বাড়ি রাজনীতি আওয়ামী লীগ ফরিদপুরে বিএনপির সমাবেশে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ-শ্রমিক লীগের হামলা

ফরিদপুরে বিএনপির সমাবেশে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ-শ্রমিক লীগের হামলা

1
ফরিদপুরে বিএনপির সমাবেশে পুলিশ ও ছাত্রলীগ যুবলীগ শ্রমিক লীগের হামলা

ফরিদপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রথমে পুলিশ ও পরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটার মধ্যে শহরের স্বাধীনতা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামসহ অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশে প্রথমে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া। পরে বক্তব্য দিতে শুরু করেন আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী। এ সময় মঞ্চে ছিলেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ওরফে বাবুল।

মোদাররেছ আলীর বক্তব্য চলাকালে বিকেল চারটার দিকে শহরের মুজিব সড়ক হয়ে জাস্টিস ইব্রাহিম সড়ক দিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেল নিয়ে লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক ও লোহার পাইপ হাতে সমাবেশস্থলে হামলা চালান।

এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জেলা আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা প্রথমে আইনজীবী ভবনের উদ্দেশ্যে ইট-পাটকেল ছোড়েন। একপর্যায়ে তাঁরা ওই ভবনে ঢুকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পেটান বলে বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশের জন্য শহরের স্বাধীনতা চত্বরে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা জড়ো হতে থাকেন। কিন্তু পুলিশ স্বাধীনতা চত্বরে তাঁদের সমবেত হতে বাধা দেয়।

এ সময় কয়েকজনকে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করলে পুলিশের কাছ থেকে তাঁদের ছিনিয়ে নেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে বিএনপির কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরে বিএনপির নেতারা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে সমাবেশ সীমিত করার উদ্যোগ নেন।

ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের হামলার পর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক এবং পৌর মেয়র অমিতাভ বোস ঘটনাস্থলে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। হামলায় কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী, সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রব্বানীসহ বেশ কয়েক নেতা আহত হয়েছেন। তাঁদের রেজোয়ান মোল্লা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথমে জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বেলা দেড়টার দিকে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ও পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানের সঙ্গে কথা বলে মিছিল না করে সমাবেশ এবং জায়গা পরিবর্তন করে স্বাধীনতা চত্বর করা হয়। সেখানেও আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা করে পুলিশের সামনে নির্বিচারে বিএনপির নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা করে আহত করে।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া বলেন, হামলায় বিএনপির নেতারা ছাড়াও আল আমিন, রিতুসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাঁদের শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত হয়ে নেতারা যখন আইনজীবী সমিতির ভবনে অবস্থান করছিলেন, তখন সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক নায়েবা ইউসুফসহ নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় ছিলেন। স্বাধীনতা চত্বরে বিএনপির লোকজন আইনজীবী সমিতির ভবনে অবস্থান নিয়ে তাঁদের নেতা-কর্মীদের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়ে মারেন। এতে তাঁদের আট কর্মী আহত হয়েছেন। খবর শুনে তিনি স্বাধীনতা চত্বরে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মানিক মজুমদার বলেন, আইনজীবী সমিতি সবার জন্য উন্মুক্ত। এটি একটি নিরপেক্ষ জায়গা। সমিতির ভবনে ঢুকে হামলা ও মারপিটের ঘটনা নজিরবিহীন। এর আগে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল বলেন, বিএনপি মিছিল করতে চাইলে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। সমাবেশ করতে চাইলে ময়েজ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় এলাকায় সমাবেশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তারা সেটা না মেনে স্বাধীনতা চত্বরে সমাবেশ শুরু করে। এটি দেখে আওয়ামী লীগও স্বাধীনতা চত্বরে সমাবেশ করতে আসে।

এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।একটি রাজনৈতিক দল কোথাও সমাবেশ করলে সেখানে অন্য কেউ সমাবেশ করতে পারেন কি না, জানতে চাইলে ওসি এম এ জলিল বলেন, সরকারি দলের নেতা-কর্মীদেরও বাধা দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকায় বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। অন্যথায় আরও বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারত।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপির নেতারা চরভদ্রাসন, নগরকান্দা থেকে লোক এনে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। আমরা তা হতে দিইনি। বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এটি গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশে সবার রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার আছে।’

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে

More News