বাড়ি অপরাধ ডা. ফেরদৌসের বিরুদ্ধে পাঁচ নারীর যৌন হয়রানির মামলা

ডা. ফেরদৌসের বিরুদ্ধে পাঁচ নারীর যৌন হয়রানির মামলা

0
ডা ফেরদৌসের বিরুদ্ধে পাঁচ নারীর যৌন হয়রানির মামলা

নিউইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের সুপরিচিত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করেছেন কুইন্স এলাকার পাঁচ নারী। বিভিন্ন সময়ে রোগীদের যৌন নির্যাতন, অকারণে বুক স্পর্শ করা, এমনকি ১৪ বছরের কম বয়সী মেয়েদের অযৌক্তিক স্তন পরীক্ষাসহ নানাভাবে নারী রোগীদের হয়রানির অভিযোগে কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে এ মামলা দায়ের করা হয়।  এ খবর দিয়েছে নিউ ইয়র্কের জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম দ্যা সিটি।

প্রায় এক বছর আগে করা অভিযোগের ভিত্তিতে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে অবশেষে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন পাঁচ নারী। নিউ ইয়র্কের কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে এ মামলাটি দায়ের করেন তারা। এদের মধ্যে চারজন বাংলাদেশি। এরা সবাই জ্যাকসন হাইটসে থাকেন।

কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলার বরাত দিয়ে দ্যা সিটি জানায়, ডা. ফেরদৌস গত দুই দশক ধরে অকারণে নারী রোগীদের বুক স্পর্শ করাসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করে যাচ্ছেন। পাঁচ নারী  অভিযোগ করেন, দুই দশক ব্যাপী ঘটনাগুলিতে খন্দকার ফেরদৌস তাদের বুক স্পর্শ করেছিল। এমনকি সামান্য গলাব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে তার কাছে গেলেও অযাচিতভাবে স্পর্শকাতর অঙ্গে হাত দেয়ার পাশাপাশি অনেক সময় তাদেরকে আংশিক পোশাক খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন ডা. ফেরদৌস।  অভিযোগে ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে একজন ‘সিরিয়াল যৌন শিকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করে বলা হয়, যিনি কয়েক দশক ধরে চিকিৎসা সেবা প্রদানের নামে কয়েক ডজন নারী ও তরুণীকে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি করেছেন।

আদালতে দায়েরকৃত একটি ক্লাস-অ্যাকশন মামলা থেকে জানা যায়, ফেরদৌস খন্দকার বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসার নামে রোগীদের যৌন নির্যাতন করেছেন। তিনি ১৪ বছরের কম বয়সী মেয়েদেরকে অযৌক্তিক স্তন পরীক্ষার নামে শ্লীলতাহানি করেছেন। পরীক্ষার নামে শ্লীলতাহানির ঘটনা প্রায় ২০ বছর ধরে চালিয়ে আসছেন তিনি।

দ্যা সিটি জানায়, গত বছর কয়েকজন মহিলা ডা. ফেরদৌসের অশোভন আচরণের বিরুদ্ধে অনলাইনে পোস্ট দিয়ে প্রতিবাদ করায় তিনি তিনজনের বিরুদ্ধে ১০ লাখ ডলারের মানহানির মামলা দায়ের করেছিলেন। আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়ে বিবাদির আইনজীবীর পারিশ্রমিক পরিশোধ করার জন্য ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে নির্দেশ দেন। সে প্রেক্ষাপটে তার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হলো।

এ মামলা প্রসঙ্গে আইনজীবী সুসান ক্রুমিলার বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, ফেরদৌস খন্দকার তার এ কর্মকাণ্ডের জন্য সারা জীবন অনুশোচনা করবেন। কারণ, তার মতো লোকের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য বিশেষ সাহস দরকার। তিনি মনে করেছিলেন মানহানি মামলা করলে হয়রানির শিকার নারীদের চুপ করিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু হিতের বিপরীত হয়েছে। অবমাননার শিকার নারীরা এখন এগিয়ে এসেছেন।এ মামলার পর ফেরদৌস খন্দকার ও তার অ্যাটর্নি কারো কাছে থেকে কোনো মন্তব্যে পাওয়া যায়নি। 

মানহানির মামলায় আইনি নথিতে ফেরদৌস খন্দকার বলেছিলেন, তিনি তার রোগীদের যৌন নিপীড়ন করেন না। এমনকি তিনি কখনও কাউকে শ্লীলতাহানি করেননি। তিনি যে কারণে রোগী দেখছেন এর বাইরে প্রয়োজন ছাড়া ‘স্তন’ পরীক্ষাও করেননি। তার মানহানির দাবি খারিজ করে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।

পাঁচজন নারীর প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবি ও নারীবাদী লিটিগেশন সংস্থা ক্রুমিলার পিসি’র পরিচালক সুসান ক্রুমিলার দ্যা সিটিকে জানান, খন্দকার ফেরদৌস ভেবেছিলেন মামলা করলে হয়রানির শিকার নারীরা মুখ বন্ধ করে ফেলবে কিন্তু হয়েছে তার বিপরীত।  তারা সামনে এগিয়ে এসে প্রতিবাদী হয়েছেন। তিনি বলেন, মানহানির মামলা করার জন্য খন্দকার ফেরদৌসকে বাকি জীবন অনুশোচনা করতে হবে।

সুসান বলেন, ‘আমার কল্পনার বাইরে ক্লাস-অ্যাকশন মামলাটিতে ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের বিবরণ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এক মহিলা তার মায়ের সাথে জ্যাকসন হাইটসের ৩৭তম এভিনিউতে ফেরদৌস খন্দকারের অফিসে যাওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। অফিসে থাকাকালীন ২৩ বছর বয়সী ওই নারী ফেরদৌস খন্দকারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তিনি কি তাকে “নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা” দিতে পারেন? তিনি তাকে একটি পরীক্ষা কক্ষে নিয়ে যান। ফেরদৌস তাকে বলেন পরীক্ষার আগে একটি চেক-আপ করা দরকার। এসময় তিনি রোগীর শার্টটি টেনে তোলার চেষ্টা করেন। ভুক্তভোগী নারী তা জোর দিয়ে প্রতিরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত তার শার্টটি তার ঘাড় পর্যন্ত টেনে আনেন। পরে তিনি স্টেথোস্কোপটি ওই নারীর ব্রা’র নিচে রেখেছিলেন। এসময় ফেরদৌস প্যাডিং এবং টাইটনেস সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন। ফেরদৌস তার বুকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন এবং আঙ্গুল দিয়ে তার স্তনবৃন্ত স্পর্শ করেন। ওই নারী তখন ডা. ফেরদৌসকে আরও জোরে ধাক্কা দেন।’

তিনি বলেন, ‘এসময় তিনি ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। তার মাকে নিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার মাকে পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন। এরপর থেকে তিনি ফেরদৌস খন্দকারের সাথে আর কখনো মুখোমুখি না হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। সেদিনের পর থেকে সে তার ফেসবুক পেজে কথিত ঘটনা সম্পর্কে পোস্ট করেন। এটি একটি ফেসবুক বন্ধুর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে পোস্টটি লেখা হয়েছে।’

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিউইয়র্ক প্রবাসী এক আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘মেডিসিন বিশেষজ্ঞের দাবিদার ও নামধারী ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার সব ধরনের রোগের চিকিৎসা করেন। নারী রোগীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ইউটিউব এবং ফেসবুক খুললেই দেখা যায় তার বিভিন্ন ধরনের ভিডিও। কী নেই তার ভিডিওতে? যৌন চিকিৎসা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক করোনা চিকিৎসায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসার নামে ভিডিও বানিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে হিরো বনে যান রাতারাতি।’