হুন্ডির মাধ্যমে শত কোটি টাকা পাচার করেছেন রাসেল
চটকদার সব পণ্যের অফার দিয়ে আলোচনায় আসা ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল প্রায় শত কোটি টাকা কয়েকটি দেশে পাচার করেছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে উঠে এসেছে। ওই টাকা তিনি পাচার করেছেন হুন্ডির মাধ্যমে। তার সঙ্গে মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার দুইজন হুন্ডি ব্যবসায়ীর যোগসাজশ পাওয়া গেছে। তারা হলেন, সুমন ও আব্দুল মান্নান। রাসেল ধরা পড়ার আগেই তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাদের খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আটকের পর থেকেই রাসেল দম্পতি একই কথা বলছেন, টাকা সব নষ্ট হয়ে গেছে। কীভাবে নষ্ট হয়েছে সেটারও একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন যা মোটামুটি সত্য বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। যেমন তার অফিসের প্রতি মাসে বেতন বাবদ ব্যয় হতো কমপক্ষে ৬ কোটি টাকা। এ হিসেবে আড়াই বছরেই তো টাকা চলে গেছে পৌনে দু শো কোটি। টেলিভিশনগুলোর টক শোতে থাকত ইভ্যালির লগো দিয়ে স্পন্সর। একইভাবে দেশব্যাপী ছিল বিলবোর্ড।
টাকা পাচারের বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। রাসেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার ইভ্যালি থেকে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের পাশাপাশি তাকে যারা সরাসরি পণ্য সরবরাহ করতেন তারাও পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তিনটি বড় বড় প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কাছে কমপক্ষে ২২৫ কোটি টাকা পাবে। ওই টাকা উদ্ধারে তারা এখন শঙ্কায় আছে। বিষয়টি নিয়ে তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হবেন বলে জানা গেছে।
গত ফ্রেব্রুয়ারি থেকেই ইভ্যালির অ্যাকাউন্টসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড নজরদারি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে না থাকে তাহলে হয়তো হুন্ডি বা অন্য কোনো মেথডে হয়েছে। এটা নির্ভুলভাবে নিশ্চিত করতে পারে একমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ওই দম্পতি খুব ঘন ঘন বিদেশ সফর করতো। সরাসরি বা অন্য চোরাই পথে টাকা পাচার করেছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে রাসেল ও নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গুলশান থানায় ইভ্যালির এক গ্রাহকের করা মামলার প্রেক্ষিতে তাকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। পরে গুলশান থানা পুলিশ তাকে আদালতে প্রেরণ করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। পরে আদালত তাদের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তারা এখন গুলশান থানায় পুলিশের রিমান্ডে আছেন বলে জানা গেছে।
র্যাব জানায়, কাওরানবাজারে একটি প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মরত থাকা অবস্থায় রাসেল ই-কমার্স বিজনেস করার পরিকল্পনা করেন। এতে যুক্ত করেন তার স্ত্রী নাসরিনকে। মূলত তার এ কোম্পানিকে পারিবারিক বিজনেসে রূপান্তরিত করার জন্যই তিনি তার স্ত্রীকে যুক্ত করেন।
সূত্র জানায়, ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশে টাকা পাঠালে তিনি বিতর্কের মধ্যে পড়তে পারেন এজন্য তিনি হুন্ডিকে বেছে নেন। হুন্ডির মাধ্যমে নির্বিঘ্নে তিনি গ্রাহকদের টাকা এবং ইভ্যালি থেকে আয়কৃত টাকা দেশের বাইরে নিয়ে গেছেন।
সূত্র জানায়, যেসব গ্রাহকেরা তার কাছে কোনো পণ্য পেতেন না তারা রাসেলের ইভ্যালির অফিসে ধরনা দিতেন। তার লোকজন কৌশলে ওইসব গ্রাহকদের ই- মেইল নিয়ে ফেসবুকে ইভ্যালির অন্য গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারির ছবি সেন্ড করতেন। পরে যেসব গ্রাহক পণ্য পায়নি তারা আশায় ছিলেন যে, তারা হয়তো পণ্য ডেলিভারি পাবেন। এভাবে রাসেল প্রতারণা করে ইভ্যালির ব্যবসাকে আরও উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছেন।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল বলেছেন, ইভ্যালির গ্রাহক সংখ্যা ৪৪ লাখেরও বেশি। শিশুদের নানা পণ্যের ব্যবসা ছেড়ে সামান্য পুঁজি নিয়ে রাসেল ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যনন্ত ইভ্যালির দায় ছিল ৪০৩ কোটি টাকা, যেখানে তাদের সম্পদ ছিল ৬৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন সংস্থার এসব প্রতিবেদনের বিষয়ে রাসেল র্যাবকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।