অপরাধপ্রতারণাবাংলাদেশ

ডিমের বাজারে কারসাজি করে ৫০০ কোটি টাকা অতিমুনাফা

সাধারণ মানুষের সাশ্রয়ী দামে আমিষের বড় উৎস ডিম। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রতি ডজন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় উঠেছিল। অভিযোগ আছে, এই সময়ে কারসাজি করে ডিমের বাজার থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা অতিমুনাফা করে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার অভিযানে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা নেমে আসে।

গত মাসে ডিমের দাম বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করে গত ৩০ আগস্ট ভোক্তা অধিদপ্তর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি  প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ডিমের বাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িত দেশের বড় ডিমের প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্মস এবং আশুলিয়ায় কাজী ফার্মসের ডিলার ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ। এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা কমিশনকে মামলা করার সুপারিশ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

দাম বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করে অধিদপ্তর জেনেছে, ডিমের বাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িত দেশের বড় ডিমের প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্মস এবং আশুলিয়ায় কাজী ফার্মসের ডিলার ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ।এদিকে ডিমের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। এখন ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়।

অভিযানে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা ডিমের ক্রয় ভাউচার, মূল্যতালিকা ও বিক্রয় রসিদ সংরক্ষণ করেন না। গত ২০ আগস্ট আশুলিয়া বগাবাড়ী বাজারে ডিমের আড়ত পরিদর্শনে এমজে অ্যাগ্রো ও আসিফ অ্যান্ড নাঈম ভ্যারাইটিজ স্টোর নামের ডিমের আড়তে কোনো ক্রয় রসিদ পাওয়া যায়নি।

তাঁদের ভাষ্য, কাজী ফার্মের দেওয়া বিক্রয়মূল্যে তাঁরা ডিম বিক্রয় করেন। স্বাভাবিক সময়ে ডিমপ্রতি পাইকারি ব্যবসায়ীরা ১৫ থেকে ২০ পয়সা লাভে বিক্রি করলেও ৯ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট প্রায় ২.৭০ টাকা লাভে বিক্রি করেছেন।

অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ডিমের ক্রয়মূল্যের ওপর ভিত্তি করে ব্যবসায়ীরা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেন না। এই বিক্রয়মূল্য তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি নির্ধারণ করে। এরপর তা মোবাইল বার্তার মাধ্যমে সারা দেশে জানিয়ে দেওয়া হয়।

 আশুলিয়া বগাবাড়ী বাজারে অবস্থিত ফয়সাল এন্টারপ্রাইজে তদারকিকালে ডিমের মূল্য কারসাজিতে তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ, কাজী ফার্মস, সরকার বাজার, সাভার বিক্রয় কেন্দ্রের একজন তালিকাভুক্ত বিডার জড়িত এই কারসাজিতে। কাজী ফার্মসের প্রায় ১০০ জন বিডার থাকলেও প্রতিদিন ছয় থেকে আটজন বিডার অংশ নেন। ফয়সাল এন্টারপ্রাইজের দেওয়া তথ্য মতে, ৭ আগস্ট থেকে ডিমের মূল্য বাড়িয়ে দেয় কাজী ফার্মস।

এ ছাড়া গত ২২ আগস্ট এফবিসিসিআইতে সব পক্ষকে নিয়ে একটি সভা হয়। সভায় কাজী ফার্মস, বিডার ফয়সাল এবং তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি ডিমের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্টভাবে দায়ী মর্মে আলোচনায় উঠে আসে। ক্যাবের পক্ষ  থেকে এ সময় বাজার থেকে ভোক্তার পকেট হতে কয়েক শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

এদিকে আবার ডিমের দাম বাড়তে শুরু করেছে। রাজধানীর অনেক জায়গায় গতকাল প্রতি ডজন ডিম ১৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।ভোক্তা অধিকারের তদারকিতে দুই দিন আগেও রাজধানীর বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়।

খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, ডিমের আড়তদাররা সরবরাহ কমিয়ে আবার অস্থিতিশীল করে তুলছে।তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতির সভাপতি মো. আমানত উল্ল্যাহ বলেন, ‘মাসের শুরুর দিকে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা একটু ভালোমন্দ খান। তাই চাহিদা বাড়ে; ডিমের দামও বাড়ে। ’

প্রতিবেদন নিয়ে ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, কাজী ফার্মসের বিরুদ্ধে তাঁদের এজেন্ট ফয়সালকে দিয়ে অযৌক্তিক নিলামের মাধ্যমে ডিমের মূল্য বৃদ্ধি করে বাজার অস্থির করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ জন্য বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

বাংলা ম্যাগাজিন এস/কে

আরও দেখুন
Back to top button
‘Pushpa 2’ is coming to Bangladesh in Hindi ইব্রাহিম রাইসি যেভাবে ৫০০০ মানুষকে হত্যা করেছিলো Bangladeshi mountaineer Babar Ali climbs Mount Everest