বাড়ি অপরাধ শাসন করায় বেপরোয়া ছেলে হত্যা করল ব্যবসায়ী বাবাকে

শাসন করায় বেপরোয়া ছেলে হত্যা করল ব্যবসায়ী বাবাকে

0
শাসন করায় বেপরোয়া ছেলে হত্যা করল ব্যবসায়ী বাবাকে

একমাত্র ছেলে বিপ্লবকে ঘিরে স্বপ্ন ছিল ব্যবসায়ী আবদুল আজিজের। কিন্তু সঙ্গদোষে মাদকাসক্ত ও বেপরোয়া হয়ে পড়ে ছেলে। শাসন করায় বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করে বিপ্লব। ২০ হাজার টাকায় তার বন্ধুদের ভাড়া করে। পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে, তাকে ছাড়িয়ে নিতে বাবাকে ফোন করে ডাকা হয়। ছেলের বিপদ শুনে ছুটে গেলে চলে হত্যাযজ্ঞ। এ ঘটনায় তিন আসামিকে র‍্যাব এবং নিহতের ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে না পারায় সঙ্গদোষে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে বিপ্লব। টাকার জন্য প্রায়ই বাবার ওপর চাপ প্রয়োগ করত সে। মাদক সেবন থেকে ছেলেকে বিরত রাখতে প্রায়ই শাসন করতেন বাবা আজিজ। এ কারণে তিন মাস ধরে বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করে বিপ্লব।

দুই দফায় বন্ধু হোটেল শ্রমিক বিজয় কর্মকার ও হোটেল মালিকের ছেলে তরিকুল ইসলাম রানার হাতে তুলে দেয় ২০ হাজার টাকা। গত ৩০ আগস্ট চলে হত্যার চূড়ান্ত বৈঠক। বিপ্লব তার বন্ধু বিজয়, রানা, আজাহার, রাসেল ও সাধন কর্মকারকে চায়নিজ কুড়াল কেনার জন্য দেড় হাজার টাকা দেয়। একই দিন শ্যামগঞ্জ বাজারে সুমির বণিকের দোকান থেকে কুড়াল কেনে রানা।

এরপর ১ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ৯টার দিকে ব্যবসার কাজ শেষে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন আজিজ। এর কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইলে ফোনে কল আসায় ছুটে যান তিনি। ফোনের অপর প্রান্তে বিপ্লব তার বাবাকে বলে, ‘বাবা আমাকে পুলিশে ধরেছে। আমাকে ছাড়িয়ে নিয়া যাও।’

ছেলেকে ছাড়াতে বাবা বাড়ির কাছের খালপাড়ে যেতেই বিজয় কর্মকারের নেতৃত্বে পাঁচজন আজিজের ওপর হামলা চালায়। বিজয় ও রানা কুড়াল দিয়ে মাথায় ও শরীরের পেছন দিয়ে কোপ দেয়। বাবাকে কুপিয়ে হত্যার দৃশ্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে বিপ্লব।

এর পর কাউকে কিছু না বলার শপথ করায় সবাইকে। পাশের পুকুরে কুড়াল ফেলে সবাই চলে যায়। ঘটনার কিছুক্ষণ পর বিপ্লব বাড়িতে ফোন করে জানায়, তার বাবাকে কারা যেন কুপিয়েছে। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আজিজ।

গতকাল বুধবার দুপুরে ময়মনসিংহ র‍্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সিধলা ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে ছেলের পরিকল্পনায় খুন হন ব্যবসায়ী আজিজ। তাঁর বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার গোহালাকান্দা ইউনিয়নের মানিকদির গ্রামে। শ্যামগঞ্জ বাজারে পোলট্রি খাদ্যর ব্যবসা করতেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ব্যবসার দেখাশোনা করত একমাত্র ছেলে তরিকুল ইসলাম বিপ্লব।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বকুল বেগম বাদী হয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর পূর্বধলা থানায় একটি মামলা করেন। অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে করা মামলার এক নম্বর সাক্ষী বিপ্লব। হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ শুরু করে র‌্যাব-১৪ ময়মনসিংহের একটি দল। গত মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে গৌরীপুর থেকে বিজয় (১৯), রানা (১৮) ও আজহার মিয়াকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‍্যাবের কোম্পানি অধিনায়ক আখের মুহম্মদ জয় ও স্কোয়াড কমান্ডার আনোয়ার হোসেন। এ ছাড়া বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করে পূর্বধলা থানার পুলিশ।র‍্যাবের কোম্পানি অধিনায়ক আখের মুহম্মদ জয় বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, বাবাকে হত্যায় অভিযুক্ত ছেলেকে বুধবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে