বাড়ি অপরাধ প্রতারণার অর্থে আলিশান বাড়ি-জমি,মাছের ঘের, নামে-বেনামে ব্যবসা

প্রতারণার অর্থে আলিশান বাড়ি-জমি,মাছের ঘের, নামে-বেনামে ব্যবসা

0
প্রতারণার অর্থে আলিশান বাড়ি জমি মাছের ঘের নামে বেনামে ব্যবসা 1

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতারক বিন ইয়ামিনের ময়মনসিংহে রয়েছে ৫ তলা ২টি বাড়ি। রয়েছে ১০ বিঘা জমির উপর মাছের ঘের। সব কিছুই হয়েছে প্রতারণার অর্থে। আর এ অর্থে বিলাসী জীবন ছিল তাদের  প্রতারণার কৌশল হিসেবে  ভিআইপি ব্যক্তিদের পুরাতন  মোবাইল নম্বরগুলো টার্গেট করতো তারা।

তাদের পেশা প্রতারণা। আর প্রতারণার অর্থে গড়ে তুলেছে আলিশান বাড়ি-জমি, মাছের ঘের, নামে-বেনামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এরা ভুয়া ডিবি প্রতারক চক্র। তাদের টার্গেট ভিআইপিরা। সম্প্রতি এ চক্রের দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য  বেরিয়ে আসে।

তাদের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া ডিএমপি’র ভাটারা থানার ২০১৮ সালে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। মামলা নম্বর-১৫/৫৯০। উত্তরা পশ্চিম থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। নম্বর-৪১/৩৩৪। চলতি বছরের ৯ আগস্ট কদমতলী থানায় মামলা হয়। মামলা নম্বর-১২।

এছাড়া শাহজাহানপুর, গুলশান, বনানী থানায়ও মামলা রয়েছে। এ বিষয়ে মহানগর  গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, প্রতারক বিন ইয়ামিন ও তার সহযোগী নিজেদের মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভিআইপি এবং সাধারণ মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ টাকা এবং কখনো তার বেশি আদায় করতো। প্রতারণার অর্থ দিয়ে তারা রাজধানী এবং এর পার্শ্ববর্তী জেলায় আলিশান বাড়ি এবং ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছিল।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে তারা বাড়ির আশপাশের বিভিন্ন গাছে সিসিটিভি ভিডিও ক্যামেরা স্থাপন করে। এতে করে তারা পুলিশের উপস্থিতি  টের পেলে ঘটনাস্থল থেকে খুব দ্রুত পালিয়ে যেতে পারবে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানী এবং ময়মনসিংহে অস্ত্র, প্রতারণা, মাদক, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট ৯টি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে।

টার্গেট নম্বরগুলো হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ফেসবুক-এ সার্চ দিয়ে ফ্যামিলি হিস্ট্রি জেনে নেয়। আসামি বিন ইয়ামিন নিজেকে ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার পরিচয় দিয়ে ফোন করে তার  ছেলে কিংবা মেয়ে পুলিশের হাতে আটক আছে বলে জানায়। ছেলে থাকলে বলে সে ইয়াবা নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে। তাকে ছাড়াতে হলে এখনই বিকাশ কিংবা নগদে এক লাখ টাকা পাঠাতে হবে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট এই জরিমানা ধার্য্য করেছে। অন্যথায় তাকে কোর্টে চালান করে দেয়া হবে।

আর মেয়ের ক্ষেত্রে পরিবারকে বলা হয়, তাদের মেয়ে অসামাজিক কাজ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। দ্রুত বিকাশ কিংবা নগদে টাকা না পাঠালে মেয়েকে গণধর্ষণ করা হবে। এ সময় ভিকটিম আতঙ্কিত হয়ে হয়ে দ্রুত বিকাশ কিংবা নগদে টাকা পাঠিয়ে দেয়।

পরিবার থেকে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তখন মেয়ের মতো অভিনয় করে আম্মু-আব্বু বলে চিৎকার করতে থাকে। টাকা পাঠানোর পর ফের ফোন করে বলা হতো সাংবাদিকরা ঘটনাটি ভিডিও করেছে। সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার কথা বলে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতো। এছাড়া ডিবি’র এডিসি পরিচয়ে বিন ইয়ামিন আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতো।

ঢাকা মহানগর  গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর ও ময়মনসিংহে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলি, সিসি ক্যামেরা, মনিটর, ডিভিআর, নগদ ২০ হাজার টাকা এবং  ফেনসিডিলসহ সম্প্রতি বিন ইয়ামিন ও সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়,বেশকিছু দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভুয়া ডিবি’র পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে আতঙ্কিত করে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। ভুয়া ডিবি’র এ তৎপরতায় ঢাকার বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি ও মামলা হয়েছে।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বিভিন্ন সোর্স ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করে গত ১৬ই আগস্ট রাতে রাজধানীর বনানী থানা এলাকা থেকে বিন ইয়ামিন ও সাইফুলকে  গ্রেপ্তার করে। বিন ইয়ামিনের বিকাশ, নগদ নম্বরের স্টেটমেন্ট পর্যালোচনা করে  দেখা যায় তার ব্যবহৃত বিকাশ একাউন্ট নম্বরে ০১৭০৭-৫৯৪৫২৯ এ ৮১ লাখ ৯১ হাজার ৭৯৮ টাকা এবং একই নম্বরে নগদে ২৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৬০ টাকা এবং আরেকটি বিকাশ নম্বর ০১৭২৭-০৭৮১৯৭ এ ৮ লাখ ৩৮ হাজার ৭৩৫ টাকাসহ  সর্বমোট ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে