বাড়ি অর্থ ও বাণিজ্য ৩০০ টাকা মজুরি না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেন চা শ্রমিকরা

৩০০ টাকা মজুরি না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেন চা শ্রমিকরা

0
৩০০ টাকা মজুরি না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেন চা শ্রমিকরা

সর্বশেষ বৈঠকে মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হয়েছে চা শ্রমিকদের দৈনিক বেতন। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত মানছেন না শ্রমিকরা। দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন তারা।

আজ রবিবারও দেশের বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করে সড়কে সমাবেশ করেন।এ সময় তারা ৩০০ টাকা মজুরি না হলে কর্মস্থলে ফিরবেন না বলেও ঘোষণা দেন।বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে। ’

এদিকে হবিগঞ্জের মাধবপুরের চা শ্রমিকরা একই দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। রবিবার বেলা ১১টা থেকে লস্করপুর ভ্যালির প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক বিভিন্ন যানবাহনে জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান করেন। অবরোধে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ চার ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা।

রবিবার মৌলভীবাজারের মৌলভী চা বাগান, কমলগঞ্জ উপজেলার চম্পারায় চা বাগান, মৃত্তিঙ্গা চা বাগান, শমশেরনগর চা বাগান ও আলীনগর চা বাগান এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শ্রমিকরা। অন্যদিকে অনেক চা বাগানে রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় তারা ধর্মঘটে যাননি।

খাইছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি পুষ্প কুমার কানু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পাঁচ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জেনেছি, সেটা মানা সম্ভব নয়। আমরা ৩০০ টাকার নিচে মানব না। ’

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানাই। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর বিভিন্ন চা বাগান থেকে পঞ্চায়েত কমিটি ও ভ্যালি কমিটির নেতারা আমাদের ফোন দিয়ে জানান, ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে নেবেন না জানিয়ে শ্রমিকরা বাগানে বাগানে আন্দোলন শুরু করেছেন। তাই আমরা শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। ’

২৩ আগস্টের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে পরদিন থেকে কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে টানা ধর্মঘটের কারণে চা শ্রমিকদের মধ্যে খাদ্যসংকট, সাপ্তাহিক রেশন, এনজিওদের কিস্তি পরিশোধ না করতে পারাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভুরভুরিয়া চা বাগানের মেরী ভূঁইয়া বলেন, ‘এফআইভিডিবি থেকে ১০ হাজার টাকা কিস্তি নিয়েছিলাম। সপ্তাহে ৩৫০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। এখন কাজ নাই, কী যে করি। ’

অবরোধ চলাকালে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন লস্কর ভ্যালি সভাপতি রবীন্দ্র গৌড়, লালন পাহান, খোকন পানতাঁতী, প্রদীপ কৈরি, মোহন রবিদাস, ধনা বাউড়ি খায়রুন নাহার, লক্ষ্মীচরণ প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, এর আগে চলতি বছরের জুন মাসে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের বৈঠক হয়। সেখানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন শ্রমিক নেতারা। কিন্তু মালিকপক্ষ ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়।

যে কারণে শ্রমিক নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর আরো এক মাস পার হয়ে যায়। মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এর প্রতিবাদে ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে ধর্মঘট পালন করেন চা শ্রমিকরা। তার পরও মালিকপক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলায় ১৩ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সব চা বাগানে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে