বাড়ি Featured News ফেনীর আতঙ্কের নাম ছিনতাইকারী থেকে পৌর কাউন্সিলর হওয়া আবুল কালাম

ফেনীর আতঙ্কের নাম ছিনতাইকারী থেকে পৌর কাউন্সিলর হওয়া আবুল কালাম

1
ফেনীর আতঙ্কের নাম ছিনতাইকারী থেকে পৌর কাউন্সিলর হওয়া আবুল কালাম

পৌর কাউন্সিলর আবুল কালাম , ছোটবেলায় ছিলেন লেদ মেশিনের শ্রমিক। কখনো যাননি স্কুলে। একসময় তরুণ বয়সে জড়িয়ে পড়েন ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে। ১৯৯৬ সালে ভিপি জয়নালের হাত ধরে বিএনপির ক্যাডার হিসেবে রাজনীতির মাঠে আসেন। এরপর ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে হন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক । আর এখন পৌর কাউন্সিলর। ফেনী শহরের উত্তরাংশের আতঙ্কের নাম আবুল কালাম। গত বৃহস্পতিবার রাতে এক গরু ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার পর নতুন করে আলোচনায় আসেন।

ফেনী পৌরসভার কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম সাড়ে তিন বছরে আগেও ছিলেন যুবদলের কর্মী। ছাত্রলীগ নেতা রতন হত্যা মামলারও আসামি ছিলেন। বিএনপি নেতা ভিপি জয়নালের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন কালাম। যুবলীগে যোগ দিয়েই এক বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা বনে যান।

এলাকাবাসী জানায়, ফেনী পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে আবুল কালাম। বাবা ছিলেন বাবুর্চি। ছোটবেলায় কালাম একাডেমি এলাকায় লেদ মেশিন কারখানায় কাজ করতেন। তরুণ বয়সে রেলগেট থেকে সদর হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত এলাকায় সড়কে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে ভিপি জয়নাল তাঁর দলবলসহ বিএনপিতে যোগ দেন। ওই সময় কিছুদিন ভিপি জয়নালের ফলেশ্বর এলাকার বাড়ি দেখভাল করতেন। সেখান থেকে যুবদলের সক্রিয় ক্যাডার। ২০১৮ সালে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। প্রথমে ফেনী পৌর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। চলতি বছর জানুয়ারিতে ফেনী পৌরসভা নির্বাচনে ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

আবুল কালামের রাতারাতি এই উত্থানের পেছনে রয়েছেন ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী । তাঁর হাত ধরেই কালাম আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে ট্রাক বোঝাই গরু নিয়ে ফেনী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুর সাহেব বাড়ির সামনে পৌঁছান কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার সাগুলি গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে গরু ব্যবসায়ী নিহত শাহ জালাল এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা স্থানীয় কাউন্সিলর আবুল কালাম ও তার সহযোগীরা ট্রাকটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। এতে বাধা দেন ব্যবসায়ী শাহজালাল ও তার স্বজনরা।

একপর্যায়ে ব্যবসায়ী শাহজালালকে তুলে নিয়ে রাতেই গুলি করে হত্যা করে কাউন্সিলর আবুল কালাম। স্থানীয়দের দাবি ওই সময় সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা ছিলেন কাউন্সিলর। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে অভিযুক্ত কাউন্সিলরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি রক্তমাখা পাঞ্জাবি ও দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করেন।

যত মামলা : জানা গেছে, হত্যা, অস্ত্রসহ প্রায় দেড় ডজন মামলার আসামি আবুল কালাম। ১৯৯৬ সালে ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়নের মো. সামছু ওরফে স্বর্ণ সামছুর বাড়ি থেকে ভিপি জয়নালের সঙ্গে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে বহুদিন জেল খাটেন। ’৯৮ সালে ফেনী পৌরসভার তৎকালীন কমিশনার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রতন হত্যা মামলায়ও আসামি কালাম। এর বাইরে বেশ কয়েকটি চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি মামলার আসামি তিনি। ২০০৪ সালে ফেনী কলেজ রোডের শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপণিবিতানের ব্যবসায়ী মো. কাদের ওরফে হুন্ডি কাদেরের মোটা অঙ্কের টাকা ছিনতাই ঘটনায়ও কালাম জড়িত বলে জানান দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

তাঁর হামলার শিকার যাঁরা : বিভিন্ন স্থানে কালামের হামলার শিকার হয়েছেন অনেকে। ২০১৮ সালের শেষভাগে ও ২০১৯ সালের শুরুতে ফেনী মিশন হাসপাতালের কর্মকর্তা তারেক ইকবাল মনিকে ফেনী সদরের সুলতানপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেন। কাজীরবাগ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল হককে ফেনী পলিটেকনিক এলাকায় পিটিয়ে আহত করেন। ফেনী সদর হাসপাতালের সামনে হামলা চালান ফরহাদনগর ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বাচ্চুর ওপর।

একাধিক স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রক : ফেনী শহরের উত্তর-পূর্বাংশের এক আতঙ্কের নাম কাউন্সিলর কালাম। সদর হাসপাতাল মোড়ের দুটি বাসস্ট্যান্ড, চারটি সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড ও পাঁচটি টমটম স্ট্যান্ড কালামের নিয়ন্ত্রণে। ফেনী সদর হাসপাতালের বিশাল এলাকা, শিক্ষা প্রকৌশল অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস, ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পশ্চিমে সুলতানপুর, বারাহিপুর, আমিনবাজার, আমতলীসহ বিরাট এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন কালাম।

দায় নেবে না দল : কাউন্সিলর কালামের অপকর্মের দায় নিতে রাজি নন দলের নেতারা। ফেনী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি অমর কৃষ্ণ মজুমদার বলেন, গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আমরা সবাই বিব্রত। যিনি বা যাঁরাই এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকুন, আমরা তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনুল কবির শামীম বলেন, দলের কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়লে দায়ভার ওই ব্যক্তির। তাঁকে এরই মধ্যে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।