জাতীয়বাংলাদেশ

আ.লীগের ৪৮ প্রার্থী তালিকার ৩৪ জনই নতুন

নতুনদের প্রাধান্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের ৪৮ জন প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঘোষিত তালিকায় ৩৪ জনই নতুন। তারা প্রথমবারের মতো দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। বিদায়ী একাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপিদের সাতজন বাদে বাকিদের ঠাঁই মেলেনি।

এর আগের দুটি সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপিদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে এবার বিবেচনায় আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত, মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত এবং শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতাসহ বিভিন্ন কারণে নির্বাচন করতে না পারা কয়েকজন নারী নেত্রীও মনোনয়ন পেয়েছেন।

বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে ৪৮ জনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়। আওয়ামী লীগ ও মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এর আগে একই স্থানে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে ব্রিফিংয়ে মনোনীত প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে দলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও প্রার্থী তালিকা দেওয়া হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংরক্ষিত আসনে ১ হাজার ৫৪৯ জনের মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই করে ৪৮ জনকে বেছে নিতে হয়েছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমতি ও সর্বসম্মতিক্রমে ৪৮ আসনে প্রার্থী মনোনীত হয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হবে।

প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জেলা কোটাভিত্তিক দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগসহ দলের সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী ও আন্দোলন-সংগ্রামে অবদান রাখা নারী নেত্রীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নতুনদের মধ্যে কয়েকজন মনোনয়ন পেয়েছেন দল ও মুক্তিযুদ্ধে তাদের বাবা অথবা স্বজনের অবদান বিবেচনায়। বীর নারী মুক্তিযোদ্ধাও তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দু-একজনকেও বিবেচনায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো থেকে একজনকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

আইন অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পাচ্ছে ৪৮টি। প্রতিটি আসনের বিপরীতে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন গড়ে ৩২ জনের বেশি।

আগামী ১৪ মার্চ সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে একটি আসনের বিপরীতে একাধিক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় বরাবরের মতো এবারও ৫০টি আসনেই মনোনয়নপত্র জমা ও বাছাইকালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করতে পারে ইসি।

পুরোনোদের যারা মনোনয়ন পেলেন

একাদশসহ গত তিনটি সংসদেই সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলেন সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। টানা চতুর্থবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন দলের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। তাঁকে মুন্সীগঞ্জ আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নবম ও দশম সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপি এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অভিনেত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম মনোনয়ন পেয়েছেন টাঙ্গাইল আসন থেকে।

একাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপি আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খানকে চট্টগ্রাম, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলাকে ঢাকা, মুক্তিযোদ্ধা ও মানবাধিকার কর্মী আরমা দত্তকে কুমিল্লা, শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীরবিক্রমের মেয়ে নাহিদ ইজাহার খানকে ঢাকা, ফরিদা খানমকে নোয়াখালী এবং অপরাজিতা হককে ঢাকা থেকে প্রার্থী করা হচ্ছে। এ ছাড়া নবম সংসদের এমপিদের মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আহত শাহিদা তারেখ দীপ্তিকে ঢাকা এবং যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তারকে গোপালগঞ্জ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

মনোনয়নবঞ্চিত অথবা পরাজিত যারা স্থান পেলেন

একাদশ সংসদের এমপিদের মধ্যে সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান খুলনা-৩ আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি। তাঁকে খুলনা আসন থেকে সংরক্ষিত এমপি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বরিশাল-৪ আসনে দলের মনোনয়ন পেলেও দ্বৈত নাগরিকত্বের জটিলতায় নির্বাচন করতে পারেননি। তিনি বরিশাল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। এ ছাড়া ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী দলীয় মনোনয়ন পেলেও জোটগত আসন সমঝোতার কারণে তাঁকে সরে যেতে হয়। তাঁকে লক্ষ্মীপুর জেলা কোটায় প্রার্থী করা হয়েছে।

এদিকে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরেছেন এমন দু’জন সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হচ্ছেন। তারা হলেন– আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম (ঢাকা) এবং মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি (গাজীপুর)।

অবদানের মূল্যায়ন পেলেন যারা

বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা বিয়ানীবাজার মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুমা রায় চৌধুরী (রুমা চক্রবর্তী) সিলেট আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। একাত্তরে নবম শ্রেণির স্কুলছাত্রী রুমা চক্রবর্তী দেশের টানে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এ ছাড়া আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য নার্সিং পেশায় নাম লেখান ঢাকা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে। বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুমার স্বামী রমেন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন উপজেলার সুপাতলার কালীমন্দিরের সেবায়েত। সেই মন্দিরের পাশেই দুটি ঘরে বাস করছেন রুমা চক্রবর্তী। অর্থাৎ মন্দির থেকে জাতীয় সংসদে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার মনোনয়নকে অন্যতম চমক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, নাটোর-৪ আসনের প্রয়াত এমপি আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে ও যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তিকে নাটোর আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ফরিদপুর থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ঝর্ণা হাসান। তাঁর স্বামী প্রয়াত পৌরসভা চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা হাসিবুল হাসান লাবলু ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাধারণ সম্পাদক। এই দু’জনকে মনোনয়ন দিয়ে দলে প্রয়াত নেতাদের অবদানকে মূল্যায়ন করা হয়েছে।

এ ছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রথম নির্বাচিত নারী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন নরসিংদীর সংরক্ষিত আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। এদিকে, ১৪ দলের শরিক গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কানন আরা বেগমকে নোয়াখালী থেকে প্রার্থী করা হচ্ছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের নেতারা আশানুরূপ বিজয় না পাওয়ায় সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব কমে গেছে। এই বিবেচনায় কানন আরাকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

আরও যারা মনোনয়ন পেলেন

সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন পেয়েছেন দ্রৌপদী দেবি আগরওয়ালা (ঠাকুরগাঁও), আশিকা সুলতানা (নীলফামারী), রেজিয়া ইসলাম (পঞ্চগড়), আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা (জয়পুরহাট), জারা জেবিন মাহবুব (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), রুনু রেজা (খুলনা), ফরিদা আক্তার বানু (বাগেরহাট), ফারজানা সুমি (বরগুনা), খালেদা বাহার বিউটি (ভোলা), নাজনীন নাহার রশীদ (পটুয়াখালী), উম্মে ফারজানা ছাত্তার (ময়মনসিংহ), নাদিয়া বিনতে আমিন (নেত্রকোনা), মাহফুজা সুলতানা মলি (জয়পুরহাট), আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জামান কল্পনা (ঝিনাইদহ), লায়লা পারভীন (সাতক্ষীরা), বেদৌরা আহমেদ সালাম (গোপালগঞ্জ), পারুল আক্তার (ঢাকা), মহিলা আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সাবেরা বেগম (ঢাকা), অনিমা মুক্তি গোমেজ (ঢাকা), শেখ আনার কলি পুতুল (ঢাকা), মাসুদা সিদ্দিক রোজী (নরসিংদী), আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা (টাঙ্গাইল), হাছিনা বারী চৌধুরী (ঢাকা), আশ্রাফুননেছা (লক্ষ্মীপুর), শামীমা হারুন লুবনা (চট্টগ্রাম), ফরিদা খানম (নোয়াখালী), দিলোয়ারা ইউসুফ (চট্টগ্রাম), জ্বরতী তঞ্চগ্যা (রাঙামাটি) এবং নাছিমা জামান ববি (রংপুর)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button