বাড়ি বাংলাদেশ শিক্ষাঙ্গন ছাত্রলীগের কমিটি, গোপনে চালায় ছাত্র শিবির

ছাত্রলীগের কমিটি, গোপনে চালায় ছাত্র শিবির

0
ছাত্রলীগের কমিটি গোপনে চালায় ছাত্র শিবির

পুরনো ও প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র শিবির গোপনে তৎপরতা চালায়। আর সম্প্রতি প্রায় ৪০টি বেসরকারি বিশ্বিবিদ্যালয়ে কমিটি ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এর পরপর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের নোটিশ দিয়েছে।

সবগুলোই বিএনপি-জামাতপন্থী রাজনীতিবিদ ও এনজিও কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত।ছাত্রলীগের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সম্মেলন করেছে। ১ ও ২ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগ সম্মিলিত শাখার সভাপতি জাহিদ হোসেন পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হাকিম সম্রাট স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ব্র্যাক, নর্থসাউথ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ইস্ট-ওয়েস্ট প্রভৃতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ঘোষণা করা হয়।বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ অনুযায়ী। এ আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থাকবে। একজন সদস্য বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হবেন।’

আইনের ১৬ ধারায় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের দায়িত্ব ও ক্ষমতা উল্লেখ করা হয়েছে। আইনের কোথাও রাজনীতি-অরাজনীতির প্রসঙ্গ নেই। [সাধারণ জ্ঞানে বোঝা যায়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এসব হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল নয়। ছাত্ররা তাদের অসুবিধা হলে (কর্তৃপক্ষীয় আচরণে) কথা বলার অধিকার রাখে। আর আঠার বছরের বেশি বয়স হলে যেকোনো ব্যক্তি রাজনৈতিক স্বত্বাধিকারের অধিকারী হয়। সাংবিধানিক এ অধিকারে কারও (সে কর্তৃপক্ষ বা যে নামের সত্তাই হোক) হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। অতএব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে এমন কথা বলা থাকতে পারে না। বলা হলে তা হবে সাংবিধানিক আইনের লঙ্ঘন। অসুবিধার কথা কোন ব্যাকরণ অনুযায়ী বলা হবে, সেটা যারা অসুবিধায় পড়ছে বা সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে তাদের বিষয়। নাগরিক হিসেবে সুবিধাপ্রাপ্তি, নাগরিক হিসেবে রাজনৈতিক অধিকারপ্রাপ্তির এ বিষয়গুলোকে ‘রাজনীতি’ বলে চালিয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা কর্তৃপক্ষীয় আচরণে স্পষ্ট। এটা আসলে ছাত্রদের দাবিকে অস্বীকার করার বাহানা।

সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ট্রাস্ট নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী, বোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বেচ্ছাসেবী, বেসরকারি, অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করেছে।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অধীনে। আর তাদের নিবন্ধন যেহেতু অরাজনৈতিক হিসেবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কোনো রাজনৈতিক দলের কমিটি বা কর্মসূচি করার সুযোগ নেই। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড একটি শিক্ষায়তনকে ‘অরাজনৈতিক’ বলতে পারে তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।গত মঙ্গলবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠি ১০৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতিকে পাঠানো হয়। অনুলিপি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের দেওয়া হয়।

সেখানে বলা হয়, সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী-অভিভাবক মহলের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়টি সম্পর্কে আমরা বিশেষভাবে অবগত হয়েছি। ট্রাস্টের অধীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একটি সেশনজটমুক্ত, অলাভজনক ও অরাজনৈতিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।চিঠিতে আরও বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাজনীতি-সচেতনতা ও সম্পৃক্ততাকে নিরুৎসাহিত করে না। ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকা- চলবে কি না তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত। প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে উপাচার্যরা শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় একমত। ক্যাম্পাসের বাইরে ইতিবাচক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি একান্তই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ঠিক করবেন।

গত বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের জানান, ‘প্রতিষ্ঠান কখনো রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দিতে পারে না। কারণ এটি অধিকার, এটি নিষিদ্ধ করা যায় না। কিন্তু দলীয় রাজনীতি কীভাবে হবে তা নিয়ে প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে তা হওয়া উচিত। আমরা চাই, সেটি ইতিবাচক হোক। সেখানে যেন কোনো নেতিবাচকতা না থাকে। যদি নেতিবাচক কিছু না থাকে আমার মনে হয় না প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আপত্তি থাকার কথা।’গত কয়েকদিন ধরে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি করা যাবে না বলে শিক্ষার্থীদের জানিয়েছে। এমনকি বিনা অনুমতিতে ইউনিভার্সিটির নাম কিংবা লোগো কোনো অনুষ্ঠান, কোনো সংগঠন কিংবা কোনো কর্মসূচিতে ব্যবহার করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের হুমকিও দিয়েছে।

সনদ বিক্রি, লুটপাট, জঙ্গীর চাষাবাদসহ নানা অভিযোগ অভিযুক্ত নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসইউ) তাদের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে জানায়, ‘নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অরাজনৈতিক, অজাতিগত এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপের অনুমতি দেয় না। এনএসইউ পরিবারের সদস্যরা অবশ্যই ক্যাম্পাসের বাইরে তাদের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করতে স্বাধীন।জঙ্গীবাদে অভিযুক্ত আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইইউবি) তাদের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে জানিয়েছে, ‘এআইইউবি একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক কর্মকা- কিংবা রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড অব কন্ডাক্টের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তা গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে।’এনজিও পরিচালিত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ই-মেইলে জানিয়েছে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান এবং কোনো রাজনৈতিক ক্লাব বা সংগঠনকে সমর্থন করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যরা অবশ্যই, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ক্লাব বা সংস্থার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরি করতে পারে।’জামাতপন্থী হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী সবুর খানের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি সরকার অনুমোদিত ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়। নিবন্ধনের স্মারকলিপিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ভেতরে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের কোনো কার্যক্রম করা যাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যরা তাদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মূল্যবোধ অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা গড়তে স্বাধীন।’