অপরাধআইন-আদালত

মেজর সিনহা হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দফার সাক্ষ্য

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় দিনে আজ সোমবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৯ নম্বর সাক্ষী মো. কামাল হোসেন। জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এই সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় ছিলেন বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাস, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৫ আসামি।

সাক্ষ্য দেওয়ার সময় কামাল হোসেন আদালতকে বলেন, মেরিন ড্রাইভ সড়কের শাপলাপুর তল্লাশিচৌকির কাছে সিনহাকে যখন গুলি করা হয়, তখন আশপাশে ছিলেন তাঁরা কয়েকজন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন গুলি খেয়ে সিনহা রাস্তায় পড়ে আছেন। কিছুক্ষণ পর টেকনাফের দিক থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ (টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি) ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং সিনহার দিকে এগিয়ে যান। এ সময় সিনহা বাঁচার জন্য ‘পানি পানি’ করছিলেন। পানি না দিয়ে উল্টো সিনহার বুকে লাথি মারেন প্রদীপ। এরপর পা দিয়ে গলা চেপে ধরে সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করেন প্রদীপ।

মো. কামাল হোসেনের বাড়ি টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায়। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে খুন হন সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিলেন।মামলাসংশ্লিষ্ট একাধিক আইনজীবী কামাল হোসেনের এই সাক্ষ্যের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আইনজীবীরা জানান, সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় শুরু হয় কামাল হোসেনের সাক্ষ্য গ্রহণ। জবানবন্দি শেষে দুপুরে শুরু হয় আসামিপক্ষের আইনজীবীদের জেরা। বেলা দুইটায় এক ঘণ্টা বিরতি দেন বিচারক। এরপর বেলা ৩টায় পুনরায় শুরু হয় আসামিপক্ষের আইনজীবীদের জেরা। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে শেষ হয় আসামিপক্ষের ১৫ জন আইনজীবীর জেরা।

সন্ধ্যায় আদালত প্রাঙ্গণে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের আইনজীবী রানাদাশ গুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, মামলার সাক্ষী মো. কামাল হোসেন পেশায় অটোরিকশা চালক। ঘটনার পরপর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, আজকের (সোমবারের) জেলা জজ আদালতে দেওয়ার জবানবন্দির মধ্যে মিল নেই। মূলত বিশেষ একটি স্বার্থান্বেষী মহলের নির্দেশে আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন কেউ কেউ।

জেরা শেষে সন্ধ্যায় আদালত প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আজকেও (সোমবার) একজন মাত্র সাক্ষী মো. কামাল হোসেনের জবানবন্দি ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের জেরা সম্পন্ন হয়েছে। যদিও সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালতে চারজন সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরার নামে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে কথা বলায় বিচারকাজে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে।

সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট ৪টি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে ৩টি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার ৫ দিন পর অর্থাৎ ৫ই আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

উল্লেখ্য যে, ২০২০ সালের ৩১শে জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

Back to top button