বাড়ি এক্সক্লুসিভ বায়ুদূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ুদূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

1
বায়ুদূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

রাজধানী ঢাকা আবারও বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষ শহরে উঠে এসেছে। শনিবার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে ১৮৪ বায়ুমান সূচক নিয়ে বিশ্বে বায়ুদূষণের দিক থেকে শীর্ষস্থান দখল করেছে ঢাকা। দ্বিতীয়স্থানে চীনের চ্যাংডু (১৭৬), তৃতীয়স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর (১৬৯)। এছাড়াও যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা (১৪৮), পাকিস্তানের করাচি (১৪৩) ও ভারতের দিল্লি (১৩৯) ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠতম স্থান দখল করে রেখেছে।

১৮৪ বায়ু মান নিয়ে ঢাকার বাতাস সকলের জন্য অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় রয়েছে। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। অস্বাস্থ্যকর বাতাসে সর্দিকাশি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর এতে করোনা বিস্তারের ঝুঁকিও অনেক বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এড়াতে মানুষ ঘরবন্দি হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে প্রকৃতি ফিরে পেয়েছিল সৌন্দর্য্য। ঢাকার বাতাসও শুদ্ধতায় ফিরেছিল। তবে, বর্ধিত সাধারণ ছুটিতে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করায় রাজধানীতে বাড়তে শুরু করেছে বায়ুদূষণ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার দিন ও রাতের বেশির ভাগ সময় বাংলাদেশের রাজধানীর বায়ু ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর।এদিকে হিমালয়ের হিমেল হাওয়া উত্তরাঞ্চল পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ায় অনেক স্থানে হাড়কাঁপানো শীত টের পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে পারদ ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ইতিমধ্যে শৈত্যপ্রবাহের তাপমাত্রা চলে এসেছে।

গত ফেব্রুয়ারি-মার্চেও এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকার বায়ুমান ছিল সবচেয়ে শোচনীয়। তখন ঢাকা ছিল বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের মধ্যে শীর্ষে। তবে,করোনা সংক্রমণের মুখে এপ্রিলের শুরু থেকে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। দূষণ মাত্রা নেমে যায় ১০০ এর নিচে।লকডাউন শিথিল করার পর মে মাসের ৬-৭ তারিখ থেকে ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়তে থাকে। ১৬ মে সকালে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে ঢাকার বায়ুমান পৌঁছেছে ১৮৪ তে। এটা খুবই অস্বাস্থ্যকর। চলতি সপ্তাহেই হয়তো ২৫০ ছাড়িয়ে যাবে ঢাকার বায়ুমান পরিস্থিতি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকায় শৈত্যপ্রবাহের তাপমাত্রা চলে আসতে পারে। আর সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে এক থেকে দুই ডিগ্রি। এ সময়ে দিনের তাপমাত্রাও সামান্য কমতে পারে। ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। এরপর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহ তীব্রতা পেতে পারে। সকালের দিকে দেশের কোথাও কোথাও কুয়াশা পড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ যখন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন দেশে শীতের তীব্রতা বাড়ে। এটি এখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডিসেম্বরের বাকি সময়জুড়ে শীত ক্রমেই বাড়তে থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, রোববার সকাল থেকে রাজধানীর আকাশে রোদের দেখা মিললেও সন্ধ্যার পর শীত নামতে থাকে। গত এক দিনে রাজধানীর তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রি কমে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এদিন চট্টগ্রাম বিভাগ ছিল কিছুটা উষ্ণ। সেখানকার তাপমাত্রা ১৭ থেকে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণা থেকে জানা আয়, মার্চ মাসে ঢাকার বায়ুদূষণ এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। ওই সময় বায়ুমান সূচকে ১০০ থেকে ১২১ এর মধ্যে ওঠানামা করছিল ঢাকার অবস্থান। বায়ুদূষণে শীর্ষ তিন অবস্থান কাটিয়ে উঠে ঢাকার ১০ থেকে ১৫ নম্বরের দিকে স্থানান্তরিত হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, বায়ুমান সূচকে শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে অবস্থান করলে ওই শহরের বায়ুমান পরিস্থিতি ভালো বলা হয়, ৫১ থেকে ১০০ এর মধ্যে সূচক থাকলে বায়ুমান পরিস্থিতি সন্তোষজনক, ১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে থাকলে অসুস্থ মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে বায়ুমান সূচক থাকলে সকলের জন্য অস্বাস্থ্যকর আর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে বায়ুমান সূচক থাকলে ওই শহরের বাতাস খুবই অস্বাস্থ্যকর´ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।