খেলাফুটবল

পেলে, ম্যারাডোনাকে পেছনে ফেলে সর্বকালের সেরা মেসি: ডেইলি মেইল

সম্ভবত একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বিতর্কিত ফুটবল কথোপকথন হলো কে সেরা ফুটবলার, লিওনেল মেসি নাকি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো? চায়ের কাপে ঝড় তোলা আড্ডায় এই তর্কযুদ্ধ বহু পুরনো। কার গোল সেরা, কে কত দৃষ্টি নন্দন গোল দিয়েছে, কে বেশি নিজের গোলে মনযোগী, কার অন্যকে দিয়েও গোল করানোর সামর্থ্য আছে। এসব তর্কের শেষে কথা একটাই, তাহলে বলো কে সেরা ফুটবলার?

ভক্তদের এসব কৌতূহলকে মাথায় রেখে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল সর্বকালের সেরা ৫০ ফুটবলারের তালিকা প্রকাশ করেছে। যেখানে শীর্ষ দশে জায়গা পেয়েছেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তবে তালিকার কোথাও জায়গা হয়নি ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার জুনিয়রের।

দশম- ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো

যে মানুষটিকে অনেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন, আশ্চর্যজনকভাবে তার অবস্থান ১০ নম্বরে। রোনালদো তার ক্যারিয়ারে পাঁচটি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন এবং সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

পর্তুগালের হয়ে ১২৮ গোল করে সর্বকালের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ড গড়েছেন ৩৯ বছর বয়সী এই ফুটবলার। ১৪১ টি নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সর্বাধিক গোলের রেকর্ডও করেছেন এবং ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা তিনটি শিরোপাসহ রেকর্ড পাঁচবার প্রতিযোগিতা জিতেছেন।

নবম- জিকো

নবম স্থানে রয়েছেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি জিকো, যিনি কখনও বিশ্বকাপ শিরোপা না জিতলেও ব্রাজিলে বিশ্বকাপজয়ী অন্য অনেক খেলোয়াড়ের চেয়ে বড় নায়ক হিসেবে বিবেচিত হন। ডেড-বল দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিলেন এবং ১৯৮২ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ স্কোয়াডের তারকা ফুটবলার ছিলেন।

অষ্টম- গারিঞ্চা

রোনালদো ও জিকোকে পেছনে ফেলে অষ্টম স্থানে আছেন আরেক ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি। গারিঞ্চাকে ব্রাজিলের ১৯৫৮ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক হিসাবে ধরা হয় এবং ১৯৬২ সালে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের মুকুট অর্জন করেছিলেন। সেই বছর প্রাথমিক পর্যায়ে চোটের কারণে পেলে ছিলেন অনুপস্থিত।

সপ্তম- রোনালদো নাজারিও

পর্তুগিজ তারকার চেয়ে বিতর্কিতভাবে এগিয়ে আছেন সপ্তম স্থানে থাকা আরেক রোনালদো। তাকে অনেকে আসল রোনালদো বলেও ডাকেন। তার সহজাত প্রতিভা দেখার মতো ছিল। তিনি দুটি ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন তবে দুর্ভাগ্যক্রমে, তার ক্যারিয়ারের শেষটা ছিল অপ্রত্যাশিত।

ষষ্ঠ- ডি স্টেফানো

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর রিয়াল মাদ্রিদের সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ডি স্টেফানো এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি গ্যালাকটিকো হওয়ার অর্থ কী তা সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। ডি স্টেফানো পাঁচটি ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছিলেন এবং ১৯৬০ সালের ফাইনালে একটি উত্তেজনাপূর্ণ হ্যাটট্রিক করে স্কোরবোর্ডে নাম তুলেছিলেন।

পঞ্চম- জিনেদিন জিদান

জিদানের খেলার সবচেয়ে উজ্জ্বল দিকগুলির মধ্যে একটি হল তার বড়সর শরীর হওয়া সত্ত্বেও বল নিয়ে সারা মাঠ চষে বেড়ানোর দক্ষতা। ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে প্রথমবারের মতো অবিশ্বাস্য ভলিতে অনায়াসে শূন্যে ভাসান তিনি। তাতে যেন ফুটবলের নতুন আর্ট তৈরি করেন তিনি।

চতুর্থ- ইয়োহান ক্রুইফ

ক্রুইফকে বলা হয় ‘টোটাল ফুটবল’ ধারণার জনক। এটি এমন একটি কৌশল যা পেপ গার্দিওলা এবং মিকেল আর্তেতার মতো কোচদের মাধ্যমে আজকের খেলায় এখনও দৃশ্যমান। ডাচ ফুটবলার ক্রুইফ আয়াক্সের হয়ে টানা তিনটি ইউরোপীয় কাপ জিতেছিলেরলন। ১৯৭৪ বিশ্বকাপে ফুটবলের অন্যতম আইকনিক দক্ষতার প্রদর্শন করেছিলেন।

তৃতীয়- ডিয়েগো ম্যারাডোনা

ম্যারাডোনা যে কোনো পিচে পা রেখেই অল্প সময়েই সেরা ফুটবলার হয়ে ওঠেন। যদি একটি ম্যাচ নিখুঁতভাবে সংক্ষেপে বলতে পারে তবে সেটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ম্যাচটি। যে ঘটনার কারণে আজও তাকে অনেকে ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলটির কারণে স্মরণ করেন। বার্সেলোনার হয়ে গেটাফের বিপক্ষে লিওনেল মেসির গোলটিও প্রায় একই ধরনের।

দ্বিতীয়- পেলে

শীর্ষস্থান হারাচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান ও ফুটবল আইকন পেলে। পেলে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনবার বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করেন। ১৯৫৮ সালে কিশোর বয়সে তিনি প্রথম বিশ্ব আসরের শিরোপা জিতেন। পরবর্তীতে তিনি ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবল দল, ১৯৭০ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলের আইকনিক নেতা হয়ে ওঠেন।

প্রথম- লিওনেল মেসি

সর্বকালের সেরা ফুটবলার হলেন লিওনেল মেসি। যিনি ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন, অবিশ্বাস্য ৮ বার পুরস্কারটি জিতে তিনি আছেন সবার ওপরে।

বার্সেলোনার হয়ে তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন মেসি, যে ক্লাবটিতে তিনি আবার সর্বোচ্চ গোলদাতা। আর্জেন্টাইন তারকা ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ জয়ের মধ্য দিয়ে অবসান হয় তার দীর্ঘ অপেক্ষার। পরম আরাধনার সেই শিরোপা জিতে তার সংগ্রহে মুকুট রত্ন যুক্ত করেছিলেন। এই টুর্নামেন্টে তিনি মোট সাত গোল করেছিলেন, যার মধ্যে চারটি এসেছিল পেনাল্টি থেকে।

সেরা পঞ্চাশের বাকিরা হলেন:

৫০তম- গ্যারেথ বেল

৪৯তম- রবার্ট লেভানদোভস্কি

৪৮তম- জন রবার্টসন

৪৭তম- রয় কিন

৪৬তম- লোথার মাথাউস

৪৫তম- হুগো সানচেজ

৪৪তম- পল গ্যাসকোইগন

৪৩তম- হৃস্তো স্টয়চকভ

৪২তম- ডেনিস ল

৪১তম- টমাস মুলার

৪০তম- রোমারিও

৩৯তম- জাইরজিনহো

৩৮তম- থিয়েরি অঁরি

৩৭তম- ডেনিস বার্গক্যাম্প

৩৬তম- ফ্রাঙ্কো বারেসি

৩৫তম- গারসন

৩৪তম- জর্জ ওয়েয়া

৩৩তম- আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা

৩২তম- জাভি

৩১তম- পাওলো মালদিনি

৩০তম- স্ট্যানলি ম্যাথিউস

২৯তম- লেভ ইয়াশিন

২৮তম- নান্দর হিদেগকুটি

২৭তম- ডানকান এডওয়ার্ডস

২৬তম- কেনি ডালগ্লিশ

২৫তম- জন চার্লস

২৪তম- জিয়ান্নি রিভেরা

২৩তম- ববি মুর

২২তম- কাফু

২১তম- মার্কো ফন বাস্তেন

২০তম- মিশেল প্লাতিনি

১৯তম- রবার্তো বাজ্জিও

১৮তম- রোনালদিনহো

১৭তম- ইউসেবিও

ষোড়শ- কিলিয়ান এমবাপ্পে

১৫তম- গার্ড মুলার

১৪তম- স্যার ববি চার্লটন

ত্রয়োদশ- ফেরেঙ্ক পুসকাস

দ্বাদশ- ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার

১১তম- জর্জ বেস্ট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button