জাতীয়নির্বাচনবাংলাদেশ

কুষ্টিয়া-২: কামারুলকে নিয়ে বেকায়দায় ইনু

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি) জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ফের নৌকা পাচ্ছেন- এটা নিশ্চিত। গত তিনটি নির্বাচনে নৌকায় চড়ে ইনু সহজেই নির্বাচনে বৈতরণী পার হলেও এবার সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী।

মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভা করে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগকারী উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিনের পক্ষ নিয়েছেন। আর এ কারণে রাতারাতি ইনুর ভোটের হিসাব-নিকাশ বদলে যেতে শুরু করেছে।

কামারুল যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করেন তাহলে ইনুর জয়ী হওয়া অনেক কঠিন হবে মনে করেন নির্বাচনী এলাকার মানুষ। সেক্ষেত্রে কামারুল বিপুল ভোটে জয়ী হতে পারে বলে ধারণা করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটাররা। ফলে কামারুলকে নিয়ে রীতিমতো বেকায়দায় পড়েছেন ইনু।

বিগত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সর্বস্তুরের নেতাকর্মী ইনুর পক্ষে মাঠে নেমে তাকে জয়ী করেন নৌকার মাঝি হিসেবে। তাই কামারুলকে বশে আনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে নৌকায় তুলে শক্ত হাতে হাল ধরতে না পারলে ইনুর সামনে বিপদ আছে বলে মনে করছেন খোদ জাসদ নেতারাও।

আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জাসদ ও ইনুর বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন,

নৌকার মাঝি হিসেবে ইনুকে বেছে নেয়া হলেও এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুলের পিছু ছাড়বেন না তারা। যে কোনো মূল্যে কামারুলের পক্ষে মাঠে থেকে তাকে জয়ী করবেন।

দুটি উপজেলার আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, জাসদের সঙ্গে এ আসনে একসঙ্গে নির্বাচন করার মতো কোনো পরিবেশ তারা রাখেনি। আমাদের দলের ৪ জন নেতাকে তারা হত্যা করেছে। গত নির্বাচনের আগে দেয়া ওয়াদার একটিও তারা রক্ষা করেনি। তাই এবার ইনুর বিপক্ষে তাদের অবস্থান কঠোর।

কামারুলকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয়ার কারল জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন,

কামারুল তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন রাজনৈতিক কর্মী। পরপর দুবার বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর মাঝে তার জনপ্রিয়তা আছে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের সঙ্গেও তার নিবিড় যোগাযোগ আছে। শক্ত মানুষ হিসেবেও তাকে জানে অনেকে। তাকে সহজে কেউ নড়াতে পাড়ে না। তাই নেতাকর্মীরা তাকে ভোটের মাঠে দেখতে চায়।

হাসানুল হক ইনুর আসনে কামারুলের প্রার্থী হওয়া নিয়ে জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, হাসানুল হক ইনু জোটের প্রার্থী হবেন, এটা অনেকটা নিশ্চিত। বিগত নির্বাচনগুলোতে নৌকার প্রার্থী হিসেবে সবাই তার পক্ষে কাজ করেছে। গত একাদশ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেঁকে বসেছিল, শেষ পর্যন্ত সেটা ঠিক হয়ে যায়। এবারও তারা নানা রকম কথা বলছেন। শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

গত কয়েকদিন আগে ভেড়ামারা শহরে এক সভা করেন স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেখানে দলের প্রায় সব নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,

আওয়ামী লীগের ভোট নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করবেন এমন সুযোগ আর দেয়া হবে না। তাই আমরা এক একজন নেতাকর্মী কামারুল হয়ে ভোটের মাঠে লড়ব। কামারুলই আমাদের প্রার্থী।

কামারুল ভোটের মাঠে শক্তভাবে থাকায় এখানে জাসদের নেতাকর্মীরা বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন। তারা মুখে না বললেও যে কোনো মূল্যে কামারুলকে সরানোর জন্য ভেতরে ভেতরে উঠেপড়ে লেগেছেন।

ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলা জাসদের দুই নেতা বলেন, বিগত তিনটি নির্বাচনে কিছুটা টানাপোড়েন থাকলেও আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী তাদের পক্ষে মাঠে ছিলেন। তবে এবারকার মতো এত কঠোর হতে তাদের দেখা যায়নি। কামারুল ভোটের মাঠে থাকলেও ইনুর জন্য নির্বাচনে জয়ী হওয়া কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের ভোট কামারুলের বাক্সে পড়বে। এ ছাড়া কামারুলের পক্ষে মাঠে ভালো অবস্থান আছে বলে স্বীকার করেন জাসদের এই দুই নেতা।

মিরপুর উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আহমদ আলী বলেন,‘ কামারুল আরেফিন ভোটের মাঠে থাকলে সেটা নৌকার প্রার্থীর জন্য কিছুটাতো সমস্যা হবেই। তাই শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হবে বলে আমরা মনে করি।’

ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমুল ইসলাম ছানা বলেন,

জাসদ আমাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তাই একসঙ্গে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা নৌকার বিরোধিতা করি না, তবে ইনুকে নিয়ে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরোধিতা আছে।

আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে থাকা মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন বলেন,‘ইনু সাহেব কেন্দ্রীয় একজন নেতা। তিনি ১৫ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন। তাই আমার মতো আওয়ামী লীগের ছোট একজন কর্মীকে নিয়ে তার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমি জনতার নেতা, সব কিছু ছেড়ে আমি জনতার কাতারে চলে এসেছি। নির্বাচনে জনতার ভালোবাসা নিয়ে শেষদিন পর্যন্ত মাঠে থাকতে চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
অভিনেতা জয় ও মিষ্টি জান্নাতের চুমুর দৃশ্য কোথায়? বামন চিনি পৈতে প্রমাণ/ বামনী চিনি কি করে বাইডেন ও তার স্ত্রী সম্পদের পরিমাণ কত বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনকুবের, দুবাইয়ে তাদের সম্পদ অভিনেত্রী কঙ্গনার যে বিপুল সম্পদ ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে শুভেচ্ছা জানালো আইপিএল নিলাম তালিকায় মাহমুদউল্লাহ, নেই সাকিব