বাড়ি অর্থ ও বাণিজ্য আমাদের মতো গরিবদের ওপরই সব চাপ এসে জোটে

আমাদের মতো গরিবদের ওপরই সব চাপ এসে জোটে

0
আমাদের মতো গরিবদের ওপরই সব চাপ এসে জোটে

আর মাত্র কয়েকদিন পরই নতুন বছর শুরু। এরই মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে বাসাভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে। কিছু বাড়িওয়ালা বাসাভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে অগ্রিম জানিয়ে রাখছেন ভাড়াটিয়াদের।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। বেতন সর্বসাকল্যে ৩১ হাজার টাকা। খিলগাঁওয়ের জোরপুকুরে সাড়ে ১৪ হাজার টাকায় ভাড়া থাকেন। বাড়িওয়ালা নোটিশ দিয়েছেন, আগামী মাস থেকে ১ হাজার টাকা বাসা ভাড়া বাড়বে। যুক্তি দেখিয়েছেন পানি ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের। তাই বাসাভাড়া না বাড়ালে চলছে না।

রাজধানী ঢাকায় বিপুল মানুষের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ বাসিন্দার নেই স্থায়ী বাসস্থান। ভাড়াটিয়াদের অপ্রতুল নাগরিক সুবিধার পাশাপাশি নিত্যসঙ্গী অতিরিক্ত বাড়িভাড়া। আর এখানেও ঠকছেন নিম্নবিত্তরাই।

বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের বসবাসের এলাকার বাসাভাড়া তুলনামূলক বেশি। বিপরীত চিত্র উচ্চবিত্তদের এলাকায়। সেখানে বাসার আয়তন অনুসারে ভাড়া কম। সম্প্রতি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঢাকা মহানগর এলাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০২২-২০৩৫-এর মাস্টার প্ল্যানেও বাসাভাড়ার এমন বৈষম্যের বিষয়টি উঠে এসেছে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘চাকরি করে টিকে থাকাটাই দায়। করোনার সময় অর্ধেক বেতনে চাকরি করেছি। এখন আবার গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছি। এর মধ্যে সবকিছুর দাম বেড়েছে। জীবন চলছে কোনোমতে। আবার ১ হাজার টাকা বাসাভাড়া বাড়ছে। আমাদের মতো গরিবদের ওপরই সব চাপ এসে জোটে।’ কেবল আব্দুল্লাহ আল মামুনই নন, গত কয়েক দিনে অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানা গেছে বাসাভাড়া বৃদ্ধির এমন সিদ্ধান্তের কথা।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঢাকা মহানগর এলাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০২২-২০৩৫-এর মাস্টার প্ল্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, সেখানে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের এলাকায় বাসাভাড়ার বৈষম্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, নিম্নবিত্তের বসবাসকারী এলাকায় ৮০ স্কয়ার ফিটের একটি রুমের ভাড়া ২ হাজার ৯০০ টাকা, ১০০ স্কয়ার ফিটের একটি রুমের ভাড়া ৩ হাজার ৬০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি স্কয়ার ফিটের ভাড়া ৩৬ টাকা। এসব বাসায় একটি লাইট, একটি ফ্যান, যৌথ টয়লেট ও যৌথ রান্নাঘর থাকে। বাতাসের অবাধ চলাচলের সুযোগ নেই। এ ছাড়া ঘিঞ্জি পরিবেশে প্রাকৃতিক আলোও পাওয়া যায় না। অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঢাকা মহানগর এলাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০২২-২০৩৫-এর মাস্টার প্ল্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, সেখানে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের এলাকায় বাসাভাড়ার বৈষম্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, নিম্নবিত্তের বসবাসকারী এলাকায় ৮০ স্কয়ার ফিটের একটি রুমের ভাড়া ২ হাজার ৯০০ টাকা, ১০০ স্কয়ার ফিটের একটি রুমের ভাড়া ৩ হাজার ৬০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি স্কয়ার ফিটের ভাড়া ৩৬ টাকা। এসব বাসায় একটি লাইট, একটি ফ্যান, যৌথ টয়লেট ও যৌথ রান্নাঘর থাকে। বাতাসের অবাধ চলাচলের সুযোগ নেই। এ ছাড়া ঘিঞ্জি পরিবেশে প্রাকৃতিক আলোও পাওয়া যায় না। অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই।

ধানমন্ডি, গুলশান ও বনানী এলাকার চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, এসব এলাকায় বাসার আয়তনের তুলনায় ভাড়া কম। ২ হাজার ৫৫০ স্কয়ার ফিটের একটি বাসার ভাড়া ৬০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতি স্কয়ার ফিটের ভাড়া হয় ২৩ টাকা ৫০ পয়সা। তবে এসব বাসায় থাকে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা। প্রাকৃতিক আলো-বাতাসও পাওয়া যায়।

শুধু তা-ই নয়, এসব এলাকায় প্রশস্ত রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, গ্যাসের সুবিধাসহ নানা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বিপরীত চিত্র নিম্নবিত্তদের বসবাসকারী এলাকায়। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের পাশাপাশি প্রশস্ত রাস্তাঘাট ও মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও অভাব রয়েছে।

বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১-এর ১০ ও ২৩ ধারা মোতাবেক বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রকের লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনোভাবেই বাড়ির মালিক তার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ এক মাসের বাড়িভাড়ার অধিক কোনো ধরনের ভাড়া, জামানত, প্রিমিয়াম বা সেলামি গ্রহণ করতে পারবেন না।

গ্রহণ করলে দণ্ডবিধি-২৩ ধারা মোতাবেক তিনি দণ্ডিত হবেন। এ ছাড়া দুই বছরের আগে ভাড়া বাড়ানো যায় না। ভাড়াটিয়া ও মালিকপক্ষকে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭ ধারা মতে, কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার অধিক ভাড়া কোনোভাবেই আদায়যোগ্য হবে না।

ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ সমস্যা সমাধানে ভাড়ার টাকায় মানুষকে ফ্ল্যাট দেওয়ার একটা প্রস্তাব রয়েছে। ঢাকা ও এর আশপাশে ৫৮টি স্থান আমরা প্রাথমিকভাবে সিলেক্ট করেছি। সেখানে আমরা ১ হাজার ২০০ একর জায়গা নিতে চাচ্ছি। আমাদের টার্গেট ১ লাখ ফ্ল্যাট বানানো। ছোট ছোট ফ্ল্যাট হবে। ৬০০ থেকে ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট।

তিনি বলেন, বর্তমানে বস্তি এলাকার মানুষ মাসে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাড়া দেন। এ টাকাটা আমাদের ২০ বছরের কিস্তিতে দিলে ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে গেল। তাই আমরা ভাড়ার টাকায় ফ্ল্যাটের মালিক, এমন একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছি।