বাড়ি বাংলাদেশ সরকারী শিশু পরিবারের দুই এতিমের ব্যাতিক্রমী বিয়ে।

সরকারী শিশু পরিবারের দুই এতিমের ব্যাতিক্রমী বিয়ে।

0
সরকারী শিশু পরিবারের দুই এতিমের ব্যাতিক্রমী বিয়ে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রুহেনা বেগম পিতৃহারা হয়ে আশ্রয় নেয় শ্রীমঙ্গল সরকারী শিশু সদন পরিবার বালিকায়। একইভাবে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মকসুদপুর গ্রামের শামীম মিয়া অল্পবয়সেই গ্রাম্য দাঙ্গায় পিতৃহারা হয়ে আশ্রয় নেয় হবিগঞ্জ সরকারী শিশু পরিবার বালকে।

শামিম কম্পিউটার সাইন্সে ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করে এবং রুহেনা এসএসসি পাশ করে।সমাজ সেবা অধিদপ্তরের বার্ষিক খেলাধুলায় অংশ নিতে গিয়ে একে অপরের পরিচয় হলে শামিম মিয়া বিষয়টি জানায় তার প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান সাইফুল ইসলামকে। তিনি বিষয়টি শেয়ার করেন সরকারী শিশু পরিবারের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামানকে। পরে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে তিনি সানন্দে রাজি হন সুন্দর এই আয়োজনে। দুই অনাথের ঘর বাঁধার স্বপ্ন পূরনে উদ্যোগ নেয়া হলে অনেকই এগিয়ে আসেন।

জেলা প্রশাসন থেকে বড় ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়ানোর পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তর ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমাজসেবী লোকজনের সাথে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন তিনি। পরে সোমবার হবিগঞ্জ সরকারী শিশু পরিবারে আয়োজন করা হয় এক ব্যাতিক্রমধর্মী বিয়ের আয়োজন। বর ও কনে এতিম হলেও আয়োজনের কমতি ছিল না এই বিয়ের অনুষ্ঠানে। শামিম ও রুহেনার বিয়েকে কেন্দ্র করে শিশু পরিবারে ছিল সাজসজ্জার রঙ্গমেলায়। গেইট আর সাজসজ্জার কমতি ছিল না কোথাও। সমাজের ভিত্তবানরা নিয়ে আসেন নানান উপহার। এলাকাবাসীদের মাঝে ছিল ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা।

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান ও পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি রফিকুল আলমের উপস্থিতিতে কাজী ও মৌলানা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। পরে বর ও কনেকে আর্শীবাদ করেন সমাজের ভিত্তবান সমাজসেবীরা। এর পর অতিথিদের জন্য আপ্যায়নে অংশ নেন সবাই।সেখানে ছিল রোস্ট, গরুর মাংসের রেজালা, ঘন্ট আর দইয়ের আয়োজন। ব্যাতিক্রমী এই বিয়ে আয়োজন করায় কৃতজ্ঞতার শেষ নেই শামীম মিয়া ও রুহেনা বেগমের। তারা এই আয়োজন দেখে নিজেদেরকে এতিম হিসাবে আর অসহায় ভাবছে না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন তারা। এতিম বর ও কনের এই ব্যাতিক্রম আয়োজনে আনন্দিত উভয়ের পরিবার।

তাদের স্বজনরাও আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ব্যাতিক্রমধর্মী এই বিয়ে আয়োজন করায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নিতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন। তারা এ ধরনের উদ্যোগে সহযোগিতা করতে পেরেও আনন্দিত। ভবিষ্যতেও তারা এ ধরনের ভালকাজে সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান শামীম বলেন, এই আয়োজন ব্যাতিক্রম। আমরা সব সময় ভাল কাজের সাথে আছে। লন্ডন থেকে দেশে আসা বিশিষ্ট সমাজ সেবক অধ্যাপক আব্দুল হান্নান স্ব-পরিবারে আসেন বিয়ের অনুষ্ঠানে। বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। তিনি বলেন, জীবনে অনেক বিয়েতে গিয়েছি। প্রথম একটি এতিমের বিয়েতে এসে খুব ভাল লাগল।হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের ভাল কাজে উৎসাহ দিয়ে থাকেন।

কেউ যাতে নিজেকে অসহায় মনে না করে তার জন্যই এই আয়োজন। সকলে মিলে এ ধরনের ভাল কাজ করতে পারলে আমরা সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারব। নবদম্পত্তিদের প্রতিও শুভেচ্ছা জানান তিনি।হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলিও আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। সমাজে এ ধরনের কাজ সবার সামনে উদাহরণ সৃষ্টি করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের এই আয়োজনে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। আর না হলে এ ধরনের আয়োজন সম্ভব হত না।

বিয়ের পর বর শামিম মিয়া ও কনে রুহেনা বেগমের অনুভূতি হল তারা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে সমাজের জন্য কাজ করা। শামীম মিয়া এও আবদার রাখেন সরকার সহ সকলের কাছে তার একটি চাকুরী প্রয়োজন তাহলে তাদের আগামীর পথচলা সুন্দর হয়ে উঠবে। সুন্দর এই আয়োজনে তাদের পিতা হারানোর অভাবকে অনেকটাই ভুলিয়ে দিয়েছে।

বাংলা ম্যাগাজিন /এনএইচ