বাড়ি অপরাধ ছাত্রীকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

ছাত্রীকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

0
ছাত্রীকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

রাজধানীর তুরাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিদেশি পিস্তলসহ চারজন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগ। গতকাল শনিবার রাজধানী ও এর আশপাশের জেলা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘটনার দিন বাস থেকে নামার পর বিকাশের দোকানে যাওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীকে পুলিশ পরিচয়ে অনুসরণ করতে থাকে অভিযুক্ত ব্যক্তি। এ সময় তার সঙ্গে পুলিশের আইডি কার্ড, ওয়াকিটকি এবং পুলিশ লেখা মোটরসাইকেল ব্যবহারের সত্যতা মিলেছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজসহ একাধিক তথ্য সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ঘটনার সময় ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নেমে রিকশায় বাসায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে রিকশার গতিরোধ করেন এক মোটরসাইকেল আরোহী। মোটরসাইকেলে পুলিশ লেখা স্টিকার ছিল, নিজেকেও পুলিশের লোক হিসেবে পরিচয় দেন। এরপর ছাত্রীর ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকেন, তার ব্যাগে থাকা একটি টেডি-বেয়ারের মধ্যে (জন্মদিনের উপহার) মাদক এবং অবৈধ জিনিসপত্র রয়েছে। তাকে থানায় যেতে হবে।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওই ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুত চালিয়ে চলে যায় ওই ব্যক্তি। এরপর তুরাগ থানার দিয়াবাড়ীর নির্জন এলাকায় নিয়ে ছুরি ঠেকিয়ে ভয় দেখিয়ে ওই ছাত্রীর গলার স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল ছিনিয়ে নেন। এ সময় তাকে শারীরিকভাবে নিপীড়ন করা হয়।প্রথম দিকে শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর সত্যতা নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন দেখা দিলেও তদন্তে শিক্ষার্থীর অভিযোগের পুরোপুরি সত্যতা পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

সূত্র জানায়, এ সময় দিয়াবাড়ী ঘটনাস্থলে স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই পথে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। তরুণীর সঙ্গে এমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে তিনি এগিয়ে যান। এ সময় দ্রুত তরুণীর ব্যাগ ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালান অপহরণকারী। এরপর ওই ব্যক্তির সহায়তায় তুরাগ থানায় জানান। তুরাগ থানায় মামলা করেন ওই ছাত্রী।

তদন্ত সূত্র জানায়, ঘটনার দিন জন্মদিন উপলক্ষে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উপহার দিয়েছেন বন্ধুরা। এর মধ্যে শাড়ি, চকলেট, টেডি-বেয়ার (পুতুল)সহ আরও অনেক উপহার ছিল। তার ব্যাগে থাকা সেই প্যাকেট দেখিয়ে পুলিশ পরিচয়ধারী ব্যক্তি জানতে চাইলে হতচকিত হয়ে যান শিক্ষার্থী।ব্যাগ খোলারও সুযোগ দেওয়া হয়নি তাকে।

এর আগে এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী তুরাগ থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলাটি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের পাশাপাশি তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। আমরা ওই ব্যক্তিকে খুঁজছি। এরইমধ্যে আমরা ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। মোটরসাইকেলের নম্বর শনাক্তের চেষ্টা চলছে। শিগগির এর রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হবে।

ঐ ছাত্রি জানান, ওই ব্যক্তি বলছিলেন- ‘আরেকটু দূরেই থানা। সিসিটিভি ফুটেজে মোটরসাইকেলের অস্পষ্ট নম্বর দেখা গেছে। ওই ব্যক্তির বয়স ৩০-৪০-এর মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ পরিচয়ে যে কৌশলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে কল্যাণপুরের মতো ব্যস্ত এলাকায় অপহরণ করা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন।

আজ রোববার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্রেপ্তারের তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন—শাকিল আহম্মেদ রুবেল, আকাশ শেখ, দেলোয়ার হোসেন ও হাবিবুর রহমান।অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, একটি ওয়্যারলেস সেট, দুটি পুলিশ স্টিকারযুক্ত মোটর সাইকেল ও ছিনতাই করা ছয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

হারুন অর রশীদ জানান, গ্রেপ্তার শাকিল আহম্মেদ রুবেল ছিনতাই করা মোটরসাইকেলে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে ওয়্যারলেস সেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীদের টার্গেট করতেন। একাকি পেয়ে কাছে অবৈধ মাদক আছে বলে তাকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নির্জন কোথাও নিয়ে যেতেন। পরে তার কাছে থাকা দামী জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিতেন এবং অশালীন আচরণ করতেন। এটা তার পেশা ও নেশা ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ পর্যন্ত শাকিল আহম্মেদ রুবেল দেড় হাজারেরও বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ও ৫০ এর বেশি অশালীন আচরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ তথ্য তিনিই ডিবির কাছে স্বীকার করেছেন। তার নামে ছয়টি দস্যুতার মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার হওয়া বাকি তিনজন তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ডিএমপির আদাবর থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা করা হয়। তাদের রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে