বাড়ি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডাক্তার পরামর্শ বাংলাদেশে স্কুল গুলোতে বাড়ছে শিশুদের ‘হ্যান্ড-ফুট-মাউথ’ ডিজিজ

বাংলাদেশে স্কুল গুলোতে বাড়ছে শিশুদের ‘হ্যান্ড-ফুট-মাউথ’ ডিজিজ

Children s hand foot mouth disease is increasing in schools

দেশে বেড়েছে হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (এইচএফএম)।স্কুলে যাওয়া শিশুদের উচ্ছ্বলতায় ভাটা ফেলেছে হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস। রাজধানীর অনেক স্কুলেই শিশুদের মাঝে দেখা যাচ্ছে এ রোগটি। হাত, পা ও মুখ আক্রান্ত হয় বলেই রোগটির নাম হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ।

জ্বর দিয়ে রোগের শুরু, পর্যায়ক্রমে যা একশ দুই ডিগ্রি পর্যন্ত যায়। এরপরই মুখে দেখা দেবে ছোট ছোট সাদা আকৃতির ফুসকুড়ি। হাত পা কিংবা মুখে ও ফোস্কার মতো র‍্যাশ ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক। যা দেখতে অনেকটাই চিকেন পক্সের মতো। ঠোঁটের আশেপাশেও দেখা দেয় র‍্যাশ।চিকিৎসকরা বলছেন, ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই আপনাআপনিই ভালো হয়ে যায় হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিস।

শিশুদের এ রোগটিকে অনেকেই চিকেন পক্সের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। এতে সাধারণত মুখ, পায়ের পাতা, হাঁটুর উপরে ও হাতের তালুতে ফোস্কার মতো র‍্যাশ হয়।তবে রোগটি অতিমাত্রায় সংক্রামক। তাই আক্রান্ত শিশুকে অন্য শিশুদের থেকে আলাদা রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এইচএমএফ’র অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা কোনো ওষুধ নেই জানিয়ে ডা. খন্দকার কামরুজ্জামান বলেন, আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। এটি একটি সেলফ রেমিডিং ডিজিজ তাই ওষুধপত্রের দরকার হয় না। শুধুমাত্র সচেতনতা, হাইজিন, বাচ্চাদের যাতে পানিশূণ্যতা যেনো না হয়, খাওয়া-দাওয়াটা ঠিকমতো মেইনটেইন করতে হবে। ৬-৭ দিন পরে এটা নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়।

বাংলাদেশে এ রোগ ব্যাপকভাবে কখনোই হয়নি। সাধারণত প্রতি বছর বর্ষায় বাড়ে এর প্রকোপ। রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) রোগটি নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়। দেখা হয় সাধারণ রোগ হিসেবেই।

সাধারণত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এ রোগ হয়। বর্ষা মৌসুমেই এর প্রকোপ বাড়ে বলে জানান চিকিৎসকেরা। পাঁচ বছর আগে এর বেশি বিস্তার ঘটেছিল বলে স্মরণ করতে পারেন অধ্যাপক সহিদুল্লা। এরপর এ বছর বেশি হার ঘটছে, বিশেষ করে রাজধানীতে। তবে দেশের অন্য স্থানেও এটি ছড়ানোর আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন তিনি।

চিকিৎসকেরা বলছেন, হ্যান্ড–ফুট–মাউথ ছোঁয়াচে অসুখ। কোনো শিশু এতে আক্রান্ত হলে তাকে অবশ্যই স্কুলে দেওয়া যাবে না। পরিবারের মধ্যেও একধরনের আইসোলেশনে তাকে রাখতে হবে।

শিশুবিশেষজ্ঞ আবিদ হোসেন মোল্লা বলছিলেন, এই ছোঁয়াচে রোগ সাধারণত হাঁচি–কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়া শরীরে হওয়া ফুসকুড়িগুলোর ফেটে গেলে সেখানকার রস থেকে ছড়াতে পারে। বাড়ির অন্য শিশুরা যাতে আক্রান্ত না হতে পারে, সে জন্য অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, ভাইরাসবাহিত এ অসুখের কোনো টিকা নেই। আসলে এর কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধও নেই। অধ্যাপক সহিদুল্লা বলেন, হ্যান্ড–ফুট–মাউথে আক্রান্তদের জ্বর হলে সাধারণ জ্বরের ওষুধ দিতে হবে। আর অ্যান্টিহিস্টামিন দিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।

সাধারণত অসুখবিসুখ হলে শিশুরা কম খাবার–দাবার গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রেও খাবারের জন্য জোর–জবরদস্তির কোনো দরকার নেই বলেই মনে করেন আবিদ হোসেন মোল্লা। তাঁর কথা, শিশু কিছু কম খেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু তাকে যথেষ্ট পানি খাওয়াতে হবে। একটু বড় শিশুকে দুধ বা আইসক্রিম দেওয়া যেতে পারে। মুখের ভেতরে ফুসকুড়ি ওঠায় কম খেতেই পারে। কিন্তু বারবার পানি খাওয়াতে হবে। একটি বিষয় সতর্কভাবে দেখতে হবে, শিশুর প্রস্রাব যেন স্বাভাবিক হয়।

ভিটামিন সি বেশি করে গ্রহণ করলে এ অসুখ দ্রুত সারে এর কোনো প্রমাণও নেই বলে জানান ডা. আবিদ। তিনি এ অসুখ হলে শিশুকে নিয়মিত গোসল করানোর পরামর্শ দেন। তাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুতে হবে। আর আবিদের পরামর্শ হলো, করোনাভাইরাসের জন্য যেসব নিয়ম মেনে চলা হয়, এ ক্ষেত্রেও তার অনেকটা করতে হবে। সাবান দিয়ে ক্ষতস্থানগুলোও পরিষ্কার করা যেতে পারে।

আইইডিসিআর এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, সীমিত আকারে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এ সংক্রমণ প্রতিবছরই হচ্ছে। তবে যদি কোথাও এলাকাভিত্তিক খুব বেশি সংক্রমণ দেখা যায় তখনও কিন্তু এটা বাচ্চাদের মধ্যে সীমিত থাকবে না।

এ রকম ভাইরাসগুলো, যেগুলো পাবলিক হেলথে অনেক বেশি সমস্যা তৈরি করে না সেগুলোর জন্য টিকার চেষ্টা আমরা নিজেরাও করি না। যেহেতু এটা এমনিতেই সেরে যায় তাই অ্যান্টি ভাইরাল নিয়েও এতটা ভাবা হয় না।

কোনো স্কুলে শিশুদের মধ্যে একযোগে এ রোগ দেখা দিলে অবশ্যই স্কুল কয়েকদিন বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর। ডা. এ এস এম আলমগীর বললেন, আক্রান্তদের থেকে অন্তত ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এই দূরত্ব না মানলে আপনিও আক্রান্ত হতে পারেন।

বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ

Exit mobile version