বাড়ি অর্থ ও বাণিজ্য কুয়াকাটায় পর্যটনের সম্ভাবনা বেড়েছে, কিন্তু সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি

কুয়াকাটায় পর্যটনের সম্ভাবনা বেড়েছে, কিন্তু সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি

0
কুয়াকাটায় পর্যটনের সম্ভাবনা বেড়েছে কিন্তু সুযোগ সুবিধা বাড়েনি

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় পর্যটনের সম্ভাবনা বেড়েছে। কিন্তু পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা তেমন বাড়েনি। মানসম্মত আবাসিক হোটেল ও স্বাস্থ্যসম্মত রেস্তোরাঁর অভাব রয়েছে। কুয়াকাটা পৌরসভার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোও কাঁচা রয়ে গেছে।

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত দক্ষিণাঞ্চলে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত। সমুদ্রসৈকতটি লম্বায় ১৮ কিলোমিটার ও প্রস্থ আধা কিলোমিটার। এ সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।

সম্প্রতি ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসেন এস এম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সড়কপথ পাড়ি দিয়ে যখন কুয়াকাটায় পা দিই, তখন হতাশ হতে হয়। কুয়াকাটার প্রধান সমস্যা হচ্ছে সৈকতের চরম দুরবস্থা। সৈকতটি সাগরের ঢেউয়ে ভেঙে ক্রমে ছোট হয়ে গেছে। যখন জোয়ার হয়, তখন সৈকতে হাঁটার জায়গা থাকে না। তা ছাড়া নোংরা-আবর্জনায় যত্রতত্র সৈকতের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।’

আগের তুলনায় কুয়াকাটায় পর্যটকের উপস্থিতি বাড়ছে বলে মনে করেন পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীরা। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে বছরে কুয়াকাটায় ১২-১৫ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটত।

গত ২৫ জুলাই পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। গত এক মাসে প্রায় দেড় লাখ পর্যটক কুয়াকাটায় এসেছেন। এই সময়ে কুয়াকাটায় তেমন একটা পর্যটক থাকেন না। সেদিক থেকে পর্যালোচনা করলে গত এক মাসের চিত্র খুবই সন্তোষজনক। কুয়াকাটার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। এখন বছরে কুয়াকাটায় ২২-২৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করবেন বলে তাঁরা আশা করছেন।

২০১০ সালে কুয়াকাটা পৌরসভায় উন্নীত হয়। এটি তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভা। সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র হলেও এখানকার অধিকাংশ সড়ক কাঁচা পড়ে রয়েছে। বিশেষ করে কুয়াকাটা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের খাজুরা গ্রামের ওয়ারকা পল্লির পূর্ব পাশ থেকে ফাঁসিপাড়া গ্রাম পর্যন্ত সড়ক, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইলিশ পার্ক থেকে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ পর্যন্ত সড়ক ।

মনির শরিফের বাড়ি থেকে কম্পিউটার সেন্টার পর্যন্ত সড়ক, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফজলুল হক খানের বাড়ি থেকে গুচ্ছগ্রাম পর্যন্ত সড়ক, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুর রশিদ মোল্লার বাড়ির সামনে থেকে শাহজাহান মৃধার বাড়ি পর্যন্ত সড়ক, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পর্যটন পুলিশের কার্যালয় থেকে ফকিরবাড়ি পর্যন্ত সড়ক।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল মন্নান হাওলাদারের বাড়ি থেকে দক্ষিণ দিকের পাঞ্জুপাড়া মসজিদ পর্যন্ত সড়ক, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পাঞ্জুপাড়া গ্রাম থেকে লেকের পার হয়ে দোভাষীপাড়া গ্রামের নির্মাণাধীন সেতু পর্যন্ত সড়ক এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হোসেনপাড়া গ্রাম থেকে মুসল্লীয়াবাদ মাদ্রাসার পশ্চিম পাশ পর্যন্ত সড়কটি পুরোপুরি কাঁচা পড়ে রয়েছে।

কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। পৌরসভার অভ্যন্তরীণ সড়ক উন্নয়ন, হোটেল-মোটেলের সেবার মান বাড়ানো, ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা উন্নতির জন্য কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ধীরে ধীরে সব ধরনের বাধা দূর হবে।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, এখানে অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত হোটেল-মোটেল আছে ৭৪টি। এর বাইরে আছে ৫৬টি হোটেল-মোটেল। প্রথম শ্রেণির হোটেল রয়েছে ১০-১৫টির মতো। এসব হোটেল বহু আগে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেই।

মোতালেব শরীফ আরও বলেন, সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনাও বাড়ছে। এখন যাঁরা হোটেল-মোটেল তৈরি করার উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাঁরা হোটেল ব্যবস্থাপনায় বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তুলছেন। আর পুরোনো হোটেলগুলোর মালিকরাও কেউ কেউ হোটেলের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় পরিবর্তন আনার চিন্তা করছেন।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুম্মান ইমতিয়াজ বলেন, সাগর-প্রকৃতি, জেলেদের জীবন ব্যবস্থাপনাসহ কুয়াকাটার সবকিছুই পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়। অথচ কুয়াকাটার অভ্যন্তরীণ সড়ক ব্যবস্থাপনা সেভাবে গড়ে না ওঠায় পর্যটনকে বাধাগ্রস্ত করছে। পর্যটকেরা ঘুরে বেড়াবেন, ছোটাছুটি করবেন, সে পরিবেশ নেই। যার কারণে সবাই হতাশ হয়। পর্যটনকে সমৃদ্ধ করতে হলে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।

অনেক রেস্তোরাঁয় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নেই। প্রায় সময় এসব রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া পর্যটকদের থাকার জন্য ১৫০টির বেশি হোটেল-মোটেল রয়েছে। এর মধ্যে তিন তারকা হোটেল আছে মাত্র দুটি। বাকি হোটেলগুলোর কক্ষ ব্যবস্থাপনা, হোটেলের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বাংলা ম্যাগাজিন এস/কে