বাড়ি অর্থ ও বাণিজ্য সরকারি দপ্তরের আয় ও তহবিলের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে না

সরকারি দপ্তরের আয় ও তহবিলের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে না

0
আইএমএফে

আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও সব সরকারি দপ্তরের আয় ও তহবিলের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে না।টাকা গুলো জমা দেয়ার বদলে দপ্তরগুলো এ টাকা নিজেদের কাছে ধরে রাখছে এবং বিভিন্ন ব্যাংকে আমানত রেখে সুদ ভোগ করছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, এমনটি হচ্ছে অর্থ ব্যবস্থাপনায় পদ্ধতিগত দুর্বলতা থাকার কারণে। এ দুর্বলতা কাটানোর পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার একক হিসাব বা ট্রেজারি সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট (টিএসএ) বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত। হিসাব নম্বর ‘০০১’। সংবিধানের ৮৪ (১) অনুচ্ছেদ এবং সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৯–এর ধারা ৭ (১) অনুযায়ী, এ হিসাবেই সরকারি দপ্তরের আয় ও তহবিল জমা হওয়ার কথা। অনেকেই তা জমা না দেওয়ায় অর্থ বিভাগ পরিপত্র জারি করে বলেছে তা ‘আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী’ কাজ।

এ নিয়ে আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একবার আমার সামনেই বলেছিলেন, সব টাকা নিয়ে নেবেন তিনি। যদিও পারেননি। একটা ভালো উপায় হতে পারে এ রকম যেকোনো দপ্তরের কাছে ১০ কোটি টাকা আছে। সে দপ্তর ৩ কোটি নিজের জিম্মায় রেখে বাকি ৭ কোটি টিএসএতে দিয়ে দিল। কঠোর আইনি পদক্ষেপ ছাড়া তা অবশ্য কেউ মানবে না।’

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, সরকারি অনেক দপ্তর চায়, যত দিন সম্ভব টাকা ধরে রাখা। ব্যাংকের সঙ্গে আঁতাত করে তারা মূলত বাড়তি সুবিধা ভোগ করছে। চর্চাটি ভালো নয়।

আইএমএফের একটি মিশন গত ১ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ঢাকা সফর করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে বলেছে, অর্থ ব্যবস্থাপনায় পদ্ধতিগত দুর্বলতা রয়েছে। এর দুর্বলতা কাটাতে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পসহ সব ব্যাংক হিসাবের ওপর জরিপ করা দরকার। চিহ্নিত করা দরকার হিসাবগুলোর ধরন এবং সংশোধন করা দরকার ট্রেজারি বিধি।

সংস্থাটি জানায়, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের তিন লাখ ৯০ হাজার ৭৫০টি ব্যাংক হিসাবের টাকাই টিএসএর বাইরে। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ব্যাংক হিসাবগুলোতে রয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা।

ভারত, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, গ্রিস, আলবেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, মিসর, ফ্রান্স, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, হাঙ্গেরি, যুক্তরাজ্য ও সুইডেনের টিএসএর সঙ্গে তুলনা করে আইএমএফ দেখিয়েছে, দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বাংলাদেশের।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিএসএর বাইরে এত বেশি পরিমাণ টাকা থেকে যাওয়ায় সরকার তার নগদ টাকার প্রবাহ সম্পর্কে আন্দাজ করতে পারছে না। অনেক খরচই মেটাতে হচ্ছে উচ্চ সুদে নেওয়া ঋণের টাকায়। আর সুদের টাকা জোগাড় করতেই জনগণকে চাপে রাখতে হচ্ছে।

অর্থ বিভাগ সর্বশেষ গত জানুয়ারি একটি এবং আগের বছরের মে মাসে আরেকটি পরিপত্র জারি করলেও কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। আইএমএফের বৈঠকের পর অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠক হয়।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সুদ ব্যয় বাবদ বরাদ্দ ৭৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের একটি দল হিসাব করে দেখেছে, এর মধ্যে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকাই সরকারের বাড়তি সুদ ব্যয়।

একশ্রেণির সরকারি দপ্তর তার তহবিলের টাকা নিজের জিম্মায় ধরে রাখার কথা নয়, কিন্তু ধরে রাখে। আবার খরচ করার কথা নয়, কিন্তু খরচ করে। টিএসএ ব্যবস্থা শক্তিশালী হলে এ অবস্থা দূর হয়ে যাবে বলে অর্থ বিভাগ মনে করে।

অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার তার নগদ টাকার তথ্য জানতে পারে এই টিএসএ থেকে। সরকার যে বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নেয়, তারও খুব দরকার পড়বে না টিএসএ স্বচ্ছ ও শক্তিশালী হলে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১১ আগস্ট টিএসএতে ছিল ৫ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ টাকার বেশির ভাগই ঋণের এবং এর বিনিময়ে সুদ দিতে হবে। অব্যবস্থাপনাটা এত প্রকট যে মাঝেমধ্যে এমন অবস্থাও দাঁড়ায়, যারা টাকা জমা দিচ্ছে না, সরকার ঋণ করে তাদের উল্টো টাকা দেয়।

বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ