বাড়ি এক্সক্লুসিভ দুদক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সহকর্মীরা

দুদক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সহকর্মীরা

0
দুদক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সহকর্মীরা

চট্টগ্রামে একের পর এক দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আলোচিত দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন তার সহকর্মীরা। তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানান মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা। একইসঙ্গে প্রশাসনিক নানা হয়রানি বন্ধের দাবি জানানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর দুদকের সামনে এ মানববন্ধন হয়। 

তার অব্যাহতি নিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি দুদকের কোনো কর্মকর্তা। তবে শরীফ চাকরিচ্যুতির আগে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাননি বলে নিশ্চিত করেছেন। অথচ, চাকরি বিধিমালা অনুসারে অপসারণের আগে নোটিশ দেয়া বাধ্যতামূলক।

চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনের সময় শরীফ উদ্দিন ২০২১ সালের ১৬ জুন হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অর্ন্তভুক্ত করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালকসহ ইসির চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। 

ওই বছর ১৫ জুন রোহিঙ্গা নাগরিকদের অবৈধ উপায়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণের ঘটনায় ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেলসহ ৬ জন এবং ১২ জুন ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইল বালিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। 

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, স্বাধীন সংস্থা হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তারা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যার বলি হয়েছেন উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দীন। তারা দাবি করেন, চট্টগ্রামে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ৫২টি মামলা করায় তাকে বদলি করা হয়েছিল পটুয়াখালীতে।  

বুধবার দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি নিশ্চিত যায়। আদেশে বলা হয়, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৫৪ (২) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. শরীফ উদ্দীন, উপ-সহকারী পরিচালক, দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যক্রম, পটুয়াখালীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’ এই আদেশ ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

গত বছরের ১৬ জুন দুদক পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে মো. শরীফ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। শরীফের রহস্যময় এমন বদলি জন্ম দেয় নানা প্রশ্নের। 

আলোচিত দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফের এ বদলিকে স্বাভাবিক চোখে দেখেননি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনকারী সংগঠকসহ বিশিষ্টজনরা। তার আকষ্মিক বদলি নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। 

১০ জুন দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ প্রদান করায় সাবেক প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলামের (বিএসসি) বড় ছেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মো. মুজিবুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. মজিবুর রহমান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় আসেন শরীফ উদ্দিন। 

এ মামলায় মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান ও সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলমকে গ্রেপ্তারও করে দুদক। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।এছাড়া ২০২১ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে সংলগ্ন কলাতলী বাইপাস রোড এলাকায় পিবিআই অফিস তৈরির জন্য এক একর জমি অধিগ্রহণে জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসে শরীফ উদ্দিনের তদন্তে। 

এ ঘটনাসহ কক্সবাজারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জমি অধিগ্রহণের দুর্নীতিতে জড়িত বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি ও রাজনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়।চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে চট্টগ্রামে নামে দুদক। পরে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও বেশ কয়েকটি মামলাও করেছিলেন শরীফ উদ্দিন।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে খালাসি পদে ১৯ জনকে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক কোটি ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপকসহ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

একই মামলায় দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত খালাসি, ঠিকাদার, স্কুল শিক্ষক, পিয়ন, রেলের ড্রাইভারসহ আরও ৮ জনকে আসামি করা হয়। গত বছরের জানুয়ারিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িত থাকা একজন শীর্ষ দালাল ও সাবেক একজন সার্ভেয়ারকে আটক করেছিলেন তিনি। এভাবে নানা আলোচিত অভিযান পরিচালনা করে আলোচনায় আসে শরীফ উদ্দীনের নাম। কিন্তু এসব আলোচিত অভিযান তার জন্য কাল হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।