বাড়ি বিশ্ব সংবাদ গাজায় যুদ্ধের কারণে ভারতের পোয়াবারো!

গাজায় যুদ্ধের কারণে ভারতের পোয়াবারো!

0
গাজায় যুদ্ধের কারণে ভারতের পোয়াবারো!

গাজা যুদ্ধে ভারতের পোয়াবারো! যুদ্ধ শুরুর আগে ইসরাইলের শ্রমসংকট পূরণ করত মূলত ফিলিস্তিনিরা। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর ফিলিস্তিনিদের কাজের লাইসেন্স স্থগিত করে দিয়েছে দেশটি। সেই সুযোগটিই এখন লুফে নিয়েছে ভারত। যুদ্ধ মৌসুমে মিত্র দেশের শ্রমিক সংকট পূরণ করছে দেশটি।

ইসরাইলের নির্মাণখাত প্রথমবারের মতো ভারতীয়দের জন্য সুযোগ-সুবিধা উন্মুক্ত করেছে। ফিলিস্তিনিদের পরিবর্তে ১ লাখ পর্যন্ত ভারতীয় শ্রমিক নিয়োগের অনুমতি চেয়ে অক্টোবর থেকেই সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছিল ইসরাইলি নির্মাণ সংস্থাগুলো। অনুমোদনের পর ভারতের হরিয়ানা রাজ্য সরকার গত বছরের ডিসেম্বরে ইসরাইলে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য ১০ হাজার পদের বিজ্ঞাপন দিয়েছে।

যার মধ্যে ৩ হাজার কাঠমিস্ত্রি ও লোহা শ্রমিক, ২ হাজার মেঝে টাইলস ফিটার এবং ২ হাজার প্লাস্টার শ্রমিক চাওয়া হয়েছে। তাদের দেওয়া বিজ্ঞাপন অনুযায়ী, শ্রমিকদের বেতন হবে প্রায় ৬ হাজার ১০০ শেকেল বা প্রায় ১ হাজার ৬২৫ ডলার।

একই মাসে, ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশেও আরও ১০ হাজার কর্মীর জন্য একই রকম বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। চলতি মাসের শুরুতে কর্মীদের সাক্ষাৎকার নিতে ভারতে এসেছিলেন ইসরাইলের সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারীরা । মঙ্গলবার রাজ্যের রাজধানী লখনৌতে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

ইসরাইলি সরকারের এই নিয়োগ কার্যক্রমে রাজ্যের তদারককারী সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি হরিয়ানা কৌশল রোজগার নিগম লিমিটেড। এই সংস্থার এক কর্মকর্তা আলজাজিরাকে বলেন, রাজ্যের রোহতক শহরে সপ্তাহব্যাপী নিয়োগ কার্যক্রম চলাকালীন গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫শ থেকে ৬শ আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল।

ইসরাইলের একজন কাঠমিস্ত্রি হিসাবে নিয়োগ পেতে দক্ষতা পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছেন শর্মা (৪৩) । তিনি ছাড়াও ভারতের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য বিহার থেকে প্রায় ৪০ জন শ্রমিকের একটি দল রোহতকে আসেন।

আলজাজিরাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছিল বিহারের একটি নিয়োগ সংস্থা। দ্বিতীয় ধাপের মৌখিক পরিক্ষায় অংশ নিতে তিনি রোহতকে এসেছেন বলে জানান।

শর্মা বলেন, ইসরাইলে কাজ করা দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ‘জীবনে একবারের সুযোগ’ বলে মনে হচ্ছে। তিনি এর আগে একটি সরকারি কর্মসংস্থান প্রকল্পের অধীনে কাজ করতেন। যেখানে তাকে ৫ ঘণ্টা কাজ করার জন্য দিনে ৩ ডলারেরও কম বেতন দেওয়া হতো।

ভারত থেকে শ্রমিক নিতে ইসরাইলের সরকার আট মাসেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে। চলমান যুদ্ধকেই ইসরাইলে ভারতীয় শ্রমিক চাওয়ার কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

গত বছরের মে মাসে ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন তার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তির অধীনে ৪২ হাজার ভারতীয় নির্মাণ শ্রমিককে কাজের জন্য স্থানান্তরিত করার অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে শ্রমিকশ্রেণির পাশাপাশি শিক্ষিত ভারতীয়রা স্থিতিশীল আয়ের সন্ধানে এই কাজগুলোর জন্য আবেদন করছেন। হরিয়ানার একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ বছর বয়সি ফাইনাল ইয়ারে পড়–য়া ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র শচীনও সাক্ষাৎকার দিতে আসেন। বলেন, ‘কেউ এমন কোনো জায়গায় যেতে চাইবেন না যেখানে রকেট উড়ে যায়। কিন্তু ভারতে কাজের খুব কম সুযোগ রয়েছে।’

তবে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে চলমান গণহত্যায় সরাসরি জড়িত একটি দেশে কর্মী পাঠানোর ভারতের এই পরিকল্পনার সমালোচনা করছেন দেশটির শ্রম গোষ্ঠী ও বিরোধী দলগুলো। নভেম্বরে ভারতের ১০টি বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে ইসরাইলে ভারতীয় শ্রমিকদের না পাঠানোর জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছিল।

এক বিবৃতিতে ট্রেড ইউনিয়ন জানায়, ‘ইসরাইলে শ্রমিক রপ্তানির সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য অনৈতিক এবং বিপর্যয়কর আর কিছু হতে পারে না।’

ভারতের নির্মাণ শ্রমিক ফেডারেশন জানায়, ‘আমাদের দেশের দরিদ্র নির্মাণ শ্রমিকদের ইসরাইলে শ্রমিকের ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার যে কোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করছি। আর এ কার্যক্রম যে কোনো উপায়ে ফিলিস্তিনে এর গণহত্যামূলক হামলাকে সমর্থন করে।’