বাড়ি এক্সক্লুসিভ পর্দায় টিকটকার অপু’র অভিষেক ও এক থিয়েটার কর্মীর হতাশা

পর্দায় টিকটকার অপু’র অভিষেক ও এক থিয়েটার কর্মীর হতাশা

0
পর্দায় অপু ভাইয়ের অভিষেক ও এক থিয়েটার কর্মীর হতাশা

আলোচিত নির্মাতা অনন্য মামুনের ওয়েব সিরিজে দেখা যাবে জনপ্রিয় টিকটকার ইয়াছিন আরাফাত ওরফে অপু ভাইকে। অপু ভাইয়ের ওয়েব সিরিজ অভিষেক প্রসঙ্গ ও নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা ফেসবুকে শেয়ার করেছেন রাকিব সিদ্দিকী নামের এক থিয়েটার কর্মী। 

ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো :সপ্তাহে তিন দিন ফার্মগেট থেকে পায়ে হেঁটে টিএসসি গিয়ে থিয়েটার করে নিজেকে তৈরি করেছি। পাশাপাশি টানা তিন বছর কোনো একজন ডিরেক্টরের পিছনে সময় দিয়ে একটি সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি, চরিত্রটি নিয়ে নানান রকম স্বপ্ন দেখেছি, ভেবেছিলাম বড় পর্দায়ে নিজের অভিনয়টুকু দেখে নিজের অভিনয়ের স্বাদ নিজেই গ্রহণ করবো। নিজেকে চরিত্রের প্রয়োজনে প্রস্তুত করছিলাম, সাথে সাথে অপেক্ষায় ছিলাম কবে শুরু করবেন ডিরেক্টর সিনেমাটির শুটিং। ’

‘দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরে সিনেমাটির শুটিংয়ে গিয়ে নানান রকম বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হয়ে টানা ১২ দিন/রাতের একটি লট করে ঢাকায় ফিরেছিলাম বিনা পারিশ্রমিকে। ব্যক্তিগত খরচের টাকাটাও চাইনি ডিরেক্টরের কাছে কারণ তার জন্য ছিল আমার শ্রদ্ধা ও সম্মান। তবে অপেক্ষায় ছিলাম পারিশ্রমিকের, ডিরেক্টর অন্যদের পারিশ্রমিক দিলেও তিনি আমাকে কোনো পারিশ্রমিক দেননি। কিছু মাস পরে আবার দ্বিতীয় লট করতে ঢাকার বাহিরে যাই পুরো টিম। সেখানেও অত্যন্ত বাজে অভিজ্ঞতার সাথে টানা ৮ দিন/রাত শুটিং করে ঢাকায় ফিরেছি বিনা পারিশ্রমিকে। ’

‘এবার একজন শিল্পী হয়ে নিজের পারিশ্রমিক দাবি করলে ডিরেক্টর আমাকে বলেন, কী ডকুমেন্টস আছে তোমার কাছে যে তুমি আমার কাছে পারিশ্রমিক দাবি করছো? আমি কিছু সময় চুপ থেকে তাকে জবাব দিলাম, দাদা আমি আপনাকে এতো দিন আমার অভিভাবক মনে করেছি। আপনার পিছনে দীর্ঘদিন সময় দিয়ে আপনার ব্যক্তিগত কাজগুলো করে দিয়েছি শুধু আপনাকে ভালোবেসেছি বলে, বিশ্বাস করেন দাদা যদি আমার টাকাটা প্রয়োজন না হতো তাহলে আমি আপনার কাছে টাকা কখনই চাইতাম নাহ, সত্যি দাদা আমার কিছু টাকার খুবই দরকার যদি পারেন আমাকে কিছু টাকা দিয়েন। ’

আমার এই কথা বলায় সে মিডিয়ার অন্যান্য ব্যক্তিদের দিয়ে আমাকে উদাহরণ দেয় যে আমি পারিশ্রমিক দাবি করলে আমি নাকি মিডিয়াতে টিকতে পারবো না। আমি তার উদাহরণ শুনে বুঝতে পারছিলাম তিনি আমার বিশ্বাস আর ভালোবাসার দুর্বলতার সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে এতোগুলো দিন আমাকে ব্যবহার করেছেন। আমার সময়গুলো নষ্ট করেছেন। কাজের কোনো চুক্তিপত্রই তিনি আমার সাথে করেননি। আর আমিও ভুল করেছিলাম তাকে ভালোবাসার ফলে ঐ চুক্তিপত্রটিকে গুরুত্ব না দিয়েই তার প্রতি বিশ্বাস রেখে কাজ করতে গিয়েছি কঠোর পরিশ্রম করেছি।

তারপর আমি বাধ্য হয়ে প্রডিউসারের সাথে যোগাযোগ করি ফোন কলের মাধ্যমে, তাকে খুলে বলি আমার সাথে হওয়া ঘটনাগুলো। তিনি আমাকে এক কথায় জবাব দেয় যে রাকিব তোর, টাকার তো হিসাব হয়েছে প্রথম লটের টাকাতো আমি দিয়ে দিয়েছি। তখন আমি তাকে নিজে লজ্জার সাথে বলি যে দাদা সেই টাকাটা আমি পাইনি। যাই হোক দাদা আপনি এই লটের টাকাটা আমার বিকাশে দিয়েন অন্য কারও হাতে দিয়েন না। তখন তিনি আমাকে বলেন যে রাকিব তুই ভাই কষ্ট পাইছো নাহ। আমি তোকে এবার নিজের হাতে টাকাটা দেবো।

ঈদের আগ মুহূর্ত ছিল বলে টাকাটা সত্যি আমার খুবই প্রয়োজন ছিল প্রডিউসার আমাকে আজ না কাল করতে করতে অনেক দিন ঘুরিয়ে ঈদের আগের দিন আমার বিকাশ নাম্বারে মাত্র ১ হাজার টাকা পাঠায়। এক হাজার টাকা পেয়ে আমার মনে হচ্ছিল যে শিল্পীরা এতোটা মূল্যহীন।

আমার এই স্ট্যাটাসটা যে পড়ছেন তার বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন, আমি এই লজ্জাকর কথাগুলো কার কাছে বলতাম? আমি কার কাছে আমার দাবির কথা বলতাম? আমার কিছুই করার ছিল না, আমি চুপ করে ছিলাম এতোগুলো দিন। কিন্তু আজ লিখলাম কেনো জানেন!

যারা কিনা উচ্চারণ করতে জানেন না, যারা কিনা থিয়েটার করেননি, যারা কিনা অভিনয় জানেন না, যারা কিনা শিক্ষামূলক কিছু করেন না, যারা কিনা ম্যানার জানেন না, যারা কিনা শুধু মাত্র টিকটক করে আমার এই ইন্ডাস্ট্রির স্বনামধন্য পরিচালকের এক মাসের অভিনয়ের প্রশিক্ষণ দ্বারা অভিনেতা হয়ে উঠবেন।

আমার না এই স্বনামধন্য ডিরেক্টরের উপর রাগ হচ্ছে না বরং আমার নিজেকে নিজের অসহায় মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে থিয়েটার করে এখন আর কোনো লাভ নেই মনে হয়। হতে হবে হাস্যকর কোনো ব্যক্তি, তাহলেই ডিরেক্টরের মূল্যবান দৃষ্টি পড়বে। থিয়েটারকর্মী হয়ে আমিতো কোনো মূল্যায়ন পাইনি, যা পেয়েছেন টিকটক করে অপু ভাই।

আমি কাউকে নিয়ে কোনো অভিযোগ করছি না। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো শেয়ার করছি। আচ্ছা আপনারা কী আমাকে আমার প্রতিবাদের জায়গাটা দেখিয়ে দেবেন, যেখানে গিয়ে আমি আমার প্রতিবাদটুকু করতে পারবো, বা আমি আমার পারিশ্রমিকটা দাবি করতে পারবো।

পুরো ইন্ডাস্ট্রির কাছে আমার দাবি আমি দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে এ সমাজে বেঁচে থাকতে চাই, নিজের শিল্পচর্চা দিয়ে পারিশ্রমিকটা পেতে চাই। যারা সত্যিকারের শিল্পী তাদের অভিভাবক হিসেবে চাই।আমার কথাগুলো সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি কারও বিপক্ষে অভিযোগ করছি না। আমি শুধুই আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি।