এশিয়াবিশ্ব সংবাদস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

কয়েক দশক ধরে পূর্ব এশিয়াতে ক্ষীণদৃষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে

বিশ্বের ধনী দেশগুলো ইতিমধ্যে যক্ষ্মা, কলেরা ও ম্যালেরিয়ার মতো সংক্রামক রোগ প্রায় দূর করতে সক্ষম হয়েছে। এখন দেশগুলোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়গুলোকে ভাবতে হয় স্থূলতার মতো সমস্যা কীভাবে দূর করা যায়, তা নিয়ে। শারীরিক পরিশ্রমের কাজের তুলনায় এখন বসে থাকার কাজে আগ্রহী অনেকে। এতে স্থূলতা ও হৃদ্‌রোগ বাড়ছে।

অপর দিকে কয়েক দশক ধরে পূর্ব এশিয়াতে ক্ষীণদৃষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষীণদৃষ্টির এ সমস্যার অন্যতম কারণ শিক্ষাব্যবস্থা। গবেষকেরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা দিনের একটি বড় সময় কম আলোযুক্ত শ্রেণিকক্ষে কাটাচ্ছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষীণদৃষ্টির মহামারি।

আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মেডিকেল জার্নাল জ্যামা অফথালমোলজিতে গত ১৪ জানুয়ারি প্রকাশিত ‘২০২০-আ ইয়ার অব কোয়ারেন্টিন মায়োপিয়া’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে ছয় থেকে আট বছর বয়সী শিশুদের মায়োপিয়ার হার আগের চেয়ে দেড় গুণ থেকে ৩ গুণ বেড়েছে।

পূর্ব এশিয়ায় ষাটের দশক থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নতুন গতি পায়। এর আগপর্যন্ত এ অঞ্চলে ক্ষীণদৃষ্টিজনিত তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। ক্ষীণদৃষ্টি বা মায়োপিয়াতে ভোগা রোগীরা কাছে ভালো দেখতে পারলেও দূরে ঝাপসা দেখে, তাই এদের ক্ষীণদৃষ্টি বলা হয়। শিশুরা সাধারণত এই সমস্যায় বেশি ভোগে। চীনে পরিচালিত এক গবেষণায় করোনাকালে শিশুদের মধ্যে এ সমস্যা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা উঠে এসেছে।

ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আজকাল তরুণদের মধ্যে ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যা প্রায় সর্বব্যাপী। হংকং, সিঙ্গাপুর ও তাইপেতে স্কুল থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি ব্যক্তি এ সমস্যায় ভুগছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনের বেশি তরুণ এ সমস্যায় ভুগছেন। চীনে অর্থনৈতিক উন্নতি কিছুটা পরে শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতিও এখন হংকং, সিঙ্গাপুর বা সিউলের মতোই। চীনের গোয়াংজুসহ কয়েকটি শহরে তরুণদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষীণদৃষ্টিতে ভুগছেন।

ক্ষীণদৃষ্টি অনেকের জন্য সারা জীবনের যন্ত্রণা। বিশেষ করে গরিব মানুষের জন্য এটি বড় সমস্যা। চীনের কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেকের চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স কেনার অর্থ নেই। অনেক পরিবার বিপদে পড়েছে। সেখানকার স্কুলগামী শিশুরা ভুগছে। গুরুতর সমস্যায় মধ্যবয়সী অনেকের চোখের নানা রোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টিহীন হয়ে পড়ছেন অনেকে। একটি পুরো প্রজন্ম ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে এশিয়ার অনেক দেশের সরকারের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোরও এখন এ নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে।

ক্ষীণদৃষ্টির এ মহামারির কেন্দ্র এখন পূর্ব এশিয়া। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোও কি এ থেকে মুক্ত? গবেষকেরা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলোও এ মহামারি থেকে সুরক্ষিত নয়। উন্নত দেশগুলো থেকে ক্ষীণদৃষ্টি–সম্পর্কিত সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন। তবে গবেষণা তথ্য বলছে, ইউরোপে ক্ষীণদৃষ্টিতে ভোগার হার ২০ থেকে ৪০ শতাংশ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৭ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ক্ষীণদৃষ্টিতে আক্রান্তের হার ৫৯ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের আলোতে গেলে শিশুদের দৃষ্টিশক্তি ভালো হয়। কম আলোতে দীর্ঘদিন থাকলে দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। গবেষকেরা বলেন, এ বিষয়টিই এশিয়াতে ক্ষীণদৃষ্টির হার এত বেশি কেন, তা বুঝতে সাহায্য করবে। এ অঞ্চলে দীর্ঘ সময় শ্রেণিকক্ষে থাকার পাশাপাশি বিকেল বা সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়ার প্রবণতা রয়েছে।

এ কারণে বিকেলের সূর্যাস্তের সময় শিশুরা বাইরে যাওয়ার কম সময় পায়। পশ্চিমা দেশগুলোতেও এখন এ ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।চোখের জন্য বিশেষ ড্রপ, চশমা কিংবা কন্ট্যাক্ট লেন্সে ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যা কিছুটা কমাতে পারবে। কিন্তু প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।

উদাহরণ হিসেবে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের কথা বলা যায়। দেশগুলো শিক্ষার র‌্যাঙ্কিংয়ে ভালো করেছে, কিন্তু শ্রেণিকক্ষের আবদ্ধ শিক্ষায় খুব বেশি গুরুত্ব দেয়নি।তাই বলা যায়, খেলার মাঠে একটু বেশি সময় দিলে উন্নত দেশগুলোর শিশুদের মধ্যে স্থূলতার হারও কমবে। সরকার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হলে অবশ্যই শিশুদের বাইরে বেশি সময় কাটানোর বিষয়টিতে গুরুত্ব দেবে।

এ ক্ষেত্রে গবেষকদের সহজ সমাধান হচ্ছে, শিশুদের যতটা সম্ভব বাইরে খেলতে দেওয়া বা উন্মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। এ নিয়ে তাইওয়ানে বেশ কিছু গবেষণাও হয়েছে। গবেষণায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে প্রাইমারি স্তরের শিক্ষার্থীদের যতটা সম্ভব শ্রেণিকক্ষের বাইরে রাখা হয়।

এতে ভালো ফল পাওয়া গেছে। তবে এ ক্ষেত্রে বড় বাধা মা-বাবার আচরণ। তাঁরা শ্রেণিকক্ষে পড়ানোকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। এ সমস্যা সমাধানে সরকার বড় ভূমিকা রাখতে পারে। উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের আশ্বস্ত করতে পারে যে ক্লাসরুমে কিছুটা কম সময় দিয়ে খুব বেশি বিপর্যয়ের আশঙ্কা নেই।

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে

আরও দেখুন
Back to top button
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে ‘হানি ট্র্যাপ’ শিলাস্তি রহমান ‘Pushpa 2’ is coming to Bangladesh in Hindi ইব্রাহিম রাইসি যেভাবে ৫০০০ মানুষকে হত্যা করেছিলো Bangladeshi mountaineer Babar Ali climbs Mount Everest