বাড়ি অর্থ ও বাণিজ্য বিক্রি কমেছে, দাম বেড়েছে

বিক্রি কমেছে, দাম বেড়েছে

12
gdfgdfg

শুল্কায়ন বৈষম্য ও অতিরিক্ত শুল্কহারের কারণে সংকটের মুখে পড়েছে দেশে আমদানি করা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা। বিশেষ করে জাপান থেকে বিভিন্ন মডেলের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১২৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কায়ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে।

অতিরিক্ত হারে শুল্কারোপ করায় অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্রেতাদের নতুন আমদানি করা গাড়ির চেয়েও বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। ফলে সংকটের মুখে পড়েছেন গাড়ি আমদানিকারক ও ভোক্তারা।রিকন্ডিশন্ড গাড়ি হচ্ছে স্বল্প সময় ব্যবহৃত নতুন গাড়ি, যা মূলত সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ি হিসেবে পরিচিত।

তবে মানসম্পন্ন হওয়ায় ও রি-সেল ভ্যালু থাকায় দেশে এসব গাড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে এ খাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ কমেছে। তার ওপর আছে অতিরিক্ত শুল্কায়ন। ফলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম বেশি পড়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানিকারক-ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা হতাশ হচ্ছেন। পাশাপাশি জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।গাড়ি ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় দেশে জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি শুরু হয়। ব্যবহারের পরও বিক্রয় মূল্যমান বজায় থাকা, গুণগতমান, জ্বালানিসাশ্রয়ী হওয়া প্রভৃতি কারণে জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়।

আর মূল্য অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় ভোক্তাদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পায় এসব গাড়ি।জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর সরকার রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বিকিকিনি থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করছে। বর্তমানে এসব গাড়ি আমদানির কার্যক্রমে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে আমদানি করা রিকন্ডিশন্ড গাড়ি মূলত জাপান থেকে আমদানি করা হয়। সেখান থেকে ৪০-৪৫টি মডেলের প্রাইভেট কার ও বিভিন্ন মডেলের গাড়ি বাংলাদেশে আমদানি হয়ে থাকে। আমদানি করা এসব গাড়িতে কমপক্ষে প্রকৃত মূল্যের ওপর ১২৭ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ শুল্ক হার ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ফলে একটি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি মূল্য দিয়ে তা ক্রেতাকে কিনতে হয়।এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক দেশে নির্দিষ্ট শুল্ক আরোপের নজির রয়েছে। আছে সিসি ও মোটরযানের প্রকারভেদে নির্দিষ্ট শুল্ক (স্পেসিফিক ডিউটি) আরোপ করার সুযোগও।এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকেরা বিদ্যমান শুল্কবৈষম্য কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে দাবি জানিয়েছিলেন।

বাজেটে বিবেচনার জন্য অবচয় হার পুনর্নির্ধারণ, সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্কের হার পুনর্বিন্যাস, ফসিল ফুয়েল গাড়ি (সম্পূরক শুল্ক), রিকন্ডিশন্ড গাড়ির সংজ্ঞা নির্ধারণ, অবচয় দেওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ির বয়স গণনা পদ্ধতি সংশোধন, বেশিসংখ্যক যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার, পাবলিক ট্রান্সপোর্টের আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেন তাঁরা।

তবে শেষ পর্যন্ত বাজেটে সরকার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।বারভিডার সভাপতি এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক পরিচালক আব্দুল হক  বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন কারণে দেশে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির ব্যবসা বেশ সংকটের মুখে রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন গাড়ির চেয়েও এসব পুরোনো গাড়ির শুল্ক হার বেশি। তিনি বলেন, ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির মূল্য নির্ধারিত হয় আমদানিকারকের ঘোষিত মূল্যের ভিত্তিতে। এ প্রক্রিয়ায় আন্ডার ইনভয়েসিং এবং বিভিন্ন ফাঁকফোকর তৈরি করে শুল্ক ফাঁকির প্রবণতা লক্ষণীয়।

বৈষম্যের কারণে নতুন গাড়ির চেয়ে পুরোনো গাড়ির মোট কর বেশি দাঁড়াচ্ছে। রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্ক বেশি হওয়ায় এ গাড়ির বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে।আব্দুল হক আরও বলেন, বর্তমানে এ খাতে উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ৭০০। এ খাতে আমদানি পর্যায় থেকে ভোক্তাদের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

বর্তমান সংকট নিরসনে পুরোনো গাড়িতে ৫ বছরের জন্য অবচয়ন সুবিধা এবং তার ৪৫-৫০ শতাংশ নির্ধারণ ও বৈষম্যহীন শুল্কনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। তাঁর মতে, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে এ বৈষম্য নিরসন জরুরি।