বাড়ি এক্সক্লুসিভ বন্ধুর জানাজায় বন্ধু সুধীর বাবু কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন

বন্ধুর জানাজায় বন্ধু সুধীর বাবু কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন

1
বন্ধুর জানাজায় বন্ধু সুধীর বাবু কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন

আমীর হোসেন সওদাগরের ছোটবেলার বন্ধু সুধীর বাবু । কিন্তু মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আমীর হোসেন। বুধবার তার মরদেহ কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে গ্রামের বাড়িতে আনলে বন্ধুকে একনজর দেখার জন্য ছুটে যান সুধীর বাবু।

আকস্মিক মৃত্যু তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি তিনি। হিন্দু ধর্মের হয়েও জানাজার নামাজ থেকে শুরু করে বন্ধুকে কবর দেওয়া পর্যন্ত পাশেই ছিলেন তিনি। বুধবার বেলা ১১টায় তার জানাজা হয়। তারপর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বন্ধুত্ব অমলিন, এই সম্পর্কে নেই জাত কিংবা ধর্মের ভেদ। এই সম্পর্কটি যে কতটা গভীর হতে পারে তারই অনন্য এক উদাহরণ দেখালেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গুণবতীর সুধীর বাবু। তিনি একজন হিন্দু। তার বন্ধু আমীর হোসেন সওদাগর মুসলিম ধর্মের অনুসারী।

বন্ধু হারানোর বেদনায় সুধীর বাবু নামাজ চলাকালীন জানাজাস্থলের পেছনে গাছের গুঁড়িতে বসে চোখের পানি ফেলতে থাকেন। বিষয়টি উপস্থিত সব মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে।তার উপস্থিতি ও কান্না দেখে আগত সব মুসল্লিদের মনে দাগ কেটেছে। প্রকাশ পেয়েছে বন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা।হৃদয়স্পর্শী ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হলে মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।

জানা গেছে, দুই বন্ধু কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের চাপাচো গ্রামের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকে এক সঙ্গে আড্ডা আর খেলাধুলা করে বড় হয়েছে। এক সময় গুণবতী বাজারে ব্যবসা শুরু করেন দুইজন। মুদির দোকান ছিল আমীর হোসেনের। তার পাশেই পান বিক্রি করতেন সুধীর বাবু। সুযোগ পেলেই বন্ধুর দোকানে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতেন। অবসর সময় কাটত বেশ।

জানাজা শেষে উপস্থিত সকলে তার এ অকৃত্রিম ভালোবাসা দেখে আবেগআপ্লুত হন। তার কান্নার সেই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট করা হলে মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। ছড়িয়ে যায় জেলার গন্ডি পেরিয়ে সারা বাংলাদেশে। এমনকি ভারতেও। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বন্ধুত্ব এমনই হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন ফেসবুকে ব্যবহারকারীরা। অনেকে আবার লিখেছেন, সত্যিকারের বন্ধুত্ব আসলেই এমন হয়। যে বন্ধুত্ব জাত দেখে না। ধর্ম দেখে না। ধনী-গরীবের ভেদাভেদ চেনে না।

গুণবতী বাজারের স্থানীয় বাসিন্দা জামাল উদ্দিন টুটুল বলেন, আমির ও সুধীর বাবু দুজনেই খুব ভাল মানুষ। তারা ভাল বন্ধুও ছিলেন। বন্ধুর জন্য বন্ধু এভাবে কান্না করতে কখনও দেখিনি। এমন ঘটনা আমাদের এলাকার সবাইকে অবাক করেছে। সত্যিকারের বন্ধুত্বের বন্ধন কত শক্তিশালী হতে পারে তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সুধীর বাবু।

এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার সুধীর বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেখা গেছে, তিনি তখনও কাঁদছেন তার বন্ধুর জন্য। তার বয়সও পঁচাত্তর পেরিয়েছে। বয়সের ভারে অনেকটা ন্যূজ হয়ে গেছেন। চলতেও পারেন না ঠিকমত। বন্ধু মারা যাবার খবরে ঘরে থাকতে পারেননি তিনি। ছুটে গেছেন বন্ধু আমীর হোসেনের বাড়ি। সেখান থেকে জানাজার স্থান ও পরে কবরস্থান পর্যন্ত যান তিনি। ধর্মীয় কোনো কিছুতে অংশ না নিলেও সব কর্মকাণ্ডেই শেষ পর্যন্ত থাকেন সুধীর বাবু। তিনি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। কথাও বলতে পারেন না ঠিক মতো। মুখের কথাগুলো কেমন যেন জড়িয়ে যায়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক তার ফেসবুক আইডিতে এই ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘আমরা মারা গেলে সুধীর বাবুরা এসে চোখের জল ফেলবে এটাই আমাদের সমাজ এবং দেশ। আর সুধীর বাবুর মৃত লাশের শেষ যাত্রা যদি আমাদের সম্মুখ দিয়ে ঘটে, তবে তার লাশের সম্মানে দাঁড়িয়ে যাব। এটাই ইসলাম, এটাই বাংলাদেশ। সবাই মিলে মিশে থাকি। যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করি। সবার জন্য শুভকামনা।’