দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট) আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তাঁর চাচা পর্যটনকেন্দ্র স্বপ্নপুরীর স্বত্বাধিকারী, সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন সাঁওতালরা।
আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা স্মারকলিপি দেন। এর আগে জেলা প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা।
স্মারকলিপিতে সাঁওতালরা শিবলী সাদিক ও তাঁর চাচা দেলোয়ার হোসেনকে ‘ভূমিদস্যু’ ও ‘ভূমি জবরদখলকারী’ উল্লেখ করে বলেন, সংসদ সদস্যের অনুসারী মনোয়ার, আমিনুল, জাহাঙ্গীর, সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী সামসুজ্জামান ও স্বপ্নপুরীর ব্যবস্থাপক মুক্তার আলী জোরপূর্বক এসব জমি দখল করেন। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করায় সাঁওতালদের প্রাণনাশের হুমকিও দেন সংসদ সদস্যের অনুসারীরা।
স্মারকলিপিতে আরও জানানো হয়েছে, বিভিন্ন দাগ খতিয়ানে গণেশ হেমরম নামের এক ব্যক্তির ২০ দশমিক ৫৬ একর জমি দখল করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ শতক কবরস্থান, ২৮ শতকে কালীমন্দির ও পূজাপাঠের স্থান এবং ২ একর জমিতে পুকুর তৈরি করে দখল করা হয়েছে। খুকুমণি হেমরম নামের এক নারীর ২ দশমিক ৩২ একর জমি ও তাঁর বাড়িঘর দখল করা হয়েছে।
খালিপপুর মৌজায় লুইস হাঁসদার ১ দশমিক ৬১ একর জমি দখল করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে। এসব জমি অধিগ্রহণের টাকা সংসদ সদস্যের অনুসারীরা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া রবিন মার্ডির ২১ দশমিক ৮ একর, আলতাব আলীর ১ দশমিক ৫০ একর জমি দখল করেছেন, যার অধিকাংশ জমি স্বপ্নপুরীর সীমানার মধ্যে রয়েছে। এসব জমি নিয়ে আদালতে একাধিক মামলাও চলমান।
মানববন্ধনে হেমরম রবিন মার্ডি বলেন, ‘জমিগুলো নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। আদালতের রায় না পেয়েই সংসদ সদস্যের লোকজন জমিগুলো এভাবে দখল নিয়ে স্থাপনা তৈরি করেছেন। জমি হারিয়ে আমরা আজ পথে বসেছি। প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছি না। কিছু বলতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন তাঁরা।’
তবে সাঁওতালদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক। তিনি বলেন, ‘স্বপ্নপুরী কোনো লিমিটেড কোম্পানি নয়। এর একক মালিকানা আমার চাচা দেলোয়ার হোসেনের। অথচ বিভিন্ন সময়ে আমাকে জড়িয়ে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এসব কথা ছড়ানো হচ্ছে। তিন পুরুষ ধরে এলাকার সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।
এলাকায় স্কুল-কলেজ-মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করেছি। যাঁরা অভিযোগ করছেন, বিভিন্ন সময় তাঁরা স্বপ্নপুরীতে চাকরিও করেছেন। নিজ দলের কতিপয় প্রভাবশালী নেতার উসকানিতে যাঁরা এ ধরনের অভিযোগ করছেন, তাঁদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই। শিগগিরই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার কথা জানান তিনি।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন। এ সময় জেলা বাসদের নেতারা মানববন্ধনে সংহতি জানান। এর আগে গত ৩০ জুলাই আদিবাসীদের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি দখলের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর ছয় পরিবারের সদস্যরা। দুই দিন পর সাঁওতালদের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের অনুসারীরা। এবার আরও সাতটি পরিবার সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ আনল।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, বর্তমান সরকার অঙ্গীকার করেছিলেন, সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জমিজমা নিয়ে স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করা হবে। একটা কমিশন গঠন করতে এক যুগ সময় লাগার কথা নয়।
আজ প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে তাঁরা অস্তিত্বসংকটে পড়েছেন। নিঃস্ব হয়ে অনেকে দেশত্যাগও করেছেন। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ এলাকায় বসবাসকারী সাঁওতালরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের জমি দখলের অভিযোগ করে আসছেন। কিন্তু প্রশাসন বিষয়টি আমলেই নেয় না। দ্রুত এসব বিষয়ের সমাধান না হলে আদিবাসীরা বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ