়ির ভেতরে একতলা ছোট ভবন।প্রধান ফটক ধরে এগিয়ে যেতেই অপরিচিত দেখে পথ আগলে দাঁড়ান মাঝবয়সী এক লোক। পরিচয় জানতে চান। সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে বলেন—বাড়িতে কেউ নেই, সবাই হাসপাতালে। কেউ কথা বলতে চান না।

এ সময় পেছন থেকে এক নারীর বুকফাটা আর্তনাদ কানে এসে ঠেকে। কাছে গিয়ে দেখা যায় মাটিতে লুটিয়ে বিলাপ করছেন তিনি। বলছেন, ‘বাবায় রাইতে বাড়ি আইতে দেরি হইলে ফোন কইরা বলত, আমি আইসা ডাক দিমু মা, তুমি যাইগা থাইকো। কই বাবায় তো এহনো আইল না। বাবারে যদি আল্লায় ভালায় ভালায় নিয়া যাইত তইলে মানতাম। আমার পুতে তো গুলি খাইয়া মরার কথা না। এডা কী হইল? হায়রে খোদা, আমার পুতেরে জানি কেমনে মারছে। পুতে কী মরার আগে মায়রে খুঁজছে, কয়বার জানি ডাক দিছে মাগো…কইয়া।’

উপস্থিত লোকজন জানালেন, এই বৃদ্ধাই নিহত শাওনের মা ফরিদা বেগম। কাঁদতে কাঁদতেই এবার পাশে থাকা বোন জমিলা বেগমের কাঁধে মাথা রাখেন। যেন চিৎকার করারও ভাষা হারিয়েছেন। ফরিদার কান্না দেখে চারদিকে ভিড় করে থাকা প্রতিবেশীরাও কাঁদছেন। কেউ তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।

এরই মধ্যে বাড়িতে পৌঁছান শাওনের বড় বোন শিল্পী বেগম। কোলের ছেলেকে এক রকম ছুড়ে দিয়ে মা ফরিদাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। ভাইয়ের শরীরে গুলি লেগেছে শুনে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ শ্বশুরবাড়ি থেকে ছুটে এসেছেন। মৃত্যুর খবর জানতেন না। মায়ের মুখেই জানতে পারেন আদরের ভাই গুলিতে নিহত হয়েছেন। শিল্পী চিৎকার করে ওঠেন, ‘ও আল্লাহ আর কত, আর কত আল্লাহ?’

শাওনের বাড়িতে ততক্ষণে আশপাশের লোকজনের ভিড় বড় হয়েছে। পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা শাওনের মৃত্যু নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না। প্রতিবেশীরা নিজেদের মধ্যে চাপা স্বরে আলাপ করেন। তাদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাওনের লাশ দেখেছেন। সে কথাই বলাবলি করেন।

বাড়ির প্রধান ফটক পার হয়ে ফেরার পথেও ভেতর থেকে ফরিদার আর্তনাদ কানে আসে। তার ছেলের বুকে গুলি লেগেছে। যে বুক থেকে পরম মমতায় আসা ‘মা’ ডাক ফরিদার স্বামী আর সন্তান হারানোর যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিত।

বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ