এক্সক্লুসিভ

এবার ১৮০০ কোটি টাকা কানাডায় পাচার করলো পিরোজপুরের খালেক

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক চেয়ারম্যান ও ট্রাস্টি এম এ খালেকের বিরুদ্ধে ৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ২৮০ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া ও তিনটি ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে এম এ খালেকের বিরুদ্ধে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়মের বিষয়ের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। যার বড় অংশই কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে এম এ খালেকের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। কমিশনের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখার সহকারী পরিচালক মো. আতাউর রহমান সরকারকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নোটিস পাঠিয়ে তাকে ৪ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে বলেন। এম এ খালেক দুদকে হাজির না হয়ে সময় চেয়ে আবেদন করেন। এ অবস্থায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা ৪ মার্চ তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশন কর্র্তৃপক্ষকে চিঠি দেন। দুদকের চিঠিতে এম এ খালেকের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (২৬৯২৬১৯৫৭৬৮১৮), বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর (বিএন ০০১৬০৭৮) ও কানাডিয়ান পাসপোর্ট নম্বর (বিএ ৬৫৩৮১০) উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিকানা লেখা হয়েছে, পিতা মৃত এম ইউ হাওলাদার, বাড়ি নং ৩১, রাস্তা ১২৩, গুলশান-১।

দুদকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক বলেন, ‘পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার বাসিন্দা এম এ খালেক কীভাবে এত সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়েছেন সেটা সত্যিই বিস্ময়কর। তিনি এক ডজনেরও বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে থেকে সেখান থেকে বিভিন্ন কৌশলে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে কানাডায় পাচার করেছেন। তিনি কানাডায় নামে-বেনামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করেছেন। দুদক সেগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছে। তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্বের পাশাপাশি কানাডার নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তিনি কী পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার করেছেন, সেগুলোও অনুসন্ধানের আওতায় আনা হবে।’

দুদকে জমা হওয়া অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ব্যাংক, বীমা, সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা এম এ খালেক। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পদসহ উচ্চপদে থেকে বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ১ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এ কারণে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের সংকটে পড়ে। ২০১০ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা সরিয়ে কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পাচার শুরু করেন। এম এ খালেক ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রাইম ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজের ৩০৫ কোটি টাকা, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ৩৭৬ কোটি টাকা, প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজের ২০ কোটি টাকা, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০০ কোটি টাকা, পিএফআই প্রপার্টিজের ১৫০ কোটি টাকা, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ১৬৭ কোটি টাকা, ফারইস্ট স্টক অ্যান্ড বন্ডের ৫০ কোটি টাকা, পিএফআই ক্যাপিটালের ১৫ কোটি টাকা সরিয়েছেন। এ ছাড়া শেয়ার ব্যবসা, পরিবারের সদস্য ও কর্মচারীদের নামেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এম এ খালেক আল-আরাফাহ ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ম্যাকসন্স বাংলাদেশ, ম্যাকসন্স বে লিমিটেড, গ্যাটকো, গ্যাটকো অ্যাগ্রো ভিশন ও গ্যাটকো টেলিকমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়েছেন প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। যার পুরোটাই খেলাপি।

দুদকে জমা হওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, ঢাকার প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি এম এ খালেকের কাছে পাবে ১৬৭ কোটি টাকা। প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশনের হিসাব থেকে তার প্রাইম ব্যাংক মতিঝিল ও বনানী শাখার হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৯০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়; যা সুদ-আসলে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬৭ কোটি টাকা। একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা এম এ খালেক নিজের ব্যাংক হিসাবে সরিয়েছেন। ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা তার স্ত্রী সাবিহা খালেক, ভাগ্নে মিজানুর রহমান, কর্মচারী মো. তাজুল ইসলাম ও ম্যাক্সসন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের হিসাবে স্থানান্তর করেছেন। এ ছাড়া প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশন থেকে ২১ কোটি টাকা বিভিন্ন নামে পে-অর্ডারের মাধ্যমে স্থানান্তর করেছেন, যা ফাউন্ডেশনের হিসাব বিবরণীতে ধরা পড়েছে।

আরও দেখুন
Back to top button
ইব্রাহিম রাইসি যেভাবে ৫০০০ মানুষকে হত্যা করেছিলো Bangladeshi mountaineer Babar Ali climbs Mount Everest সাঁতারের নিষিদ্ধ পোশাকে নারীদের ফ্যাশন শো সৌদিতে