বাড়ি অপরাধ দেশে মাদকাসক্ত ৮০ লাখ লোক

দেশে মাদকাসক্ত ৮০ লাখ লোক

0
দেশে মাদকাসক্ত ৮০ লাখ লোক

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশে এখন প্রায় ৮০ লাখ লোক মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। দেশের সব কারাগারগুলোতে বন্দি অর্ধেক আসামি হচ্ছে মাদক সংক্রান্ত মামলার আসামি। মাদক সরবরাহকারীরা যেখানেই ধরা পড়ছে সেখানেই তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে দেশের সব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

মাদকাসক্ত মানেই অপরাধী নয়, সুষ্ঠু চিকিৎসায় তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। মাদকাসক্ত সন্তান একটি পরিবারের জন্য কতটুক পীড়াদায়ক তা শুধুমাত্র মাদকাসক্তের পরিবারই জানে। সারা দেশের প্রায় ৮০ লক্ষ মাদকাসক্তের জন্য দেশে বর্তমানে যে কয়টি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে তা যথেষ্ট নয়। পুলিশ কল্যাণ ট্রাষ্টের উদ্যোগে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে গড়ে তোলা দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর ডাকে আমরা যেমন জনসাধারণ, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, জনপ্রতিনিধিরা একত্রে হয়ে কাজ করে জঙ্গি দমন করেছি তেমনিভাবে সবাই মিলে মাদক নিয়ন্ত্রণে এখন একত্রে কাজ করবো। বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকায় পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র ওয়েসিস উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন। তিনি আরও বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের একত্রে কাজ করতে না পারলে আমাদেরকে হোঁচট খেতে হবে। মাদক আমাদের দেশে তৈরি হয় না।

বৃহস্পতিবার (৭ই অক্টোবর) জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নামক অত্যন্ত মনমুগ্ধকর ও নান্দনিক পরিবেশে উন্নত ব্যবস্থাপনায় দেশের সবচেয়ে অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলো।

মাদক একটি ভয়ঙ্কর নেশা। তাই পরিবার, সমাজ ও দেশকে বাঁচাতে হলে আমাদের সবাইকে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে করোনা রোগীর শনাক্তের শতকরা হার ২.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এতে আত্মতুষ্টি হওয়ার কিছু নেই।প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একদিনে ৮০ লাখ লোককে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। এখন হাসপাতালগুলোতে শতকরা ৯০ ভাগ আইসিইউ বেড খালি আছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ অনেক কাজ করেছে।

মাদকাসক্ত কেন্দ্র উদ্বোধন উপলক্ষে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও বাংলাদেশ পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী (স্থানীয় সাংসদ) নসরুল হামিদ বিপু, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডক্টর আব্দুস সবুর মন্ডল, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অরূপ রতন চৌধুরী, কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

ছেলেদের পাশাপাশি এখন মেয়েরাও মাদকে আসক্ত হচ্ছে। মাদক পরিবারকে ধ্বংস করে, সমাজকে ধ্বংস করে একং জাতিকে ধ্বংস করে। তাই মাদক সমন্ধে আমাদের সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ঢাকা-৩ আসনের মধ্যে দুইটি থানা অবস্থিত। অথচ ঢাকা-২ আসনের মধ্যে একটি থানাও নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই কলাতিয়া এলাকায় আরও একটি নতুন থানা স্থাপনের জন্য তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানান। 

সভাপতির বক্তব্যে পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, কিছুদিনের মধ্যে মানিকগঞ্জে আরও একটি অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেখানে ইতোমধ্যে ১০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। আরও জমি কেনা হবে। ওই কেন্দ্রটিতে সুইমিং পুল এবং গার্ডেনসহ নানা ধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে।

সম্পূর্ণ অলাভজনক সাততলাবিশিষ্ট ৬০ শয্যার এই মাদকাসক্ত কেন্দ্রটিতে মোট ২২টি কক্ষের ১৬টিতে ৪৬টি শয্যা থাকছে পুরুষদের জন্য, বাকি ছয়টি কক্ষে ১৪টি শয্যা নারীদের জন্য,কেবিন ছাড়াও জেনারেল বেডের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও ভবনের ছাদে সকাল সন্ধ্যা ইয়োগা ও মেডিটেশন করার জন্য সুসজ্জিত বাগান, পাশেই রয়েছে জিমনেসিয়াম, ষষ্ঠ তলায় নার্সিং স্টেশন, পঞ্চম তলায় ইনডোর গেম ও লাইব্রেরী, চতুর্থ এবং তৃতীয় তলায় সাধারণ ওয়ার্ড, কেবিন ও ডাইনিং এর ব্যবস্থা দ্বিতীয় তলায় প্রশাসনিক ভবন প্যাথলজি ল্যাব সহ আধুনিক আন্তর্জাতিক মানের সমস্ত ব্যবস্থা রয়েছে এই হাসপাতাল টিতে এমনটি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার ডা. এসএম শহীদুল ইসলাম।

এছাড়াও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে প্রায়ই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে তাই পুরো ভবনটিকে সিসি ক্যামেরার আয়ত্তে আনা হয়েছে কেউ যাতে আত্মহত্যা না করতে পারে সে জন্য বাথরুম ও ঘরের দরজায় কোন ধরনের ছিটকিরি ব্যবহার করা হয়নি। পুরো ভবনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আধুনিক কিছু ফ্যান লাগানো হয়েছে যা সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজনের বেশি সেখানে ঝুলালে ফ্যানগুলো উপর থেকে খসে পড়বে তাই এখানেও আত্মহত্যা করার কোনো সুযোগ নেই।

মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রটির অন্যতম চমক হচ্ছে গ্যাস ক্রমোটোগ্রাফি মেডিকেল ইকুইপমেন্ট। এই মেশিনের মাধ্যমে রক্ত ও প্রসাব ছাড়াও চুল থেকেও ডোপ টেস্ট করে তিন মাস আগেও কেউ মাদক সেবন করে থাকলে তা ধরা পড়বে।