Advertise
Bangla News

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আন্তঃদেশীয় ট্রেন হিসেবে চালু হলো ‘মিতালী এক্সপ্রেস’

অবশেষে পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ির সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ শুরু হলো ঢাকার। আর এতে দীর্ঘ ৫৭ বছর পর এই রেলপথে ট্রেন চলা দেখলো দুই বাংলার মানুষ। দুই দেশের নাগরিকদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে বুধবার সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে নির্ধারিত সময়ে চাকা গড়ায় বহুল প্রতীক্ষিত মিতালী এক্সপ্রেসের। সবুজ পতাকা দেখিয়ে ভার্চুয়ালি এই মিতালী এক্সপ্রেসের শুভ উদ্বোধন করেন ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ এবং বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। 

দুই দেশের যাত্রী যাতায়াতে তৃতীয় এক্সপ্রেস ট্রেন এই মিতালী এক্সপ্রেস। এর আগে গত দু’বছর বন্ধ থাকার পর ২৯মে থেকে মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস চালু হয়েছে।ভারতের এনজেপি স্টেশন থেকে বাংলাদেশের ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত যাবে এই ট্রেন। অপারেশনাল স্টপেজ ছাড়া বিরামহীনভাবে চলবে ট্রেন। নিশ্চিত করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ট্রেনটির এসি কেবিন বার্থের ভাড়া ৪৯০৫ টাকা, এসি কেবিন চেয়ারকোচের ভাড়া ৩৮০৫ টাকা, এসি চেয়ারকোচের ভাড়া ২৭০৭ টাকা।

Advertise Watch BPL 2024

নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা রেল স্টেশনের দূরত্ব ৫৯৫ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৬৯ কিলোমিটার ভারত ভূখণ্ডে পড়ে। ভারতের দিকে সীমান্তের শেষ সীমান্ত স্টেশন হলদিবাড়ি। বাংলাদেশের দিকে প্রথম সীমান্ত স্টেশান চিলাহাটি। 

Advertise

১৯৬৫ সালের পর এ রুটে বুধবার প্রথম চালু হলো মিতালী এক্সপ্রেস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের দ্রুত যোগাযোগের স্বার্থে, মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।  

যাত্রীবাহী ট্রেন হিসেবে গত বছর ২৬ মার্চ, মিতালী এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদী।এরপর করোনার কারণে দুই দেশের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। তবে ফের স্বাভাবিক হতেই সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সেই কারণেই মৈত্রী, বন্ধনের পর পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে (১৩১৩২/১৩১৩১ এনজিপি – ঢাকা-এনজিপি) বুধবার চালু হলো মিতালী এক্সপ্রেস। ট্রেনটির নাম দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বুধবার ভারতের রেলমন্ত্রী আশ্বিনি বৈষ্ণব ও বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ট্রেনটির ভার্চ্যুয়াল ‘ফ্ল্যাগ অফ’ করেন।  

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন ভারতের লোকসভার সংসদ সদস্য জয়ন্ত কুমার রায়, সংসদ সদস্য রাজু বিস্ত, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিধায়ক শিখা চ্যাটার্জী, বিধায়ক শংকর ঘোষ , দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান, বাংলাদেশ রেলওয়ে বোর্ড অপারেশনসের এডিজি সরদার শাহাদাত আলী , ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান বি কে ত্রিপাঠীসহ ভারতীয় রেলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। পতাকা উত্তোলনের পর ট্রেনটি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়।

এদিন দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি ভারতীয় রেলমন্ত্রী বৈষ্ণব বলেন, ভারতীয় রেলের কাছে খুবই একটা খুশির মুহূর্ত। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক তা দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগি করা ঐতিহ্যে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।

সে ক্ষেত্রে এই এক্সপ্রেস ট্রেনটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে মাইলস্টোন হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, গত গত কয়েক বছর আগেও দুই দেশের মধ্যে মাত্র ৭০০ মালবাহী ট্রেন যাতায়াত করত, সেখানে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে এখন প্রায় ১৬০০ এর কাছাকাছি হয়েছে। 

বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। একাত্তরের যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের যে সেক্টর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাহলো রেল। রেলের বড় বড় ব্রিজ, রেল লাইন, কারখানাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।

এই বিধ্বস্ত রেলকে গড়ে তোলার জন্য জাতির জনক কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। সেটা ভারতের সহযোগিতায় আমাদের রেল ব্যবস্থাকে আমরা পুনর্গঠন করেছিলাম। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা রেল ব্যবস্থাকে সবসময় অবজ্ঞা করেছে। এর প্রতি কোনো দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। 

তিনি বলেন, এই ধ্বংসপ্রাপ্ত রেল ব্যবস্থাকে গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১১ সালে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি অবিভক্ত ভারতে যে রেল লাইনগুলো ছিল, যে রেল পরিষেবা ছিল সেগুলোকে পুনরায় চালু করার জন্য আমরা কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে এর আগে যে ক’টি জায়গা দিয়ে রেল যোগাযোগ ছিল সেগুলি পুনঃস্থাপন করতে।

তিনি আরও বলেন, সপ্তাহে দু’দিন এই মিতালী ট্রেন চালু থাকবে। কিন্তু পরবর্তীতে যদি সম্ভব হয় তবে সপ্তাহে পাঁচদিন চালানোর জন্য ভারতের কাছ প্রস্তাব রাখব। কারণ এই পথটি বাংলাদেশের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। 

মোট ১৮ জন যাত্রী নিয়ে এদিন মিতালী এক্সপ্রেস এনজিপি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। যাদের মধ্যে অধিকাংশই শিলিগুড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। ১০ বগীর এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে আছে ৪টি এসি বার্থ কোচ, ৪টি এসি চেয়ার কোচ এবং ব্রেকভ্যানসহ পাওয়ারকার ২টি। মোট ৪টি স্টেশনে দাঁড়াবে মিতালী এক্সপ্রেস।  

ট্রেনটি ‘নিউ জলপাইগুড়ির (এনজিপি)’ পর থামবে ভারতের শেষ সীমান্ত ‘হলদিবাড়ি’ স্টেশনে। তারপর বাংলাদেশের সীমান্তের শুরু ‘চিলাহাটি’-তে বিরতির পর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছাবে রাত দশটার পর।

যাত্রীদের সুবিধার্থে, মিতালি এক্সপ্রেসের টিকিট বুকিং করা যাবে কলকাতার ফেয়ারলি প্লেস এবং কলকাতা স্টেশন থেকে। এছাড়া, এনজিপি টার্মিনাল থেকে মিতালী এক্সপ্রেসের টিকিট দেওয়া হবে। তবে টিকিট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে মূল পাসপোর্ট প্রয়োজন। অবশ্য এই নিয়ম তিন ট্রেনের ক্ষেত্রেই।

ফলে বিমান, বাসের, পর এইদিন থেকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল পুরোপুরি শুরু হয়ে গেল। মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা-কলকাতার মধ্যে চলাচল করে। বন্ধন চলে খুলনা-কলকাতা পথে এবং মিতালী এক্সপ্রেস চলাচল করবে নিউ জলপাইগুড়ি-ঢাকার মধ্যে।

বাংলা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Back to top button