বাড়ি অর্থ ও বাণিজ্য ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করতে গেলে নিবন্ধন লাগবে

ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করতে গেলে নিবন্ধন লাগবে

0
ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করতে গেলে নিবন্ধন লাগবে

ই–কমার্স খাতের স্বার্থে নিবন্ধন পদ্ধতিসহ অনেক পদক্ষেপ আগেই নেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু সময়মতো তা না হওয়ায় অসংখ্য মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন।প্রতারণার অভিযোগে অনেক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী এখন জেলের ভাত খাচ্ছেন। এ বাস্তবতায় প্রথম চালু হতে যাচ্ছে ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন (ইউবিআইডি) নম্বর দেওয়ার কাজ। এ জন্য ইউবিআইডি অ্যাপস নামে একটি অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে।

ই–কমার্স খাতের ব্যবসা করতে গেলেই এখন ইউবিআইডি নিতে হবে। আবার ফেসবুক ব্যবহার করে যাঁরা এ খাতের ব্যবসা করবেন, তাঁদেরও আসতে হবে নিবন্ধনের আওতায়।সচিবালয়ে কাল রোববার ইউবিআইডি অ্যাপসটির উদ্বোধন করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ এ সময় উপস্থিত থাকবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এত দিন ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন নেওয়ার পদ্ধতি ছিল না। ফলে কাউকে ধরাও যাচ্ছিল না। এই ফাঁকে অনেক খারাপ ঘটনা ঘটে গেছে। এখন অবশ্য শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে এ খাত।

কোনো ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারিত গ্রাহক কত এবং তাদের পাওনার পরিমাণই–বা কত, সরকার এখনো তা জানে না। তবে তা জানতে গত ২৫ জানুয়ারি কমিটি গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ই–কমার্সের নামে প্রতারণা করে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪১টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার আসামি ১১০ জন এবং গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩৬ জন।

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, পুলিশের সিআইডি, এসবি, ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ডাক অধিদপ্তরসহ মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘কাল রোববার সকালে প্রথমে ডিজিটাল কমার্স ব্যবসার সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করা হবে, তারপর ইউবিআইডি অ্যাপসের উদ্বোধন করা হবে। ই–কমার্স খাতকে অধিকতর শৃঙ্খলায় আনতে আরও কয়েকটি সেবা চালুর কাজ প্রক্রিয়াধীন।’

অনুষ্ঠানস্থল থেকেই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কাল ইউবিআইডি দেওয়া হবে। পরে নিবন্ধন দেওয়ার পুরো কাজ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তর (ডিজেএসসি)। পরিদপ্তর হওয়ার আগে এ প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত নাম ছিল আরজেএসসি। ইউবিআইডির কারিগরি দিক দেখার দায়িত্বে আছে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই)। তিন মাস ধরে কাজ চলার পর সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার জন্য অ্যাপসটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

ইক্যাবের সহসভাপতি মো. শাহাব উদ্দিন আজ বলেন, নিবন্ধন নেওয়া ছাড়া আর ই–কমার্স খাতে ব্যবসা করা যাবে না। এ খাতের সবাইকে এটা মাথায় রাখতে হবে। এ খাতের স্বার্থ বিবেচনায় নিবন্ধন মাশুলও (ফি) নেবে না সরকার। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, এ খাতে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া এখন সহজ হবে।নিবন্ধন ছাড়া কেউ ব্যবসা করলে কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আশা করি, কেউ তা করবেন না। কেউ তা করতে চাইলে তার জন্য ব্যবসা করা সত্যিই কঠিন হয়ে যাবে।’

জানা গেছে, ইউবিআইডির পাশাপাশি নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকলে তা নিষ্পত্তির জন্য চালু করা হচ্ছে সেন্ট্রাল লজিস্টিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিসিএমএস)। এ ছাড়া ‘বিনিময়’ নামে একটি ডিজিটাল আন্তলেনদেন প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজও চলছে।

বিনিময় অ্যাপের মাধ্যমে বিকাশ, নগদ, উপায় বা যেকোনো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) থেকে যেকোনো ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠানো যাবে। এ দুই সেবাও আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। এ দুটির পর চালু করা হবে সেন্ট্রাল লজিস্টিক ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম (সিএলটিপি), তার কাজও চলছে।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিনিময়, সিসিএমএস ও সিএলটিপি পরিপূর্ণভাবে কবে থেকে হবে, সরকারের কোন কোন দপ্তরের মাধ্যমে এগুলো পরিচালিত হবে, গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের ঘটনা কীভাবে সমাধান এবং চলমান সংকট নিরসনে উদ্যোক্তাদের মামলাগুলোর-ই বা কী হবে, এসবের ওপর নির্ভর করবে পুরো ই–কমার্স খাতের শৃঙ্খলা। আগামীকালের বৈঠকেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার বলে মনে করেন একজন উদ্যোক্তা।

নাম না প্রকাশের শর্তে সফলভাবে ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারী একজন উদ্যোক্তা বলেন, যে ডিজেএসসিকে নিবন্ধন দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে বলা হচ্ছে, সেই প্রতিষ্ঠান কাজ করার জন্য কতটুকু সক্ষম, তা–ও যাচাই করতে হবে। আড়াই লাখের বেশি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনদানকারী দপ্তর এই ডিজেএসসি।