অপরাধকক্সবাজারবাংলাদেশ

রোহিঙ্গা শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন তিনি।

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ইস্ট-ওয়েস্ট ১ নম্বর ব্লকে তার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মুহিবুল্লাহকে হত্যার জন্য রোহিঙ্গারা উগ্রবাদী সংগঠন আরসা’কে দায়ী করেছেন।

ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ মুহিবুল্লাহকে উদ্ধার করে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আরেক নেতা মোহাম্মদ জোবাইর বলেন, ‘কে বা কারা আমাদের নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে জানি না। এ ঘটনায় আমরা শঙ্কিত। তিনি নিহত হওয়ার পর উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, এশার নামাজের পর লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে এআরএসপিএইচের কার্যালয়ে বসে কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে গল্প করছিলেন মুহিবুল্লাহ। এ সময় আল-ইয়াকিন নামে রোহিঙ্গাদেরই একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্য এসে পরপর পাঁচটি গুলি করে পালিয়ে যায়। মুহিবুল্লাহর বুকে তিনটি গুলি লাগে।

মুহিবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মুহিবুল্লাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। বিষয়টি মুহিবুল্লাহ তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছিলেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনবিরোধী একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মুহিবুল্লাহকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।

২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ফুটবল মাঠে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার গণহত্যাবিরোধী যে মহাসমাবেশ হয়েছিল, তা সংগঠিত করেছিলেন মুহিবুল্লাহ। ৪৮ বছর বয়সী মুহিবুল্লাহকে রোহিঙ্গারা ‘মাস্টার মুহিবুল্লাহ’ বলে ডাকত। মিয়ানমারে থাকতে তিনি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। গণহত্যাবিরোধী ওই সমাবেশ বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছিল। ওই সমাবেশে মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের নাগরিত্ব প্রদান, নিরাপত্তা, রাখাইনে ফেলে আসা জন্মভিটা ফেরতসহ সাত দফা পূরণ না হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এখনো ওই দাবিতে অনড় রয়েছে রোহিঙ্গারা।

২০১৯ সালের ১৭ জুলাই রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ। সে সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, ‘আমরা (রোহিঙ্গারা) দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাই।’

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় আট লাখ রোহিঙ্গা। সেই সময় বাস্তুচ্যুত অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এ দেশে এসেছিলেন মুহিবুল্লাহ।

মুহিবুল্লাহ মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু এলাকার লংডাছড়া গ্রামের মৌলভি ফজল আহমদের ছেলে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে মংডু টাউনশিপের সিকদারপাড়া গ্রাম থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। আশ্রয় নেন কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কিছু সংগঠন কাজ করলেও মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত এআরএসপিএইচ সংগঠনটি বেশ শক্তিশালী। মুহিবুল্লাহর সংগঠনে ৩০০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত একটি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল।

Back to top button